জমিয়তকে বড় ছেলে উপাধিটা দিয়েছে আমাদের মাসরুর সাহেব! একেবারে পারফেক্ট উপাধি ! এর থেকে পারফেক্ট কোন উপাধি জমিয়তের কপালে আগে কোনোদিন জুটেনি! ভবিষ্যতে জুটবে বলেও মনে হয় না! সত্যিই! বাংলাদেশে ইসলামপন্থার রাজনীতির একমাত্র দূর্ভাগা বড় ছেলে জমিয়তই! তাই বাড়ির বড় ছেলের মতোই তাকে দুঃখ কষ্টের ভাগ নিয়ে জীবন চালাতে হয়। হাহা।
তো বড় ছেলে জমিয়ত!
বলছি, সব দোষ কাঁধে নিতে প্রস্তুত হও! দোষ কাঁধে তোমাকেই নিতে হবে! কারণ তুমি বড় ছেলে! এদেশে ইসলাম পন্থার স্বপ্ন ও কল্পনার ঐক্য না হওয়ার দোষ তোমাকেই নিতে হবে। এ দোষ তোমারই! কেন তুমি মওদুদিবাদের মত পবিত্র সুঘ্রাণ গায়ে না মাখার অযুহাতে ঐক্য বিনষ্টকারী হতে চাচ্ছো! দোষ তো তোমারই!
তুমি কি দেখনা! তোমার সকল ভাইয়েরা কী সুন্দর সারাজীবন মওদুদিবাদকে গালি দিয়ে যোজন যোজন দূরত্ব সৃষ্টি করে এখন ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কত সুন্দর ঐক্য করতে প্রস্তুত হয়ে গেছে! তুমি কেন এটা বুঝছ না! ঐক্যের স্বার্থে এতটুকু ছাড় দিতে হয় এটা শিখোনি! ছিহ! কী শিখলা জীবনে!
বড় ছেলে যেমন পরিবারের সব দুঃখ কষ্টে সামনে থাকে এ দেশের ইসলামপন্থার স্বার্থে তোমাকে সামনে থাকতে হয়েছে! তোমাকে জেল খাটতে হয়েছে! বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে জেলখানা আর তুমি ছিলে সমার্থক শব্দ! তুমি কত খারাপ! অথচ দেখ তোমার ছোট ভাই এ সময় কত ভালো ভালো কাজ করেছে! তার তালইকে সাথে নিয়ে সরকারের মাঝে দাওয়াতি কাজ চালিয়েছে! শেখ মুজিব যে ওলী আওলিয়ার বংশ পরম্পরায় এদেশে এসেছে এবং আওয়ামী লীগ যে খাঁটি ওলীর হাতে গড়ে ওঠা দল সেটা তোমার ছোটভাইই কিন্তু প্রতিষ্ঠা করেছে! এ তো তুমি বুঝবা না! খালি সরকারের সমালোচনা করবা, মোদিবিরোধী আন্দোলনে থাকবা! তাহলে জেল তুমি খাটবা না তো কে খাটবে? আদা খাবা তুমি ঝাল বুঝবাও তুমি! হুহ!
তুমি সারাজীবন লীগের বিরোধিতা কে দেশপ্রেম ভেবেছ! কিন্তু তোমার ছোটভাই ভেবেছে লীগও মানুষ! তাদেরও আছে মুরিদ হওয়ার অধিকার! তাদেরও সংশোধন দরকার আছে! সেজন্য তালই দিয়া, আর মালোই দিয়া লীগের ইসলাহ চালিয়েছে! (মালোইয়ের পরিচয় চাহিয়া লজ্জা দেয়া নিষেধ) বিনিময়ে শান্তিতে নোবেল না দিলেও লীগ দিয়েছে বছরে দুইটি ওরশ ও পল্টন সহ দেশব্যাপী মিছিল মিটিংয়ের অধিকারে! যে অধিকারে তোমার ছোট ভাই ফুলেছে ফেপেছে হয়েছে মস্ত বড় হনু! ঠিক ক্রুশিয়াল মোমেন্টে নিয়েছে পল্টি দিয়েছে ধাক্কা। পল্টি বল বা ইউটার্ন তোমার ছোটভাই বরাবরই সেরা খেলোয়াড়! মোদিবিরোধী আন্দোলনে গণগ্রেফতারে পাশে না থেকে তোমার বিরুদ্ধে তোমার অন্যসব ভাইদের বিরুদ্ধে লিখেছে লম্বা লম্বা কলাম। আবার নির্বাচন কেন্দ্রিক নাকফাটার পরবর্তী সময়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনেও পল্টি নিসে সারাজীবনের সখী ওলী-আউলিয়ার হাতে গড়া দল থেকে। রেখেছে তোমারও ইজ্জত, হয়েছে দেশের স্টেকহোল্ডার। এইটাতে কিন্তু তোমার বাহবাহ দেওয়া উচিত। শেখা উচিত। বাবার ছোটছেলেরা যে সবসময় বুদ্ধিমান হয় তোমরা এটা কবে বুঝবা!
এখন দেখো!
তোমরা তো ঘোড়ার ডিম নিজেরাই এক থাকতে পারো না। যে হস্তিগুলো তোমার উদরে জন্ম নিয়েছিল বেশি না একসাথে হাঁটলেও তোমাদের ছোঁয়ার সাধ্য ছিল কার? কিন্তু তোমরা তো আবার একে অপরের গন্ধ নিতে পারো না। কথা ছিল এক থাকার, হয়েছ বিভক্ত! একসাথে থাকতে যে দম লাগে সেটা কেন তোমাদের থাকে না! কিছু হলেই আলাদা হয়ে দল গঠন, কিছু হলেই মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার! এমন কেন তোমরা?
যাহোক!
তোমাদের শুধু দোষ কাঁধে নিয়েই নিস্তার নাই! তোমাদের কপালে আছে দুর্ভোগও! কারণ তোমাদের কোলের সন্তান আল হাবিবের মতো মস্তবড় তেলবাজ! যে মুখ খুললেই বের হয় তেল, যার উদরের তেল আরব বিশ্বের তেলের থেকেও এক কাগ বেশি! এমনকি ইরানের থেকে হাফ কাগ বেশি । তোমরা এই তেলের খনিটারে রপ্তানিতে কাজে না লাগিয়ে বারবার মর্দনে কাজে লাগাও! সেজন্যই তোমাদের কপালে দুর্ভোগ জুটবে।
তোমাদের জন্য আমার মায়া হয় বুঝছ!
হাজার হাজার কর্মী বানিয়েছো! একটা সগির চৌধুরী একটা কাবির চৌধুরী বানাতে পারোনি! পারোনি একজন হাসিব আর রহমান বানাতে! যারা চটকাইয়া চটকাইয়া গালাইতে পারে! পারে মূলামার্কা ন্যারেটিভ তৈরী কইরা সব দোষ তোমগোরে কাঁন্ধে দিতে! আগে তাও ওলিউল্লাহ আরমানদের মতো কিছু মানুষ ছিল! ইট মারলে পাটকেল ছুড়ে দিত! এখন তো তারা বয়োজ্যেষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন। আবার তোমরাও দূরে সরিয়ে রেখেছ! ফলে তোমরা এখন পইড়া থাকো ঐ এক বুলি নিইয়া! মওদুদির সাথে ঐক্য নাই! আরে কারো কপালে কি লেখা থাকে সে মওদুদ না মারদুদ! তোমরা এই বয়ানের বাইরে যাইতে পারো না কেন?
তোমরা কেন বলতে পারো না পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে নির্বাচনের মাঠ হিসেবে তোমাদেরই লাভ! কিন্তু তারপরও এমুহূর্তে পিআর পদ্ধতি চাও না! এটা তোমাদের রাজনৈতিক চয়েস! এটা তোমাদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া। এই বোঝাপড়াকে যে কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারে তবে এটাকে ঝুটাখোর বলার মতো দুঃসাহস দেখানোর অধিকার কারো নাই।
তোমাদের বলা উচিত তোমাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা কী! কোন দুঃখে কীসের স্বার্থে তোমরা রাজনীতিতে এসেছ! এটা যদি বলতে না পারো তবে রাজনীতি থেকে হাত মুখ ধুয়ে দুই ওরসের বক্তা হওয়ার সিরিয়াল দিতে পারো।
এই পাক ভারত উপমহাদেশে দ্বীনের স্বার্থে দেশের স্বার্থে যে কাফেলা শতবর্ষ ধরে কাজ করে যাচ্ছে তার নাম জমিয়ত! আমার বই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কওমী মাদ্রাসা ও আলেম সমাজ এ লিখেছিলাম, হেফাজতে পারফর্ম করা জমিয়ত নেতারা কেন জমিয়তে পারফর্ম করতে পারে না! সেখানে বলেছিলাম জমিয়ত শুধু এ দেশের জন্য না এ পাক ভারত উপমহাদেশের অশুভ শক্তির জন্য হুমকি। সেজন্য এরা একাকী কাজ করবে, এরা ভিন্ন নামে কাজ করবে কিন্তু জমিয়ত নামে তাদের সাকসেস হতে দেওয়া হবে না। জমিয়তকে অন্তত বাংলাদেশে স্ট্যাবলিশ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ জমিয়ত স্ট্যাবলিশ হলে এদেশের অশুভ শক্তির কপালে শনি রবি সোম সব আছে! তাহলে কী করতে হবে! জমিয়তকে বিভক্ত রাখতে হবে। বিভক্ত করতে হবে। মুনির কাসেমীর মতো সাহসী নেতাদের এজেন্সির খপ্পরে ফেলতে হবে। বিতর্কের মধ্যে রাখতে হবে। ব্যাস!
শেষকথা!
বড় ছেলে জমিয়ত! জনতুষ্টিমূলক ঐক্যের কথাটা তুমি আরো কয়টাদিন চালিয়ে যেতে পারতা! এত ধৈর্য্যহারা হয়ে প্রকাশ্যে বিরোধে না জড়ালেও হত। তোমার অন্য ভাইয়েরা যেমন ঠিক চুপচাপ লাইনঘাট করছে আর মুখে ঐক্যের বুলি আওড়াচ্ছে তুমিও এটা করতা। তা না করে সব দোষ কাঁধে নিতে সবার আগেই রণভঙ্গ দিলা। এ দায় তোমারে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
জাওয়াদ আহমাদ
লেখক, এক্টিভিস্ট, সংবাদকর্মী
শ্যামলী, ঢাকা।