পবিত্র কুরআনের প্রচার, শিক্ষা ও সেবার ক্ষেত্রে যেসব আলেমে দ্বীন তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের মধ্যে দুই আলোকিত নাম আজও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারিত হয় — হযরত মাওলানা আব্দুর রহিম ফালাহী রহ. এবং হযরত মাওলানা গুলাম ওস্তানভী রহ.। সম্প্রতি তাঁদের একসঙ্গে উপস্থিত একটি বিরল ও ঐতিহাসিক দৃশ্য নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
এই ছবিটি কেবল দুই ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎ নয়, বরং এটি একটি আদর্শ, আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও কুরআনের খিদমতের অমর প্রতীক। উভয় আলেমের জীবন ছিল কুরআনের ছায়ায় গঠিত, আর তাঁদের অবদান আজও লক্ষাধিক শিক্ষার্থী, আলেম এবং দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত মানুষদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
🌿 হযরত মাওলানা আব্দুর রহিম ফালাহী রহ.
তাঁর নামটি “নাজিমে মুসাবাকাতে কুরআনিয়্যা” শিরোনামে সর্বত্র পরিচিত ছিল। তিনি সারা জীবন জুড়ে কুরআন তেলাওয়াত, হিফজ ও তাজবিদ প্রতিযোগিতার মান উন্নত করা, নতুন প্রজন্মকে কুরআনের প্রতি অনুরাগী করে তোলা এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সংস্কৃতির বিকাশে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।
তাঁর পরিচালিত প্রতিটি কুরআনি প্রতিযোগিতা ছিল শৃঙ্খলা, সৌন্দর্য ও শিক্ষণীয়তার দৃষ্টান্ত। তিনি বিশ্বাস করতেন—
“যে জাতি কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, আল্লাহ তাকে কখনও পথভ্রষ্ট হতে দেন না।”
তাঁর জীবন ও কর্মে এই বিশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল। ছাত্রদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম ও নির্ভেজাল নিষ্ঠা তাঁকে একটি প্রতিষ্ঠানসম ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল।
📖 হযরত মাওলানা গুলাম ওস্তানভী রহ.
অন্যদিকে, মাওলানা গুলাম ওস্তানভী রহ. ছিলেন কুরআনের এক নিবেদিতপ্রাণ সেবক — প্রকৃত অর্থে একজন “খাদিমুল কুরআন”। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কুরআন শিক্ষালয়, মাদরাসা ও তাজবিদ কেন্দ্র। লক্ষাধিক শিক্ষার্থী তাঁর তত্ত্বাবধানে কুরআনের আলোয় আলোকিত হয়েছে।
তিনি শুধু শিক্ষক নন, ছিলেন একজন দূরদর্শী সংগঠক ও সংস্কারকও। কুরআন শিক্ষাকে সহজ, কার্যকর ও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে তাঁর প্রচেষ্টা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তিনি প্রায়ই বলতেন—
“আমরা যদি কুরআনকে নিজের জীবনে নামিয়ে আনতে পারি, তবেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।”
তাঁর এই আদর্শ আজও তাঁর ছাত্রদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
✨ এক ফ্রেমে দুই মহান সেবক
এই ছবিটি যেখানে দুই আলেমে দ্বীন একত্রে বসে আছেন, সেটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি শুধু এক প্রজন্মের নয়, বরং দুই যুগের কুরআনসেবী ধারার সংযোগ।
দুজনের চোখেমুখে যে প্রশান্তি ও আন্তরিকতা ফুটে ওঠে, তা কুরআনের সেবায় আত্মনিবেদনের জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে।
এই মিলন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে—
“যারা কুরআনের সেবায় জীবন উৎসর্গ করে, তারা আসলে আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা; তাঁদের মৃত্যু হয়, কিন্তু তাঁদের কাজ অমর হয়ে থাকে।”
🌸 চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার
এই দুই মহৎ ব্যক্তিত্বের খিদমতে কুরআনের স্মৃতি, শিক্ষা ও অবদান যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
তাঁদের রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠান, ছাত্র এবং অনুগামীরা আজও তাঁদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছে।
আমরা মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি—
“আল্লাহ তাআলা তাঁদের মর্যাদা উচ্চ করুন, তাঁদের কুরআনি খিদমত কবুল করুন, এবং আমাদেরকেও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।”
সংবাদদাতা: ইসলামিক ডেস্ক
প্রকাশনা: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, বাংলাদেশ
