জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ‘বন্দে মাতরম’ গান গাওয়া ও তার ভিডিও পাঠানোর নির্দেশ ভারতের সংবিধানপ্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
মাওলানা মাদানী বলেন, “এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক পদক্ষেপ। কোনো নাগরিককে তার ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো গান গাইতে বাধ্য করা যায় না।”
তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যকে “সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও ঐতিহাসিক সত্যের পরিপন্থী” বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, বন্দে মাতরমের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল বিভাজনের প্রভাবে। কিন্তু মাদানী সাহেব বলেন, এই দাবি ঐতিহাসিকভাবে ভুল এবং বিভাজন নয়, বরং ধর্মীয় সমন্বয়ের স্বার্থেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কিছু অংশ বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
“বন্দে মাতরম গানের পরের চারটি স্তবকে মাতৃভূমিকে দেবী দুর্গা হিসেবে উপস্থাপন করে পূজার আহ্বান জানানো হয়েছে। মুসলমানরা এক আল্লাহর উপাসক — তাই এমন গান গাওয়া ইসলামিক বিশ্বাসের পরিপন্থী,” — বলেন মাওলানা মাদানী।
তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানের ২৫ ও ১৯ অনুচ্ছেদ নাগরিকদের ধর্মীয় ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। এমনকি ভারতের সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্ট করেছে যে, কোনো নাগরিককে তার বিশ্বাসবিরোধী কোনো গান গাইতে বাধ্য করা যাবে না।
মাদানী বলেন, “ভালোবাসা (মোহাব্বত) ও উপাসনা (ইবাদত) এক নয়। মুসলমানরা এই দেশকে প্রাণভরে ভালোবাসে — স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষায় তাদের ত্যাগ অস্বীকার করা যায় না। প্রকৃত দেশপ্রেম কথায় নয়, কাজে প্রকাশ পায়।”
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তিনি জানান, ১৯৩৭ সালের ২৬ অক্টোবর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন যে, বন্দে মাতরমের শুধু প্রথম দুটি স্তবককে জাতীয় গান হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। পরে ২৯ অক্টোবর ১৯৩৭ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি এই পরামর্শ মেনে সিদ্ধান্ত নেয় — কেবল দুটি স্তবকই জাতীয় গান হিসেবে গৃহীত হবে।
মাদানী বলেন, “আজ রবীন্দ্রনাথের নাম ব্যবহার করে পুরো গানটি গাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া ইতিহাস বিকৃতি ও জাতীয় ঐক্যের অবমাননা।”
শেষে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয় —
“ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক সংবেদনশীল বিষয়গুলো রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করে দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহিষ্ণুতা ও ঐক্য রক্ষায় দায়িত্ব পালন করুন।”