শুরুটা শুরু থেকেই করতে হবে। গাছবাড়ি হুজুর কেন হেফাজতের সমাবেশে যাননি? কেন তিনি সমাবেশের আগের রাত ভিডিও বার্তা দিতে বাধ্য হলেন? একজন প্রবীণ শায়খুল হাদীস। নবীজির হাদীসের সাথে যাঁর আত্মার সম্পর্ক। আর নবীজিরই ইজ্জত রক্ষার সমাবেশেই কিনা তিনি অনুপস্থিত! কেন? ইতোমধ্যে অনেক নাপাক কথাবার্তা বাতাসে উড়ছে। আবার অনেকে হাওয়ায় উড়া সেই উৎসহীন ‘নাপাক কথন’কে পুঁজি বানিয়ে বয়োবৃদ্ধ মুখলিছ শায়খুল হাদীসের ব্যাপারে ছড়িয়ে যাচ্ছে ঘৃণ্য শব্দদূষণ! এই দূষণ ছড়ানোর তালিকায় যেমন আছেন কতেক ‘ছোটলোক’ তেমনি আছেন কিছু রাজনৈতিক ঠিকাদার। অবশ্য এই ছোটলোক আর ঠিকাদারদের ছোঁবল হতে কোন মহামনীষী-ই রেহাই পাননি। এরা মনে করে দ্বীন এবং মিল্লাতের সকল ঠিকাদার আর গোপালগিরি তাদের দায়িত্বে! সুতরাং এদের নিয়ে কোন মন্তব্য করার দরকার আছে বলে মনে করি না। আমাদের সত্য উচ্চারণ তাদের জন্য যারা সত্যিই হেফাজতকে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন হেফাজতের নিরেট লি-ওয়াজহিল্লাহর সংগ্রামকে।
কী ছিল আসল ঘটনা..?
একটু পেছন থেকে শুরু করি। পূন্যভূমি সিলেট। আধ্যাত্মিক নগর এটি। শাহ জালাল শাহপরান’র উপাখ্যান বাদ দিয়েও আমরা যদি বিগত দশকগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, সিলেট ছিল আহলে হক উলামায়ে কেরামের ঘাঁটি। তাদের নেতৃত্বেই সিলেটের তাওহীদি জনতা গাইডেড হয়ে এসেছে। আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। হুসাইন আহমাদ মাদানি হয়ে আব্দুল্লাহ হরিপুরী এবং প্রিন্সিপাল রাহিমাহুমুল্লাগণ এর একটি দালিলিক পরম্পরা। অপরদিকে বেদাতি আর মাজারপুজারিরা এই সিলেটে কখনই আসন গাড়তে পারেনি। এটি সিলেটের অন্যতম বৈশিষ্ট্যও বটে। তবে ইদানিংকালে সিলেটের পাঁচজন বিদগ্ধ আলেম চলে যাওয়াতে সিলেটের আলিম সমাজে কিছুটা বিচ্ছিন্ন এবং ছন্নছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হতে থাকে। এদিকে এই সুযোগে বেদাতি আর মাজারপুজারিরা চাইছে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে। জুশনে জুলুশ, বড় ঈদ ইত্যাদির নামে তারা ক্রাকডাউন করে যাচ্ছিল কদিন পরপর।
আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি গভীরভাবে এসব পর্যবেক্ষণ করে আসছিলেন। চোখের সামনে আধ্যাত্মিক শহর বেদাতিদের দখলে চলে যাওয়াটা তাঁর জন্য ছিল বড্ড কষ্টকর। তিনি ভাবলেন, আমাদের আহলে হক উলামায়ে কেরামকে নতুন করে একপ্লাটফর্মে আসা দরকার। আমাদের ঐক্যের গোঁড়ায় দরকার নতুন করে পানি সিঞ্চন করার। এবং সেটা হতে পারে হেফাজতের ব্যানারে,হতে পারে উলামা পরিষদের ব্যানারে কিংবা অন্য কোন ব্যানারে। মূলত নতুন করে বৃহত্তর ঐক্যই ছিল মূখ্য উদ্দেশ্য এবং সেই মহৎ মাকসাদ নিয়েই আল্লামা গাছবাড়ি সিলেটের সমস্ত উলামায়ে কেরামকে নিয়ে বৈঠক করেন। রাসুলপ্রেমের সমাবেশ দিয়েই সেই ঐক্যের দরোজা উন্মুক্ত করতে চান বলে উলামায়ে কেরামের নিকট আরজ করেন গাছবাড়ি।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সে বৈঠক থেকে ঐক্যের কোন ফয়সালা আসেনি। শেষপর্যায়ে ঈমানি দায়িত্ববোধ থেকে গাছবাড়ি ঘোষণা দেন,
তিনি একাই কোর্টপয়েন্টে রাসুলপ্রেমের সমাবেশ করবেন। কেউ তাঁর সাথে থাকুন বা না থাকুন। কারণ, এটা ঈমানের বিষয়। কিন্তু এমন পর্যায়ে এসে জমিয়তের এক নেতা এবং খেলাফতের এক নেতা ‘আমরা আপনার সাথে নেই’ বলে গাছবাড়ির বৈঠক হতে চলে যান। তারপর থেকে শুরু হয় অপপ্রচার..
তবে শেষমেশ গাছবাড়ির ডাকে সিলেটবাসি স্বতস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং নজীরবিহীন লোকসমাগম হয় তাতে। দুঃখজনকভাবে এই সফল গণজাগরণই যেনো গাছবাড়ির জন্য চিহ্নিত একদল ‘জাতিভায়ের’ হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং সে থেকেই গাছবাড়িকে সিলেটের উলামা মহল হতে মায়নাস করার পাঁয়তারায় মেতে উঠে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গাছবাড়িকে ব্যতিরেকে তারা সিলেট হেফাজতের বৈঠক ডাকে অথচ গাছবাড়ি সিলেট হেফাজতের আমির! তারা আমিরের কোন অনুৃমতি বা পরামর্শ ছাড়াই বৈঠক করে এবং ১২ তারিখ সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এই হল শুরুর ঘটনা…. যা গাছবাড়িকে হেফাজত থেকে মায়নাস করার প্রথম ধাপ ছিল!
এরপর আসে হেফাজতের ২১ তারিখের সমাবেশ প্রসঙ্গ।
এখানে শুরুটা হয় এদারার মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে। গাছবাড়ি হুজুরের ডাকে অনুষ্ঠিত হওয়া সমাবেশের দুদিন পর এদারার একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সেখানে এদারার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা উপস্থিত হোন। এদারার প্রধান হিসাবে উপস্থিত হন গাছবাড়ি হুজুরও। সে অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে এদারা সদস্যগণ গাছবাড়ি হুজুর এবং জিয়াউদ্দীন সাহেবকে লক্ষ করে বলেন—’আপনারা দুজন দু’ডালে চলতেছেন। আমরা চাই এদারার নেতৃবৃন্দ এক হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করুন।’
তখন গাছবাড়ি হুজুর জবাবে বলেন—’আমার এতে কোন আপত্তি নেই।আমিতো চাইতেছিই সবাইকে এক করতে। কিন্তু আমি পারি নাই। তাই আমি আমার সাধ্যমতোন একাএকা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি।’
একপর্যায়ে জিয়াউদ্দিন সাহেব এবং গাছবাড়ি হুজুরসহ সবাই ঐক্যমত্যে পৌঁছেন। নতুন করে সিদ্ধান্ত হয় হেফাজতের সমাবেশ ১৪ তারিখে হবে, ১২ তারিখে নয়। সেটা দুই হযরতের লাইভের মাধ্যমে জানানোও হয়।
এভাবেই চলতে থাকে। এরপর ৯ তারিখে এদারা ভবনে হেফাজতের একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য, কীভাবে ১৪ তারিখের সমাবেশের ইন্তেজাম করা যায় কিভাবে–সে ব্যাপারে পরামর্শ করা।
মিটিং চলছে। এরমধ্যে হটাৎ জিয়াউদ্দিন সাহেব মাইক হাতে নিয়ে গাছাবাড়ীকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন—’ আমিও বিতর্কিত আপনিও বিতর্কিত, সুতরাং আমরা দুজনে সমাবেশের ডাক না দিয়ে তৃতীয় আরেকজনে ডাক দেক। আর হেফাজতের সভাপতি-উবাপতি কিতা হেফজতইতো নাই এখন,সুতরাং তৃতীয় আরেকজনে ডাক দেক।’
জিয়া সাহেবের এই বক্তব্য শুনে মজলিশের সবাই স্তব্ধ হয়ে যান। মিটিং হচ্ছে, হেফাজতের সমাবেশ কীভাবে সুন্দর করে আয়োজন যায় সে ব্যাপারে আর তিনি বলছেন তৃতীয় আরেকজনে নতুন করে ডাক দেবার জন্য! আবার হেফাজতও নাকি নেই অথচ সমাবেশ হেফাজতের! অপরদিকে কীভাবে কে বিতর্কিত হলো সেটারও কোন খোলাসা না করে তিনি বিতর্কিত ট্যাগ লাগিয়ে দিলেন!
কিন্তু জিয়াউদ্দীন সাহেব কেন এই বক্তব্য দিলেন সেটা জানা যায়নি। তবে আমাদের শিরোনামের সাথে মিলিয়ে পাঠক ফলাফল বের করতে পারেন। অবশ্য গাছবাড়ি তখনও কিছু বুঝতে পারেননি।
গাছবাড়ি হুজুর পরে মাইক নিয়ে বললেন— ‘আপনি আপনাকে বিতর্কিত মনে করতে পারেন কিন্তু আমি কোন বিতর্কিত কাজ করিনি, তাছাড়া তৃতীয় আরেকজন কে? যিনি বিতর্কের উর্ধ্বে হবেন! আর হেফাজত নাই হলো কীভাবে? ঢাকায় যে হেফাজতের বিশাল আন্দোলন (দূতাবাস ঘেরাও আন্দোলন) হলো সেটা কি হেফাজত ছিল না?’
জিয়া সাহেবের পক্ষ হতে কোন জবাব আসেনি।
শেষতক ইন্তেজামিয়া কমিটি গঠন করা হয় চার আহবায়ক এবং সাত সদস্যবিশিষ্ট করে।
এসময় তারা হযরতদ্বয়কে লাইভের মাধ্যমে বিষয়টা সবাইকে জানানোর অনুরোধ করেন। গাছবাড়ি অমত ব্যক্ত করলে তারা বলল—শুধু আপনারা দুজনে লাইভ দিয়ে দিন দয়া করে। গাছবাড়ি তখন বললেন, ‘শুধু আমরা দুজন কথা বলব,তৃতীয় কেউ না।’ সবাই তা-ই করার মত দিলেন।
কিন্তু লাইভে যখন গাছবাড়ি এবং জিয়া সাহেব কথা বলা শেষ করলেন তখন তৃতীয় আরেক জনের হাতে মাইক দিয়ে দেওয়া হলো কথা বলার জন্য! গাছবাড়ি এটা দেখে বলেন,’ প্রথমেই ওয়াদাখেলাফি! ফাসাদতো এভাবেই সৃষ্টি হয়।’ তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন— মাওলানা মজদুদ্দীন সাহেব! এই অনিয়ম কি মায়নাসের অংশ ছিল সেটা জানা যায়নি। এখানেও বিচারের ভার পাঠকের উপর!
পরবর্তীতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল থাকার কারণে সমাবেশ ১৪ থেকে ২১ তারিখে নেওয়া হয়। গাছবাড়ি হুজুর চলে যান চট্টগ্রাম। এর আগে কমিটিকে বলে যান—আমি চিটাগং থেকে এসে সবাই মিলে ফয়সালা করব,এখন মুলতবি থাকুক কার্যক্রম।
অর্থাৎ আমিরের নির্দেশ তিনি আসার পর কাজ শুরু হবে। কিন্তু কীসের আমীর! কিসের কী! গাছবাড়ি যাওয়ার পর তারা পুরো দুস্তরে কাজ শুরু করে দেয় ইন্তেজামের। তলে তলে যা যা করা দরকার সবকিছু গাছবাড়ির অজান্তে করতে থাকে তারা। সমাবেশের পোস্টার লিফলেট ছাপিয়ে নেওয়া হয়। আমিরের অনুমতি নেবে দূরের কথা তাঁকে জিজ্ঞেসও করেনি। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও তথা বাবুনগরী,কাসেমি,মামুনুল হককে দাওয়াত দেওয়া হয়। কিন্তু গাছবাড়ি কিছুই জানেন না সেসবের। অথচ,তিনি সিলেটের আমীর!
কিন্তু এসবের মানে কী ছিল জানা যায়নি। নতিজা পাঠক বের করতে পারবেন।
গাছবাড়ি চিটাগাং থেকে চলে আসলেন। কিন্তু তাদের কেউই গাছবাড়ির নিকট আসেনি। এতোকিছু করে ফেলছে তার কিছু জানায়নিও। অন্যদিকে গাছবাড়িতো আর কিছুই জানেন না ভেতরে ভেতরে কী চলছে! তিনি তাঁর কথা মোতাবিক ইন্তাজামিয়া কমিটিকে ডাকলেন। তাদেরকে কাউন্সিলের বৃত্তান্ত শুনিয়ে বললেন—’যেহেতু নতুন কমিটি হয়েছে সেহেতু বিরোধী পার্টি বেরিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের সমাবেশ আরো দুচারদিন পিছিয়ে করি’। এমন সময় তারা বলে উঠলো—আমরা সব ইন্তেজাম করে ফেলেছি! গাছবাড়ি স্তব্দ হয়ে যান শুনে। মূলত তখন তিনি বুঝতে পারলেন ভেতরে অন্য কিছু হচ্ছে। বস্তুত হেফাজতকে নিজেেদের উচ্চাসনে আরোহনের সিঁড়ি বানাতে চাইছিলো যে গ্রুপটি সেটা গাছবাড়ির নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠে। তিনি তাদেরকে বলেন— ‘সব তোমরা করে ফেললে আমি কী তাহলে কলাগাছ?
তাহলে তোমরাই করো সমাবেশ’।
গাছবাড়ি রাগ করলেন। তবে গাছবাড়ি তখন রাগ করেছিলেন এজন্য যে—তারা যেন তাদের কৃত অনিয়ম বুঝতে পারে। এবং সঠিকভাবে সবকিছু করা হয়। কিন্তু কিসের কী! গাছবাড়ির রাগ করার পর আর গাছবাড়ির সাথে কোন সাক্ষাৎই করেনি তারা। নেয়নি কোন পরামর্শও আর। যেন গাছবাড়ি অঘোষিত বহিষ্কার! বস্তুত তারাতো চাইছিলো গাছবাড়িকে মায়নাস করতে, তাই এ যেন মায়নাসের চূড়ান্ত ধাপ এবং চূড়ান্ত সুযোগ!!
এভাবে দুদিন অতিবাহিত হয়। সমাবেশের আগের রাত এসে তারা দায়সারাভাবে গাছবাড়িকে বলে— ‘আমরা সমাবেশকে দুই অধিবেশনে ভাগ করেছি। আপনি প্রথম অধিবেশনের সভাপতি আর জিয়াউদ্দিন সাব দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতি!
কতবড় ফাইজলামি। আচ্ছা, আমিরকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয় নাকি আমিরের নিকট সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হয়? দ্বিতীয়ত,সিদ্ধান্তওতো আমিরই নিয়ে থাকেন নিয়মানুযায়ী। তিনিই কমিটির সামনে ফরমুলা পেশ করে থাকেন। কিন্তু সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে কাকে সভাপতি পেশ করার জন্য এতো এতো অনিয়ম করা হলো? পাঠক কী বুঝতে পেরেছেন?
এরপর সাংঘটনিক নিয়ম হলো যিনি বিভাগীয় আমীর হন তিনিই সে বিভাগে অনুষ্ঠিত সমাবেশের সভাপতি হয়ে থাকেন। আর যিনি সেক্রেটারী তিনি স্টেজ পরিচালক হন। তিনি মাজুর হলে সহকারি সেক্রেটারি সেটা করবেন। এহিসাবে গাছবাড়ি সাংঘাটনিকভাবে সমাবেশের সভাপতি হওয়ার কথা। আর সেক্রেটারী হিসাবে জিয়া সাহেব স্টেজ পরিচালক। তাহলে এই সমাবেশে কেন দুই অধিবেশনে করা হলো? কারা করলো এই অনিয়ম? কার জন্য, কিসের জন্য?
তাহলে যে সমাবেশে ডজন ডজন নিয়মভাঙ্গা হয় সাংঘটনিক সকল নীতিকে পদদলিত করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সভাপতি ইত্যাদি করতে সে সমাবেশ কিভাবে আর এখলাস লিল্লাহিয়্যাতের জন্য থাকে? এটাতো পুরাই রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি আর বলয় তৈরীর মাধ্যম হয় হয়ে যায়।
তাহলে এই সমাবেশে গাছবাড়ি কেনই বা ব্যবহৃত হতে যাবেন? কেনই বা নিজ সম্মান বুলণ্ঠিত করতে যাবেন মুখলিস আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক দূর্বিসন্ধির কাছে?
সর্বশেষ গাছবাড়ি ভিডিও বার্তায় বললেন, তিনি সমাবেশে যাচ্ছেন না। তখন যেন মায়নাসের শেষ ধাপ সম্পন্ন হলো। পূর্ণ হলো তাদের চাওয়া।
এবার শুরু হলো অপপ্রচার…
প্রথমত, বলা হলো—গাছবাড়ী নাকি প্রথমে কোর্টকয়েন্টের নির্ধারিত স্থান প্রশাসন দিয়ে আটকে দিয়েছেন। যার কারণে সমাবেশ রেজিস্ট্রারী মাঠে হয়েছে। এতবড় মিথ্যাচার হুজুরের নামে। চ্যালেঞ্জ করে বলছি,কোন বাপের বেটা এটা প্রমাণ করতে পারবে না—যে, গাছবাড়ি হুজুর প্রশাসন দিয়ে বা অন্যকোনভানে আটকে দিয়েছেন। হজুর এক্ষেত্রে ওয়াল্লি বিল্লাহি তাল্লাহি শব্দযুগে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দ্বিতীয়ত, বলা হলো—গাছবাড়ি বাবুনগরীকে বিমানবন্দরে আটকে দিয়েছেন। অথচ, ঘটনা হলো বাবুনগরী এয়ারপোর্টে এসে গাছবাড়িকে না পেয়ে যখন তার কারণ জিজ্ঞেস করলেন তখন তারা বলে–গাছবাড়ি আসবেন না। তখন বাবুনগরী নিজে গাছবাড়িকে ফোন দিয়ে বললেন–আমাকে দাওয়াত দিয়ে আপনি না আসার কারণ কী? যখন গাছবাড়ি বললেন– আমি আপনাকে দাওয়াত দেইনি। আমি কিছু জানিও না। তখনই বাবুনগরী ওদেরকে ধোঁকাবাজ আখ্যা দিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন—আর এটাকেই এরা গাছবাড়ি বাবুনগরীকে আসতে দিচ্ছেন না বলে চালিয়ে দেয়। আফসোস!
আরো ভয়ংক ব্যাপার হচ্ছে—আল্লামা বাবুনগরী গাছবাড়ি না আসার কারণ জানতে চাইলে জমিয়তের এক নেতা তখন বললেন– গাছবাড়ি হেফাজতের ক্ষেত্রে ওয়াক্কাসগ্রুপে চলে গেছেন!! মানে দালাল গ্রুপে!!! যদিও বাবুনগরীর পাল্টা জবাবে তাঁর মুখ কালো হয়ে যায়। বাবুনগরী বলেন— ‘তিনি ওয়াক্কাসগ্রুপে যাননি,আপনারা তাকে ঠেলে দিতেছেন চলে যাবার জন্য।’ জমিয়তের ঐ নেতার নাম— খলিলুর রহমান। তিনি উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেবকে দিয়ে বাবুনগরীর কানে কথাটি পৌঁছান।
তো যারা হুজুরের নামে এতবড় মিথ্যাচার করতে পারে তারা হুজুরকে মায়নাস এবং কোণঠাসা করার জন্য কতটা মরিয়া ছিল পাঠক সহজেই অনুমান করার কথা। তাহলে গাছবাড়ীর সমাবেশে না যাওয়াটা তাঁর জন্য কেন অযৌক্তিক হবে! এই সমাবেশ কি কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের সিঁড়ি ছিল? হেফাজত কি কোন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন?
আমরা কি একবার তলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি কেন আমিরের মতামত না নিয়ে সংগঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে? পৃথিবীর কোন সংগঠন এমন আছে ন
কি যারা আমিরকে একপাশে রেখে সাধারণ সদস্যরা দাদাগিরি করে? তাহলে সিলেটে কেন করা হল? কারা করল? কী উদ্দেশ্যে করল? এসব প্রশ্নের উত্তর কি আমরা খুঁজেছি?
না খুঁজে গাছবাড়িকে তুলোধুনো করার ক্ষেত্রে আমাদের নৈতিকভিত্তি কী ছিল? তিনযুগ ধরে হাদিসের দারস দানকারী একজন মহান মানুষের প্রতি এটাই কি করার ছিল আমাদের ধারণা! আমাদের আচরণ! আফসোস।
এরপরে কাসিমি সাহেবের অনুরোধে যখন বাবুনগরী হুজুরসহ মেহমানরা মাঠে আসলেন তখন তারাও সিলেটের সমাবেশের রাজনৈতিক দূর্ভিসন্ধি আরো ভালোভাবে প্রত্যক্ষ করেন।
সমাবেশে জমিয়তের পতাকা উড়ছে!! যেন হেফাজত নয়,জমিয়তের সমাবেশ! কাসিমিতো রাগ করে বলেই ফেললেন—’আমাকে ব্যবহার করে তোমরা কি হেফাজতে রাজনৈতিক বলয় গড়তে চাও। আমি এটা হতে দেব না। এটা হেফাজতের সমাবেশ, জমিয়তের না’। এমনকি স্টেইজব্যানারের এক পাশে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয় জমিয়তের ব্যানার! পরে বাবনগরী হুজুরের খাদিম এনামুল হাসান ভাইয়ের অনুরোধে তা সরানো হয়।
এবং আল্লামা কাসিমি এতটাই ক্রোধান্বিত হয়েছেন যে—সিলেট তিনি খাবারই গ্রহন করেননি। সিলেট জমিয়তের পক্ষ থেকে কাসিমির জন্য আপ্যায়নের যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল আল্লামা কাসিমি সেখানেও যানননি! এরপর বাবুনগরী এবং কাসিমি চলে যাওয়ার সময় তারা একটি নতুন কমিটির লিস্টি তাদের হাতে দিয়ে সেটা অনুমোদন করার আবেদন করে। বাবুনগরী-কাসিমির জবাব ছিল—’যে কমিটিতে গাছবাড়ি নেই আমরা সেটা কখনই অনুমোদন দেব না।’
অবস্থাকে কতটা নাজুক করে তোলা হয়েছিল আমীর আর মহাসচিবের এই দৃঢ় প্রত্যয় থেকেও বুঝে আসে।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
লেখা: লেখকের ফেসবুক থেকে,সম্পাদক দায়ী নয়।