1. info@izharehaq.com : MZakir :
সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আহলে সুন্নতের ফিক্বাহ শাস্ত্রের ইমাম: ইসলামী আমলের ক্ষেত্রে বিদয়াতীদের চক্রান্ত আহলে সুন্নতের আক্বীদামতে মহানবীর মর্যাদা: অতি ভক্তি কিসের লক্ষণ রেজভীদের চক্রান্ত হুবহু ইবনে সাবার চক্রান্তের মত: রাসূলকে আলিমুল গাইব বলা সাবায়ী চক্রান্ত: আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’ত সুবিন্যস্ত হওয়ার ইতিহাস কুরআন ও হাদীসের ভাষায় ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথ: নবুওয়াত ও রিসালত: মওদুদীবাদ ইবাদত: মওদুদীবাদ কুরআন মাজীদ ও দ্বীনের সংরক্ষণ: কুরআন সংরক্ষণের অর্থ: কুরআন সংরক্ষণে খোদায়ী ব্যবস্থাপনা: মওদুদীবাদ দ্বীন কী? দ্বীনে নূহ: দ্বীনে ইব্রাহীম: দ্বীনে ইসমাঈল: দ্বীনে ইউসুফ: দ্বীনে মূসা: দ্বীনে ঈসা: মওদূদীবাদ মওদুদী সাহেবের শিক্ষা-দীক্ষার পরিধি গোয়েবলসীয় নীতি : হিটলারের ঐ মুখপাত্রও ”জামাত-শিবিরের মিথ্যাচারের কাছে হার মানায়”: পর্ব ১ ইক্বামাতে দ্বীনের তাৎপর্য এবং বাতিলপন্থীদের বিকৃত ব্যাখ্যা সাহাবাগণ রাঃ সত্যের মাপকাঠি এবং তাদের ইজমা সর্বসিদ্ধান্ত মতে শরীয়তের দলীল সাহাবা রাঃ গণ সত্যের মাপকাঠি খোলাফায়ে রাশেদীনগণের সোনালী আদর্শ সর্বসম্মতিক্রমে শরিয়তের দলীল শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: “তাঁরাই সত্যের মাপকাঠি” শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: সাহাবায়ে কেরাম “সত্যের মাপকাঠি: মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৬ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৫ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৪

মওদূদী সাহেব যেমন সাহাবায়ে কিরামকে সত্যের মাপকাঠি মানতে নারাজ তেমনি আম্বিয়ায়ে কিরাম, সম্পূর্ণ নিষ্পাপ বলতেও নারাজ

নাম:
  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৩৮৯ বার পড়া হয়েছে

৫। মওদূদী সাহেব যেমন সাহাবায়ে কিরামকে সত্যের মাপকাঠি মানতে নারাজ তেমনি আম্বিয়ায়ে কিরাম, সম্পূর্ণ নিষ্পাপ বলতেও নারাজ; যথা আম্বিয়া কিরাম সম্পর্কে তিনি লিখেন :

عصمت انبیاء علیهم الصلاة والسلام کے لوازم ذات سے اور ایک لطیف نکتہ یہ ہے کہ الله نہیں تعالی نے بالارادہ ہر نبی سے کسی وقت اپنی حفاظت آنها کرایک دو لغزیش ہو جانے دی ہیں تاکہ لوگ انبیاء کو خدا نه سمجھیں اور جان لیں کہ یہ بهی بشر ہیں.

অর্থঃ নিষ্পাপ হওয়া আম্বিয়ায়ে কিরামের সত্ত্বার জন্যে আবশ্যক নয় বরং নবুওয়াতের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনার্থে আল্লাহ তা’আলা তাঁদেরকে গুণাহ হতে হেফাজতে রেখেছেন। নতুবা ক্ষণিকের জন্যে সে হিফাজত উঠিয়ে নিলে সাধারণ মানুষের মত তাদেরও ভুল ভ্রান্তি হতে পারে, আর মজার কথা যে, আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় এই হিফাজত উঠিয়ে দু-একটি গুণাহ হতে দিয়েছেন, যাতে লোকেরা তাঁদেরকে খোদা মনে না করে এবং বুঝে নেয় যে, তাঁরাও মানুষ । তাফহীমাত ২, পৃঃ ৫৭ ষষ্ঠ সংস্করণ তেমনি ভাবে তর্জুমানুল কুরআন ৫৮-এপ্রিল ১৯৭৬ সংখ্যায় spade a spw। শিরোনামে স্বয়ং মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে লিখেন :

وه نه فوق البشر ہے ۔ نه بشری کمزوریوں سے بالاتر ہے ۔ অর্থঃ তিনি (সাঃ) না মানব উর্দ্ধের ছিলেন, না মানবিক দুর্বলতা মুক্ত ছিলেন।

মোটকথা তাঁর মতে আম্বিয়ায়ে কিরাম সত্ত্বাগত দিক থেকে মা’সুম তথা নিষ্পাপ ছিলেন না। বরং প্রত্যেক নবীর দ্বারাই গুণাহ সংঘটিত হয়েছে। এমনকি স্বয়ং মুহম্মদ(সাঃ)ও মানবিক দুর্বলতা মুক্ত ছিলেন না, আর আম্বিয়ায়ে কিরামের গুণাহ দেখানোর জন্যে তিনি তাফহীমুল কুরআন, তরজুমানুল ২৯ খঃ ও রাসায়িল মাসায়িল ১ম খণ্ডে হযরতে আদম, হরতে দাউদ, হযরতে ইউনুস, হযরত ইউসুফ ও হযরত মূসা আলাইহিমুসসালাম কর্তৃক গুনাহ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।

অথচ হযরত আদম (আঃ) এর গন্ধম খাওয়ার বিষয়টি দুনিয়ায় অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেকার ছিল। এছাড়া কোন নবী হতে ইহ জীবনে শরীয়াতের দৃষ্টিতে কোন পাপ কাজ হয়েছে এমন প্রমাণ কোথাও নাই। আর হবেই বা কি করে। কারণ কুরআনে পাকের বহু আয়াতে উম্মতকে নবী-রাসূলের নিঃশর্ত ও দ্বিধাহীন আনুগত্যের হুকুম করা হয়েছে। তাঁদের দ্বারা কখনো কখনো গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকাবস্থায় এ আনুগত্য কি করে সম্ভব?
আর খাওয়া পরা সংসার ধর্ম এগুলো হল মানবিক চাহিদা ও প্রয়োজন । মানবিক দুর্বলতা হল, হিংসা বিদ্বেষ, স্বজন প্রীতি অযথা ক্রোধ ইত্যাদি। রাসূল নিজে যদি এসব দুর্বলতা মুক্তই না হন উম্মতকে এ সব দুর্বলতা মুক্ত করবেন কি করে? নবীগণ মানুষজাতের একথা প্রমাণের জন্যে খাওয়া-পরা এজাতীয় মানবিক প্রয়োজনইতো যথেষ্ঠ, তাসত্ত্বেও তাদেরকে দিয়ে গুণাহ সংঘটিত করিয়ে ও মানবিক দুর্বলতাযুক্ত রেখে মানুষ প্রমাণের কি দরকার আছে?

বস্তুত : আম্বিয়ায়ে কিরামের নিষ্পাপ হওয়া স্বয়ং কুরআনের ও খোদ নবুওয়তীর দাবী, গুণাহের প্ররোচক নফস ও শয়তানের কুমন্ত্রনা হতে আল্লাহ তাদেরকেই সর্বদাই মুক্ত রেখেছেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এটাই বিশ্বাস করে এবং করতে বাধ্য।

৬। কুরআন সুন্নাহর অনুসরণের ক্ষেত্রে মাযহাব চতুষ্টয়ের ইমামদের তাকলীদ করা সম্পর্কে জনাব মওদূদী সাহেব লিখেন :

میرے نزدیک صاحب علم آدمی کیلئے تقلید نا جائز اور گناہ

بلکہ اس سے بھی شدید تر چیز ہے ۔

অর্থ : আমার মতে একজন আলেমের জন্যে তাকলীদ নাজায়িয, গুণাহ *বরং এর চেয়েও জঘন্যতম জিনিস।

রাসাইল মাসাইল ১ম খণ্ড পৃঃ ২৪৪ সূত্র মওদূদী ছাহেব আওর উনকী তাহরীরাত পূঃ ৯৯

অন্যত্র লিখেন : میں ته مسلک اہل حدیث کو اسکی تمام تفصیلات کے ساتھ

صحیح سمجھتا ہوں اور نہ حنفیت یا شافعیت ہی کا پابند ہوں ۔

অর্থ : আমি আহলে হাদীসের মতাদর্শকে যেমন পুরাপুরি সঠিক মনে করি না তেমনি আমি হানাফী বা শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীও নই।

রাসাইল মাসাইল ১ম খণ্ড পৃঃ ২৩৫ -সূত্র-মওদূদী ছাহেব আওর উনকী তাহরীরাত ৯৮ মোট কথা মওদূদী সাহেবের মতে আলেমের জন্যে ইমামদের তাকদীদ মারাত্মক গুণাহের কাজ, আর আলেম দ্বারা তাঁর মত অপূর্ণ আলেম ও উদ্দেশ্য । তাহলে আঈম্মায়ে কিরামের পর হতে মুকাল্লিদ উলামা মাশায়েখ
বযুর্গানে দ্বীন সকলেই তাকলীদ করে। তাঁর মতে মারাত্মক গুণাহগার সাব্যস্ত হয়েছেন । কত জঘন্য কথা! এছিল মওদূদী সাহেবের কতিপয় ভুল চিন্তাধারা। উপরে যে কয়টি

ভুলের কথা আলোচনা করা হয়েছে সে গুলো হল তাঁর মূল থিওরীর অন্তর্ভুক্ত। এ সব থিওরীর আলোকেই তিনি লিখেছেন, দল গড়েছেন ও গবেষণা করেছেন। চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন এসব থিওরীর আলোকে লেখা বই, তাফসীর ও গবেষণা কি পরিমাণ গোমরাহী’ও ভুলে পরিপূর্ণ হয়েছে। বিজ্ঞ ও হক্কানী উলামায়ে কিরাম সে সব ভুলের প্রতি মওদূদী সাহেব বা তাঁর দলকে আকৃষ্ট করলে হয়ত বা ইনিয়ে বিনিয়ে আরো কয়েকটি গলত যুক্তি দিয়ে সে ভুলকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন বা কোন ভাবে ভুল ঢাকা সম্ভব না হলে লিখনী হতে সেই অংশটুকু গায়েব করে দিয়েছেন, কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করেননি। একারণে হক্কানী উলামায়েকিরাম প্রায় শুরু থেকেই মওদূদী সাহেবও তাঁর চিন্তা ধারায় বিশ্বাসী জামাআতে ইসলামীকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বহির্ভূত একটি গোমরাহ দল হিসাবে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এবং অন্যদেরকে তাদের থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

নিম্নে জগতবিখ্যাত কয়েকজন আলেমের অভিমত উল্লেখ করা হল।

(ক) আকাবিরে দেওবন্দের সর্বসম্মত ফাতাওয়া : মওদূদী সাহেব ও জামাআতে ইসলামীর বই-পত্র ও রচনাবলী পড়ার দ্বারা সাধারণ মানুষ আঈম্মায়ে হিদায়াতের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে পড়ে, যা তাদের গোমরাহীর কারণ। তেমনি সাহাবায়ে কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধায়ও ভাটা পড়ে। এছাড়া মওদূদী সাহেবের বহু গবেষণা সম্পূর্ণ ভুল। সার্বিক ভাবে মওদূদী সাহেব ও তাঁর দলের চিন্তাধারা একটি নতুন ফিত্না, যা নিশ্চিত ক্ষতিকর। এ কারণে আমরা উক্ত চিন্তাধারা নির্ভর আন্দোলনকে গলদ ও মুসলিম উম্মাহর জন্যে ক্ষতিকর মনে করি। এ দলের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই।

দস্তখত কারী : হযরত মুফতী কিফায়াতুল্লাহ রঃ। হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রঃ। হযরত কারী মুহাম্মদ তৈয়্যেব রঃ (প্রিন্সিপ্যাল দারুল উলূম দেওবন্দ শাইখুল হাদীস হযরত যাকারিয়া রঃ হযরত মুফতী সাঈদ আহমাদ মাঃ জিঃ মুফতীয়ে দেওবন্দ প্রমুখ। মাসিক দারুল উলূম যী-কাদাহ ১৩৭০ সংখ্যা। দৈনিক আল জমিয়ত দিল্লী ৩রা আগষ্ট ১৯৫১ খৃঃ -সূত্র ঃ মওদূদী ছাহেব আওর উনকী তাহরীরাত পৃঃ ১৯
(খ) মুফতীয়ে আযম মুফতী মুহাম্মদ শফী রঙ এর ফাতওয়া : আমার মতে মওদূদী সাহেবের মৌলিক ভুল এই যে, তিনি আক্কাইদ ও আহকামের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ইজতেহাদের অনুসরণ করেন, অথচ তাঁর মধ্যে মুজতাহিদ হওয়ার শর্তাবলী অনুপস্থিত। এই মৌলিক ভুলের কারণে তাঁর রচনাবলীতে বহু কথা ভুল ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত পরিপন্থী (আরো একটু আগে গিয়ে বলেন) মওদূদী সাহেবের রচনাবলীই জামাআতে ইসলামীর চিন্তাচেতনার মূল পুঁজি। জামাআতের পক্ষ থেকে মওদূদী সাহেবের ভুল ভ্রান্তির সাধারণ পক্ষ পাতিত্ত্ব একথাই প্রমাণ করে যে, মওদূদীর চিন্তাধারা ও রচনাবলীর সাথে তারা একমত। কেউ একমত না হলে তা নিতান্তই ব্যতিক্রম। জাওয়াহিরুল ফিকহ-১ম খণ্ড পৃঃ ১৭২

(গ) গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ ই’লাউসসুনানের সংকলক ও ঢাকা আলিয়ার প্রাক্তন হেড মুহাদ্দিস হযরত মাওঃ যাফর আহমাদ উছমানীর অভিমত : মওদূদী সাহেব বাহ্যত মুনকিরে হাদীস। ইসলামের গণ্ডি বহির্ভূত নয়, তবে গোমরাহ ও বেদআতী। এমন লোক হতে মুসলমানদের দূরে থাকা চাই। তাঁর কথায় মোটেও আস্থা না রাখা উচিত । এবং দ্বীন সম্পর্কে তাকে চরম মূর্খ মনে করা বাঞ্ছনীয় ।

সূত্র : মওদূদী ছাহেব আওর উনকী তাহরীরাত পূঃ ২৫ (ঘ) তাফসীরে হক্কানীর লেখক পেশোয়ার দারুল উলূম হক্কানীয়ার প্রতিষ্ঠাতা, শাইখুল হাদীস আব্দুল হক্ রঃ এর অভিমত : মওদূদী সাহেবের আক্বাইদ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত পরিপন্থী ও বিভ্রান্তিমূলক, মুসলমানগণ যেন এই ফিত্না হতে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করেন।

সূত্র : মওদূদী সাহেব আওর উনকী তাহরীয়াত পৃঃ ২২ এছাড়া জনাব মওদূদী সাহেবের উত্থানের একেবারে প্রথম পর্যায়ে তার লেখা তরজুমানের একটি সংখ্যা হযরত হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভীর সামনে পেশ করা হলে মাত্র কয়েকটি লাইন পড়েই হযরত থানভী ইরশাদ করলেন ঃ

باتوں کو نجاست میں ملا کر کہتا ہے ، اہل باطل کی

باتیں ایسی ہی ہو اکرتی ہیں ۔
অর্থ ঃ এই লোকের বক্তব্যে নাপাকীর সংমিশ্রণ রয়েছে। বাতিল পন্থীদের কথা এমনই হয়ে থাকে। তরজুমানুল ইসলাম লাহোর ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৫৭ খৃঃ

তেমনিভাবে আশরাফুসাওয়ানেহ বাংলা অনুবাদ আশরাফ চরিত ৮৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে মাওঃ মঞ্জুর নো’মানী সাহেব জামাআতের সাথে নিজ সম্পৃক্ততার সময়ে হযরত থানভীর সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইলে, হযরত বলেন আমার দিল এই আন্দোলনকে কবুল করে না।

মাত্র কয়েক জন শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীনের অভিমত এখানে উল্লেখ করা হল, তাছাড়া উপমহাদেশের অতীত বর্তমানের সকল হক্কানী আলেম গণের সর্বসম্মত মত হল যে, মওদূদী সাহেবের চিন্তাধারা ও তার উপর প্রতিষ্ঠিত জামাআতে ইসলামী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বহির্ভূত। এই হিসেবে শরীয়াতের দৃষ্টিতে তারা ফাসিক ও আকীদাগত ভাবে বিদ্‌আতী ।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সিরাতে মুস্তাকীমের উপর কায়িম থাকার তাওফীক দান করুন, আমীন

(২নং প্রশ্নের জবাব) মওদূদী সাহেবের লিখিত বই পুস্তকে এমন অনেক আলোচনা রয়েছে, যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদার পরিপন্থী। ইলমে কালাম, ইলমে ফিক্হ ও চিন্তা ধারার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী মত রয়েছে। তিনি সালফে সালেহীনের কারো অনুসারী নন। তার লিখিত কিতাবাদীতে মু’তাযিলা, খাওয়ারেজ, লা-মাযহাবী ও অন্যান্য বাতিল সম্প্রদায়ের কথাবার্তা পাওয়া যায়। তিনি দ্বীন-ইসলাম, ঈমান, তাওহীদ, রিসালত, তাকওয়া, ইবাদত ইত্যাদির বিশ্লেষণ করেছেন হাদীস ও আ-সা-রে সাহাবা অনুসৃত আকাবিরে উম্মতের পথ ত্যাগ করে। অপরদিকে রাসূলে খোদা (সাঃ)-এর নিজ হাতে গড়া ও নুযুলে কুরআনের প্রত্যক্ষদর্শী জামাআতে সাহাবার অনুসরণে প্রয়াজনীয় সকল জ্ঞানে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী উলামায়ে উম্মাতের সূত্র পরম্পরায় দ্বীন, ইসলাম ও আনুসাঙ্গিক সকল বিষয়ের নির্ভুল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে মওদূদী সাহেব ভুল ও বিকৃতি আখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন। এবং এসব হযম করাতে চেয়েছেন খুব চতুরতার সাথে যা একজন মুহাক্কিক আলেম ছাড়া ধরা মুশকিল।

তাই সাধারণ মানুষের জন্যে প্রথমে মওদূদী সাহেবের রচনাবলী সংক্রান্ত হক্কানী উলামাদের লিখিত বই-পুস্তক পড়ে নেওয়া জরুরী। তা না করে প্রথমেই মওদূদী সাহেবের বই-পত্র, তাফসীর, ইত্যাদি পড়তে গেলে বিভ্রান্তি ও গোমরাহী অবধারিত। নিজের ঈমান-আমলের সংরক্ষণের স্বার্থেই এমন কাজ হতে  বিরত থাকা জরুরী। এ ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ কয়েকজন আলেমের অভিমত নিম্নে প্রদত্ত হল।

(১) শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) এর অভিমত : মওদূদী সাহেবের রচনাবলী ও কিতাবাদী দ্বীনের আঙ্গিকে এমন বেদ্বীনী ও অপব্যাখ্যা সম্বলিত যে, কম্ ইল্‌ম সাধারণ মানুষ তা ধরতে পারে না। তাই সাধারণ শ্রেণী তা পড়ে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আনীত ইসলাম যার উপর সাড়ে তেরশত বৎসর উম্মাত আমল করে আসছে তা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে ফেলে। (মওদূদীসাহেব আওর উনকী তাহরীরাত পৃঃ ১৫)

(২) বিদগ্ধ মুহাদ্দিস, করাচী নিউটাউন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা ইউসূফ বিন্নুরী (রহঃ) এর অভিমত : মওদূদী সাহেবের বই পুস্তক, রচনাবলীতে এমন মারাত্মক বিষয় বস্তু ও উক্তি সমূহ রয়েছে যেগুলো দ্বারা নিয়মিত দ্বীনী ইলম অর্জনে ব্যর্থ নতুন সমাজ শুধু গোমরাহী নয়, স্পষ্ট কুফরীতেও লিপ্ত হয়ে যেতে পারে ।

(মওদুদী ছাহেব আওর উনকী তাহরীরাত- পৃঃ ১১)

(৩) দারুল উলূম দেওবন্দের প্রধান মুতী হযরত মাওঃ মাহমূদ হাসান গাংগুহী (রহঃ) এর ফয়া : জনাব মওদূদী সাহেব যে সমস্ত বই পুস্তক লিখে প্রচার-প্রসার করেছেন, সে সমস্ত বই পুস্তকে অনেক বিষয় এমন ও রয়েছে যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শ পরিপন্থী। তিনি ইলমে ফিক্হ এর ক্ষেত্রে ভিন্ন মত রাখেন। আয়িম্মায়ে সলিফের কারো অনুসারী নন। তাঁর লিখিত বই-পুস্তকে মু’তাযিলা, খাওয়ারেজ ইত্যাদি সম্প্রদায়ের কথাবার্তা পাওয়া যায়।

কাজেই তার কিতাবাদী অধ্যায়ন করা দ্বীনের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। … শুধু ক্ষতিকরই নয় বরং ধ্বংসাত্মকও বটে। এবং সরাসরি গোমরাহীর মাধ্যম। এজন্যই জনসাধারণকে তার কিতাবাদী পড়া বা অধ্যয়ন থেকে বিরত রাখা হয়। আর এসমস্ত কিতাবাদী যখন লাইব্রেরীতে থাকবে তখন অধ্যয়নে আসবেই। আর লাইব্রেরীতে না থাকলে অধ্যয়নেও আসবে না। (সুতরাং লাইব্রেরীতেও এসমস্ত কিতাবাদী না থাকা চাই)

(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১/২৪৭)
৩ নং প্রশ্নের জবাব : ১ম প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, মওদূদী সাহেবের চিন্তাধারা ও আকীদা অনেকাংশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত পরিপন্থী। তন্মেধ্যে অন্যতম হল তিনি সাহাবায়ে কিরামের দোষচর্চাকারী। তাঁর দলকেও সে কাজে তিনি উৎসাহিত করেছেন। এবং বাস্তবে জামায়াতে ইসলামী তার চিন্তাধারার সাথে কার্যতঃ একমত, বিশেষ করে সাহাবাদের দোষচর্চায় তারা মওদূদী সাহেবের পদাংক অনুসারী ।

তাই মওদূদী সাহেবের চিন্তাধারায় বিশ্বাসী বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা শরীআতের দৃষ্টিতে ফাসিক। আর ফাসিকের ইমামতী মাকরূহে তাহরীমী। তেমনি কোন ফাসিককে মুআয্নি বানানোও মাকরূহে তাহরীমী।

প্রমাণ : (১) উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুক্তী জনাব মুফতী মুহাম্মদ শফী (রঃ) স্বীয় গ্রন্থ জাওয়াহিরুল ফিকহে লিখেন নামায সম্বন্ধে শরীয়তের সিদ্ধান্ত হল এই যে, ইমাম এমন ব্যক্তিকে বানানো উচিত যিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী। সুতরাং যারা মওদূদী চিন্তা ধারায় একমত তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইমাম বানানো জায়িয নাই। হ্যাঁ, কেহ তাদের পিছনে নামায পড়ে নিলে নামায হয়ে যাবে । (জাওয়াহিরুলফিক্হ ১/১৭২)

(২) মুজাহিদে আযম, আল্লামা হযরত মাওঃ শামছুল হক ফরীদপুরী (রহঃ) লিখেন, যাহারা সাহাবায়ে কিরামদের দোষচর্চায় লিপ্ত তাহারা যে কেহই হউন না কেন, তাহাদিগকে ইমাম বানাইয়া পিছনে নামায পড়া কিছুতেই জায়িয হইবে না। কারণ যেহেতু তাহারা সাহাবায়ে কিরামের দৌষচর্চার কারণে আহলেসুন্নাত ওয়াল জামাআত হইতে খারেজ হইয়া গিয়াছে। (ভুল সংশোধন পৃঃ ১৪২)

(৩) প্রসিদ্ধ ফাতাওয়ার কিতাব আহসানুল ফাতাওয়ার লেখক জনাব মুক্তী রশীদ আহমদ (রহঃ) লিখেন : মওদূদী চিন্তাধারায় একমত এমন ব্যক্তির ইমামতী মাকরূহে তাহরীমী।

(আহসানুলফাতাওয়া ৩/২৯১)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরির আরো
© All rights reserved © 2019 www.izharehaq.com
Theme Customized BY Md Maruf Zakir