অর্থনীতি ও ইসলাম

অর্থনীতি ও ইসলাম

বিভিন্ন যুগ, বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন জাতি ও পরিবেশের যে সব সমস্যা ও সংঘাত মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তার সমাধানের দাব, নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ গড়ে উঠে। সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, ফ্যাসিবাদ, নাৎসীবাদ, সাম্যবাদ প্রভৃতি সব মতবাদই কোন না কোন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যেই উদ্ভাবিত হয়। তবে এতে কোন শান্তি আসেনি। বরং সমস্যার সমাধান দিতে গিয়ে সৃষ্টি করেছে আরো বহু নতুন সমস্যা, ডেকে এনেছে আরো বহু অকল্যাণ ও অশান্তি। পুঁজিবাদী ও কমিউনিজম ব্যবস্থাতেও এ নীতির বিন্দুমাত্র বরখেলাফ হয়নি।

বস্তুত পুঁজিবাদ ও কমিউনিস্ট ব্যবস্থা পরস্পর বিপরীত দুই সীমান্তবর্তী আদর্শ বিশেষ। কারণ, পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার মূল কথা হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তিই হল নিজের উপার্জিত ধন-সম্পদের একচ্ছত্র মালিক, এতে অন্য কারো কোন হক বা অধিকার নেই। নিজের উপার্জিত সম্পদ যে যেভাবেই ইচ্ছা ব্যয় করতে পারবে, জমা করতে পারবে, পারবে কুক্ষিগত করতে। এতে কারো প্রতিবাদ করার কোন অধিকার নেই এবং করলেও তা গৃহীত হবে না। এ অকল্যাণকর অভিশপ্ত মতাদর্শের ফলে সমাজ দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক দল লোক গোটা সমাজ ও জাতির যাবতীয় ধন- সম্পদ ও উপায়-উপাদান গ্রাস করে নিয়ে টাকার কুমীর সাজতে আরম্ভ করে রাতারাতি। অপর দিকে দেশের কোটি কোটি মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে আরম্ভ করে। এরূপ অর্থ ব্যবস্থা প্রচলিত সমাজে সহানুভূতি, সহমর্মিতা, হৃদ্যতা, প্রেম, ভালবাসা, মায়া-মমতা, পারস্পরিক সাহায্য প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলী একবিন্দুও আর বাকী থাকে না। তখন গরীব অসহায় লোকদের সামনে দুটি পথই খোলা থাকে। হয়তো তারা আত্মহত্যা করে এ জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ করবে, না হয় নানাবিধ অপরাধ ও মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের পংকিল আবর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুধার জ্বালা নিবৃত্তি করবে।

এ মানবতাবিরোধী মতাদর্শের সংশোধনের লক্ষ্যে কমিউনিজমের আবির্ভাব হয়। তবে এর জন্য তারা যে কর্মনীতি অবলম্বন করে তা অত্যন্ত ভ্রান্ত। তাদের কথা হচ্ছে, ধন-সম্পদের সম্মিলিত মালিকানাভুক্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগতভাবে তা দখল করে নিজের ইচ্ছামত এতে হস্তক্ষেপ করা এবং ব্যক্তিগতভাবে এর মুনাফা গ্রহণ করার কোন অধিকার নেই। এ কথাগুলো মূলত মানব প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ ঘোষণারই নামান্তর।

পক্ষান্তরে ইসলাম উল্লেখিত এ দুটি বিপরীতমুখী পরস্পর বিরোধী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যবর্তী এক সুষ্ঠু ও সুবিচারপূর্ণ ব্যবস্থা পেশ করে। এর মূলনীতি হল- প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার ব্যক্তিগত ও স্বাভাবিক অধিকার পুরোপুরিই দিতে হবে। সাথে সাথে ধন বণ্টনের ভারসাম্যকেও যথাযথভাবে রক্ষা করতে হবে। ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতি স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কুরআনের এক স্থানে আল্লাহ বলেন-

*এবং ধন-সম্পদ প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও সে তার আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবী, মুসাফির, ভিখারী এবং ঘাড়মুক্ত করার জন্য দান করেছে।’ [সূরা বাকারা : ১৭৭]

অন্যত্র বলা হয়েছে-

‘তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে ভিক্ষুক এবং গরীবদের অধিকার রয়েছে।’

[সূরা আয-যারিয়াত : ১৯]

সূরা নূরে ইরশাদ করা হয়েছে-

*আল্লাহর ঐ সম্পদ হতে তোমরা দাও যা আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন।’ [সূরা নূর : ৩৩]

কুরআন আরো বলেছে-

‘হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে ধন-সম্পদ প্রদান করেছি তা থেকে খরচ করো।’ [সূরা বাকারা : ২৪৪ ]

পবিত্র কুরআনে এ ধরনের অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলোতে ব্যক্তি মালিকানা স্বীকার করার ক্ষেত্রে স্থাবর অস্থাবর সম্পদ কিংবা উৎপাদন মাধ্যমগুলো থেকে কোনটা নির্দিষ্ট করা হয়নি। এ সবের মালিকানায় কোন পার্থক্যও নির্ণয় করা হয়নি।

ব্যক্তি মালিকানার মূলনীতি স্বীকার করা সত্ত্বেও ইসলাম অবশ্যই তার সীমা নির্ধারণ করে দিতে চায়। তাই ইসলামী অর্থ বণ্টন ব্যবস্থায় কোন এক স্থানে ধন-সম্পদ ও উপায়-উপাদান জমাট বাধতে এবং স্থবির হয়ে থাকতে পারে না; বরং এটা সর্বদাই আবর্তিত হতে থাকে। এতে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য রয়েছে সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ লাভ করার বিরাট সুযোগ এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা। সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হওয়ার ফলে সমাজের কোটি কোটি ব্যক্তিকে যাতে অভুক্ত না থাকতে হয় তাই কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করছে-

‘যারা সোনা-রূপা (ধন-সম্পদ) জমা করে, কিন্তু তা আল্লাহর রাহে ব্যয় করে না। আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে সেসব গরম করে তাদের কপাল, পাঁজর আর পিঠে দাগ দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু জমা করে রেখেছিলে এখন তার স্বাদ গ্রহণ করো। [সূরা তাওবা : ৩৪-৩৫)

কারূনী পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার ভয়াবহ পরিণাম থেকে বাঁচার লক্ষ্যে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে- ‘(হে নবী!) তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে, (অন্যদের প্রয়োজনে) তারা

কি পরিমাণ ব্যয় করবে? আপনি তাদেরকে বলে দিন, তোমাদের নিজেদের

প্রয়োজনাতিরিক্ত সবই অন্যদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য ব্যয় করো।’ [সূরা

বাকারা : ২১৯]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদ কুক্ষিগত করে বাড়তি মূল্য লাভ করার হীন চক্রান্তের ভয়াবহ পরিণামের প্রতি ইংগিত করে বলেন-

যদি কেউ চল্লিশ দিন পর্যন্ত সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে তাহলে সে আল্লাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহও তার সর্বপ্রকার দেখাশুনা ও দায়- দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যান।’ [মুসনাদে ইমাম আহমদ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র ইরশাদ করেছেন- “কোন বস্তি বা জনপদে যদি কেউ অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটায় তাহলে উক্ত বস্তির উপর আল্লাহ তাআলার দেখাশুনা এবং নিরাপত্তা বিধানের সকল দায়-দায়িত্বের অবসান হয়ে যায়।’ [মুসনাদে ইমাম আহমদ]

শ্রমিক ও মজুরদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করার জোর দাবী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিক ও শিল্পপতিদেরকে লক্ষ্য করে বলেন- ‘মজুরদের শরীরের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার পারিশ্রমিক আদায় করে দাও।’ [ইবনে মাজাহ ও তাবরানী। সুষম বণ্টনের প্রতি জোর দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

ইরশাদ করেছেন-

‘তিন ধরনের ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন যাদের দুশমন আমি হবো। এদের মধ্যে একজন সেও যে কোন মজুরকে খাটিয়ে নিজের পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়ে যাবে পরে তার মজুরী আদায় করে না। [বুখারী শরীফ |

এমনি করে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে ধন-সম্পদের ব্যবহার, মানুষের অধিকার তথা সুষম বণ্টন সম্পর্কে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে পথ নির্দেশ করা হয়েছে। যা পুঁজিবাদী এবং কমিউনিজমের অর্থ ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণভাবে স্বতন্ত্র। পক্ষান্তরে ইসলামই হল একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং মুকাম্মাল জীবন ব্যবস্থা। সত্যিকারের ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মের অর্থ হল ইহকাল ও পরকাল এবং বস্তুবাদ ও আধ্যাত্মবাদের সমন্বয়। ইসলাম এর কোনটাই অস্বীকার করেনি; বরং একের সাথে অন্যের সমন্বয় সাধন করেছে। আধ্যাত্মবাদ এবং বস্তুবাদের উগ্রতা এবং চরম মাদকতাকে অস্বীকার করে ইসলাম মানব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা ও সংঘাতের এমন এক অপূর্ব সমন্বয় সাধন করে যা অন্য কোন ধর্মে বা মতবাদে নেই। তাই শান্তির অন্বেষায় এদিক ওদিক ছুটাছুটি না করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলেই আমাদের আশ্রয় নেওয়া একান্ত অপরিহার্য।

2 responses to “অর্থনীতি ও ইসলাম”

  1. Melba Avatar

    Magnificent beat ! I wish to apprentice even as you amend your web site, how
    could i subscribe for a weblog web site? The account
    aided me a appropriate deal. I had been tiny bit familiar of this your broadcast offered shiny transparent concept

  2. Orlando Rubin Avatar

    Hey there! Are you tired of those pesky pop-up ads and expensive subscriptions to watch quality adult movies or videos? Well, look no further! Our newly launched adult streaming website offers a paradise of premium quality porn videos for free, without any annoying interruptions. Experience the thrill of our exclusive collection in Full HD without breaking the bank. Don’t miss this opportunity to indulge in hassle-free top class adult entertainment. Visit our website now and explore our tempting selection.

    Our Website: https://play.pornlovers.world

    Enjoy!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *