বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল সক্রিয়। তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অন্যান্য দলের তুলনায় একটি ব্যালান্সড, স্থিতিশীল এবং নীতিগতভাবে দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে সমালোচনা স্বাভাবিক, কিন্তু এই দলটি বহু দিক থেকে অনন্য এবং প্রশংসনীয়।
১. গণতন্ত্র ও ইসলামী রাজনীতিতে অটল অবস্থান
অন্যান্য কিছু ইসলামী দল প্রায়শই গণতন্ত্রের জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে “অলিক শরীয়া” বা স্বপ্নের ইসলামী আইনের বাস্তবায়নে মনোযোগ দেন। অন্যদিকে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকে ইসলামী রাজনীতির মূল দর্শন অটল রেখেছে।
দলের কেন্দ্রীয় মুরব্বি ও নীতিনির্ধারকরা এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছেন। এর ফলে দলটি ইসলামী রাজনীতিকে বাস্তবতার সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে পেরেছে। তারা রাজনৈতিক কৌশল ও নীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়েছে, যা তাদেরকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
২. ইতিহাস ও আত্মত্যাগের পরিচয়
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অতীত ইতিহাস দলটিকে বিশেষভাবে আলাদা করে তোলে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত, এবং এর আগে ও পরে, দেশ, জাতি, ধর্ম ও স্বাধীনতার প্রশ্নে তারা সচেতন ভূমিকা পালন করেছে।
দলের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ও নৈতিকতার প্রমাণ হিসেবে সাগরসম রক্তের নাজরানা দিয়েছেন—যা স্বাধীনতা, ঈমান ও ইসলাহের তরে উৎসর্গ করা হয়েছে। এই ইতিহাস তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের রাজনৈতিক অবস্থানকে দৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করিয়েছে।
এটি প্রমাণ করে যে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম কখনোই ক্ষমতার জন্য সংগ্রামে ঝুঁকেনি, বরং তারা স্ব-স্বভাবেই দায়িত্বশীল, নৈতিক ও দেশপ্রেমিক ছিল।
৩. ক্ষমতা নয়, নীতি ও জনআস্থাকে অগ্রাধিকার
দলটি কখনোই ক্ষমতার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফাঁকফোকর খুঁজে বের করার খেলায় লিপ্ত হয়নি। বরং তারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় ইসলাম, নীতি, আদর্শ ও জনআস্থাকেই প্রধান্য দিয়েছে।
এই নীতি তাদেরকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটি নৈতিক ও বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান দিয়েছে। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, তারা একটি ন্যায্য ও ধারাবাহিক রাজনৈতিক দল।
৪. ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সুশৃঙ্খল সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া
দলটি প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভ থেকে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও তামাদ্দুনের প্রতি অটল থেকেছে। কেন্দ্রীয় মুরব্বিদের সুচিন্তিত সিদ্ধান্তগুলোকে তৃণমূলের দায়িত্বশীল কর্মীরা বিনা প্রশ্নে মেনে চলে।
ফলস্বরূপ, দলের শতবর্ষের ইতিহাসে বড় কোনো ভুল বা রাজনৈতিক মিসস্টেপের দৃষ্টান্ত নেই। এই সুশৃঙ্খল সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া দলটিকে ধারাবাহিকভাবে স্থিতিশীল ও সাফল্যমণ্ডিত করেছে।
৫. সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এটি সামাজিক ও নৈতিক আদর্শের প্রতীক। দলটি ইসলামী মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং দেশের কল্যাণকে কেন্দ্র করে কাজ করছে।
এ কারণে সাধারণ মানুষ এবং সমালোচকরা তাদেরকে একটি স্থিতিশীল, দায়িত্বশীল ও ব্যালান্সড রাজনৈতিক দল হিসেবে মূল্যায়ন করে।
৬. সমালোচনা ও রাজনৈতিক স্বাভাবিকতা
যেমন যেকোনো রাজনৈতিক দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ওপরও সমালোচনা থাকবে। তবে অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের তুলনায়, এই দলটির সমালোচনা সাধারণত নৈতিকতা, নীতিগত সিদ্ধান্ত বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কিত হয়, যা রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক অংশ।
তাদের ব্যালান্সড অবস্থানই নিশ্চিত করেছে যে, সমালোচনা দলকে বিভক্ত বা দুর্বল করতে পারেনি। বরং এটি তাদের নীতি ও আদর্শের প্রতি স্থিরতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
সংক্ষেপে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি নৈতিক, ঐতিহ্যগত ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা ক্ষমতা নয়, নীতি, আদর্শ, জনআস্থা ও দেশের কল্যাণকে প্রধান্য দিয়ে কাজ করছে।
অন্য ইসলামী দলগুলোর তুলনায় এটি একটি ব্যালান্সড ও বিশ্বস্ত রাজনৈতিক শক্তি, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ধারাবাহিকভাবে অবদান রাখছে।
