শরীয়ত ঃ উল্লেখিত বর্ণনায় মওদূদী সাহেব দাবী করেছেন, সাহাবাদের যুগ তথা প্রথম শতাব্দির পর কোরআনের তিন চতুর্থাংশেরও বেশী শিক্ষা এমনকি মূল স্পীটই অদৃশ্য হয়ে গেছে। অথচ আল্লাহ নিজেই পবিত্র কোরআন হেফাযতের যিম্মাদারী নিয়ে ঘোষণা করেন,
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আমিই যিকর তথা এ কোরআন নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমিই তা সংরক্ষণ করবো। (সূরা হিজর : ৯) উসূলে ফিকাহ শাস্ত্রবীদগণের মতে,
(নূরুল আওয়ার : ৯ পৃঃ) আর এ এ এ এই আয়াত দ্বারা যেহেতু সমস্ত কোরআন হেফাযতের দায়িত্ব নেয়া হয়েছে, বিধায় তার মধ্যে শব্দ ও অর্থ উভয়টিই সামিল রয়েছে। এজন্য এক শতাব্দি পর পবিত্র কোরআনের অর্থ বিকৃত হওয়া বা আবরণ পড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই । তাছাড়া L এ, এই আয়াতের তাফসীরে আল্লামা আলুসী
(রহঃ) লেখেন, 人 (وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ) أى مِنْ كُلِّ مَا يُقَدَحُ فِيهِ كَالتَّحْرِيفِ وَالزِّيَادَةِ وَالنُّقْصَانِ –
অর্থ : (“এবং নিশ্চয় আমিই তা সংরক্ষণ করবো) তথা অর্থগত বিকৃতি, সংযোজন ও বিয়োজন জাতীয় সব ধরনের ত্রুটি হতে।” (তাফসীরে রুহুল মাআনী : ১৪ পারা ২৪ পৃঃ) অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে,
অর্থ : “সম্মুখ কিংবা পশ্চাৎদিক হতে কোন বাতিল (বিকৃত ও মিথ্যা) এই কিতাবে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা হা-মীম সিজদাহ : ৪২)
হেদায়াত : আমাদের উল্লেখিত প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হলো যে, পবিত্র কোরআনের শব্দ, অর্থ ও আমল পদ্ধতি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সংরক্ষিত ছিল, আছে এবং থাকবে। উহাতে কোন প্রকার বিকৃতি, সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন, সংস্করণ ইত্যাদির কোন অবকাশ নেই।
তারপরও পবিত্র কোরআনের অর্থ বিকৃতির যে দাবী মওদূদী সাহেব তুলেছেন, সেটা মূলত শীয়াদের থেকে ভাড়া করে নেয়া। এজন্য পবিত্র কোরআনের অর্থ বিকৃতির দাবী, শীয়াদের ভাড়াটিয়া গোলাম মি. মওদূদীর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য।
(২) “পবিত্র কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা জায়েয” মওদূদী ঃ “কোরআন শরীফের ‘তাফসীর বির রায়’ বা মনগড়া ব্যাখ্যা করা জায়েয আছে।” (তরজুমানুন কোরআন জমাদিউল উখরা : ১৩৫৫ হিঃ)
শরীয়ত : শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। যারা করবে তারা নিশ্চিত জাহান্নামী হবে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে, مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِرَابِهِ فَلَيَتَبَوَّاً مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
অর্থ : “যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করবে, সে যেন নিজ ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (তিরমিযী শরীফ ঃ ২ঃ১২৩) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِرَابِهِ فَأَصَابَ فَقَدْ اخْطَاً
অর্থ : যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করবে, সে (যদি ঘটনাক্রমে) সঠিক ব্যাখ্যাও করে ফেলে তবুও সেটা ভুল বলে গণ্য হবে । (তিরমিযী শরীফ ঃ ২ঃ১২৩)
হেদায়াত : পবিত্র কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যার যেখানে কোনো অবকাশ নেই, সেখানে মওদূদী সাহেব শুধু এটা বৈধতার ফতোয়া দিয়েই ক্ষান্ত হন নাই; বরং ‘তাফহীমুল কোরআন’ নামক একটি অপব্যাখ্যা গ্রন্থও তিনি লেখেছেন । এই ‘তাফহীমুল কোরআন’ যে- একটি মনগড়া ব্যাখ্যা গ্রন্থ একথা জনাব মওদূদী স্বীকারোক্তিও দিয়ে গেছেন। তিনি এই গ্রন্থের ভূমিকার পূর্বে ‘প্রসঙ্গ কথা’ শিরোনামে লিখেছেন, আমি ‘তাফহীমুল কোরআনে’ কোরআনের শব্দাবলীকে উর্দূর লেবাস পরানোর পরিবর্তে এই চেষ্টাই করেছি যে, কোরআনের বাক্যসমূহ পড়ে যে অর্থ আমার বুঝে এসেছে এবং উক্ত আয়াত সম্পর্কে আমার মনে যে প্রভাব পড়েছে- যথাসাধ্য সঠিকভাবে উহাকে নিজ ভাষায় ব্যক্ত করে দেই।
(তাফহীমুল কোরআন উর্দু : ১৪১০ পৃঃ) সুতরাং পবিত্র কোরআনের মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে মওদূদী সাহেব, হাদীসের ভাষ্যমতে নির্ধারিত ঠিকানাটিই নিজের জন্য পছন্দ করে নিয়েছেন। কতইনা উত্তম তার এই পছন্দ।
(৩) “কোরআনের তাফসীরের কোন প্রয়োজন নেই।”
মওদূদী ঃ (ক) “কোরআন শরীফের ব্যাখ্যার জন্য কোনো তাফসীরের প্রয়োজন নেই। একজন উচ্চস্তরের প্রফেসরই এর জন্য যথেষ্ট।”
(তানকীহাত ঃ ২৯১ পৃঃ)
(খ) “তাফসীরের পুরাতন ভান্ডার হতে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে নেই।”
(তানকীহাত ঃ ১১৪ পৃঃ)
(গ) “কোরআন বুঝার উত্তম পন্থা একমাত্র ইহাই হতে পারে যে, কোরআন বুঝার ইচ্ছা পোষণকারী ব্যক্তি সর্বপ্রথম ইহা জানবে যে, কোরআনের এলহাম তার উপর নাযিল হচ্ছে, (অর্থাৎ সে রাসূল)। অতঃপর ইহা বুঝে কোরআন পাঠ করবে যে- সে নিজেই এ কোরআনকে নাযিল করেছে। (অর্থাৎ, সে স্বয়ং আল্লাহ) আমি (মওদূদী) কোরআন বুঝার জন্য এ পন্থাকেই গ্রহণ করেছি।” (নাওয়ারে পাকিস্তান, লাহোর ৪ঠা সেপ্টেম্বর : ১৯৫৫ইং) শরীয়ত : উল্লেখিত উদ্ধৃতি তিনটিতে মওদূদী সাহেব কয়েকটি দাবী
করেছেন। (১) কোরআনের কোন তাফসীরের প্রয়োজন নেই। (২) কোরআন বুঝার জন্য আলেম হওয়ার প্রয়োজন নেই, একজন প্রফেসরই যথেষ্ট। (৩) তাফসীরের পুরাতন ভান্ডার গ্রহণযোগ্য নয়। (৪)
তাফসীরে বুঝতে হলে নিজেকে রাসূল ও খোদার মতো মনে করতে হবে। ১ম দাবীর জবাব : কোরআনের তাফসীরের প্রয়োজন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وانزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكر لتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نَزِلَ إِلَيْهِم
অর্থ : “আর আমি আপনার প্রতি এ কোরআন অবতীর্ণ করেছি, যেন সেসব বিষয় মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেন, যা তাদের জন্য প্রেরিত হয়েছে।” (সূরা নাহল : 88 )
“এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট জানা গেল, মহানবী (সা.)-এর দায়িত্ব ছিল, কোরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা।”
(কাশফুল বারী শারহুল বুখারী : ১/৪৬ পৃঃ)
এজন্য সমস্ত মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, “দি হাদীস ইজ দি ডিরেক্ট এক্সপ্লে অব দি হলি কোরআন।” অর্থাৎ-হাদীস সরাসরি কোরআনে পাকের ব্যাখ্যা।
২য় দাবীর জবাব : সমস্ত মুফাস্সিরীনে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ১৫টি বিষয়ের ইলম ছাড়া কেহ তাফসীর করলে সেটা মনগড়া তাফসীর হিসেবে গণ্য হবে। (মওদূদীর শিক্ষা-দীক্ষা ও ব্যক্তিত্ব শিরোনামে সেই ১৫টি ইলম উল্লেখ করা হয়েছে।) (তাফসীরে বায়যাবী, ১:৩ পৃঃ) আর একজন প্রফেসর এই ১৫ টি ইলম সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না।
৩য় দাবীর জবাব : “আল্লাহর নির্দেশিত ও নবীয়ে কারীম (সাঃ)-এর বাতানো পথনির্দেশ অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরাম (রা.), তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও মুজতাহিদীন (রহঃ) গণ কোরআন মাজীদের যেরূপ ব্যাখ্যা করেছেন- তা হাদীস ও তাফসীরের পুরাতন ভান্ডারে বিদ্যমান রয়েছে, কোরআন মাজীদের সেরূপ ব্যাখ্যা করা অপরিহার্য। অন্যথায় পদচ্যুত হওয়া অবশ্যম্ভাবী।”
(দাওয়াত : ২৬ পৃঃ)
চতুর্থ দাবীর জবাবে আমরা শুধু এতটুকু বলবো যে, এই ধরনের পাগলের প্রলাপই মওদূদীর পতনকে ত্বরান্বিত করেছে।
হেদায়াত ঃ কোরআনের তাফসীরের যদি কোন প্রয়োজনই না থাকতো তাহলে তিনি নিজেই কেন “তাফহীমুল কোরআন’ লেখেছেন ? আসলে এ ধরনের স্ববিরোধী বক্তব্য তার মাথার সমস্যার কথাই প্রমাণ করে।
(৪) ইসলাম সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য : “ইসলাম কোন ধর্মের নাম নয়”
মওদূদী ঃ لیکن حقيقت یھ ھے کھ اسلام کسی مذھب کا
اور مسلمان کسی قوم کا نام نبی ہے ۔ بلکه دراصل ايك انقلابی نظریه و مسلک ہے
অর্থ : “বাস্তব কথা হল, ইসলাম কোন ধর্মের নাম নয়। মুসলমান কোন জাতির নাম নয়; বরং মূলতঃ ইসলাম একটি বিপ্লবী চিন্তাধারা ও পদ্ধতি এবং মুসলমান সেই আন্তর্জাতিক বিপ্লবী বাহিনীর নাম।” (তাফহীমাত ঃ ১/৭৭ পৃঃ)
শরীয়ত ঃ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, اليوم أكملت لكم دينكم واتممت علیکم نعمتی و رَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلَامَ دِينًا.
অর্থ ঃ “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে- إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللهِ الإِسلام
i অর্থ : “নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম। “
(সূরা আলে ইমরান : ১৯) উল্লেখিত উভয় আয়াতে ইসলামকে ধর্ম আখ্যায়িত করা হয়েছে। হেদায়াত ঃ কোরআন ও হাদীসে সুস্পষ্টভাবে ইসলামকে ধর্ম আখ্যায়িত করার পরও মওদূদী তা অস্বীকার করেছেন। আর কোরআনের স্পষ্ট কোন বিধানকে কেউ অস্বীকার করলে সে মুসলমানই থাকেনা ।
(৫) দ্বীন সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য :
“দ্বীন অর্থ রাষ্ট্র ক্ষমতা”
মওদূদী ঃ (ক) “সম্ভবত দুনিয়ার কোন ভাষায় এত ব্যাপক অর্থবোধক কোন শব্দ নেই যা ‘দ্বীন’ এর পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে পারে। তবে বর্তমান যুগের ইংরেজী শব্দ “স্টেট” দ্বীন এর কাছাকাছি ভাব আদায় করে।” (কোরআন কী চার বুনিয়াদী ইস্তালাহে : ১০৯ পৃঃ)
حکومت کے بغیر دین بالکل ایساہے جیسے ايك (7) عمارت کا نقشہ آپ کے دماغ میں ہومگر عمارت زمین پر موجود نہ ہو ۔ ایسے دماغی نقشے کے ہونے کا فائدہ ہی کیاہے
অর্থ : “রাষ্ট্র ছাড়া দ্বীন অবিকল একটি বিল্ডিংয়ের কাল্পনিক চিত্র। ভূ-পৃষ্ঠে যার অস্তিত্ব নেই, এমন কাল্পনিক চিত্রের ফায়দাটাই বা কি ?”
(গ) “দ্বীন মূলত রাষ্ট্র ও সরকারকেই বলা হয়। শরীয়ত হচ্ছে এর আইন এবং এ-আইন ও নিয়ম প্রথা যথারীতি মেনে চলাকে বলা হয় ইবাদত।”
(খুতবাত ঃ ৩২২ পৃঃ)
(খুতবাত : ৩২০ পৃঃ) শরীয়ত : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللهِ الإِسلام
অর্থ ঃ “ইসলামই আল্লাহর নিকট মনোনীত ধর্ম।” (সূরা আলে ইমরান : ১৯)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يَقْبَلُ مِنْهُ অর্থ ঃ “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম অম্বেষণ করে, তা কখনো কবুল AA
করা হবে না।” (সূরা আলে ইমরান ঃ ৮৫)
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে,
অর্থ : “ইসলামকে তোমাদের ধর্ম মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা : ৩) উল্লেখিত সবগুলো আয়াতে (দ্বীন) শব্দটি ধর্মের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাফসীরের কিতাবসমূহে দ্বীন সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা হল, কোরআনের পরিভাষায় ‘দ্বীন’ সেসব মূলনীতি ও বিবিধ বিধানকে বলা হয়, যা হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সব পয়গম্বরের মধ্যে সমভাবেই বিদ্যমান রয়েছে। ..এতে বুঝা যায়, সব পয়গাম্বরের দ্বীনই এক ও অভিন্ন ছিল। অর্থাৎ আল্লাহর সত্তার যাবতীয় পরাকাষ্ঠার অধিকারী হওয়া এবং সমুদয় দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র হওয়া এবং তাকে ছাড়া কেউ উপাসনার যোগ্য না হওয়ার প্রতি মনে প্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করা ও মুখে স্বীকার করা, কিয়ামত দিবস, হিসাব-নিকাশ, পুরস্কার ও শাস্তিদান এবং জান্নাত ও দোযখের প্রতি অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করা ও মুখে স্বীকার করা, আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূল ও তাদের বিধানের প্রতিও তেমনিভাবে ঈমান আনা।” (তফসীরে মাজারেফুল কোরআন, সৌদী ছাপা ঃ ১৬৮ পৃঃ)
উক্ত তাফসীরের দ্বারা এ কথা পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল যে, ‘দ্বীন’ শব্দটি পবিত্র কোরআনে শরীয়তের বিধি-বিধান ও ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক –
আকিদা-বিশ্বাসের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বীন সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে
ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبَّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وبمحمد رسولا – (رواه مسلم ومشكوة (۱۲)
অর্থ : “যে ব্যক্তি আল্লাহকে তার প্রভু, ইসলামকে তার ধর্ম এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-কে তার নবী হিসেবে মেনে সন্তুষ্ট রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে।” (মুসলিম ও মিশকাত ঃ ১২ পৃঃ) অন্য হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে,
ياتيه ملكان فيجلسانه فيقولان له من ربك فيقولُ ) رَبِّيَ اللهُ – فَيَقُولَانِ لَهُ مَا دِينَكَ فَيَقُولُ دِينِى الإسلام
فَيَقُولَانِ مَا هَذَا الرجل الذي بعث فِيكُمْ ـ فيقولُ هُوَ علیہ وسلم . رسول اللہ صلی الله .
অর্থ ঃ “(কবরে) প্রত্যেকের কাছে দুইজন ফেরেস্তা আগমন করেন, অতঃপর মৃত ব্যক্তিকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রভু কে ? সে জবাব দেয় (যদি মুমিন হয়) আমার প্রভু আল্লাহ। তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার ধর্ম কি ? সে জবাব দেয়, আমার ধর্ম ইসলাম। তারপর জিজ্ঞেস করা হয়, এই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল ? সে জবাব দেয়, তিনি আল্লাহর রাসূল (সা.)।” (আবু দাউদ শরীফ ও মুসনাদে আহমদ)
উল্লেখিত হাদীস দুটিতেও ‘দ্বীন’ শব্দটি ধর্মের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। হেদায়াত ঃ উপরোল্লেখিত উদ্ধৃতিসমূহ ছাড়াও কোরআনের বহু আয়াত এবং রাসূল (সা.)-এর বহু হাদীস দ্বারা এ কথা সূর্যের আলোর চেয়েও আরো বেশি পরিষ্কার যে, ‘দ্বীন’ অর্থ ধর্ম তথা ইসলাম। আর দ্বীনের মৌলিক বিষয় হল, ইসলামের বিধি-বিধান। অর্থাৎ ঈমান, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত। আর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্ এবং সিয়াসতে ইসলামিয়্যাহ সহ অন্যান্য সব বিধি-বিধান হল নিজ নিজ পজিশন ভেদে শাখা-প্রশাখা ।
মোটকথা— দ্বীন তথা ইসলাম হল একটি ফলবান বৃক্ষের ন্যায়। ঈমান, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এগুলো হল সেই বৃক্ষের মূল ও কান্ড। আর জিহাদ, সিয়াসত ইত্যাদি হল সেই বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা, ফল, ফুল, পল্লব। কিন্তু মওদূদী সাহেব অসৎ উদ্দেশ্যে ইসলামের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দেয়ার জন্যে মূলকে শাখা এবং শাখাকে মূল আখ্যায়িত করেছেন। এটা ইসলামের বিরুদ্ধে অতি সুক্ষ্ণ ও গভীর ষড়যন্ত্র। এর থেকে প্রমাণ হয় মি. মওদূদী ইসলামের কত বড় দুশমন ছিলেন।
(৬) মহানবী সা. সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য ঃ
(১) “মহানবীর রেখে যাওয়া ইসলাম অসম্পূর্ণ”
মওদূদী ঃ “হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতের দায়িত্ব আদায় করতে ভুল- ত্রুটি করেছেন এবং তিনি যে দ্বীন আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন তা পরিপূর্ণ নয়, অসম্পূর্ণ।” (তাফহীমুল কোরআন ঃ তাফসীরে সূরা নাছর)
শরীয়ত ঃ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتی
ورضيت لكم الإسلام دينا
অর্থ : আজ তোমাদের জন্য তোমারে ধর্ম পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম। (সূরা য়িদা : ৩)
এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে,
“এ আয়াত……… ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানের জন্যে বিরাট সুসংবাদ, অনন্য পুরস্কার ও স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর বহন করে। এ বিষয়বস্তুর সারমর্ম এই যে, পৃথিবীতে মানব জাতিকে সত্য দ্বীন ও খোদায়ী নেয়ামতের চুড়ান্ত মাপকাঠি প্রদানের যে ওয়াদা ছিল, আজ তা ষোলকলায় পূর্ণ করে দেয়া হলো ।……… আজ যেন সেই ধর্ম ও নেয়ামত পরিপূর্ণ আকারে শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর উম্মতকে প্রদান করা হল।” (তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন : ৩০৯) এ সম্পর্কে আকায়িদের কিতাবে বলা হয়েছে,
“রাসূল (সা.)-এর শরীআত সকল শরীআতের চেয়ে কামেল ও পূর্ণাঙ্গ। আর শরীআত পূর্ণাঙ্গ ও কামেল হওয়া নবুওয়াত কামেল হওয়ার প্রমাণ বহন করে।” (ইসলামী আক্বিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ : ৮৪ পৃঃ)
হেদায়াত : উপরোক্ত প্রমাণাদির দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন। তাই মহানবী (সা.) একজন সফল নবী ও রাসূল। কিন্তু মি. মওদূদী মহানবীর নবুয়াতকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের পাগলের প্রলাপ বকেছেন। অথচ বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (সা.), সোয়া লক্ষ সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন,
Kal, ‘আমি কি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নবুওয়াতের দায়িত্ব পূর্ণ করতে পেরেছি ?’ তখন সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম স্বীকৃতি দিয়ে বললেন, ৮। এ ‘হ্যাঁ ! অবশ্যই আপনি নবুওয়াতের দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গ করেছেন।’
সোয়ালক্ষ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যেখানে মহাবীকে সফল নবীর স্বীকৃতি দিলেন, সেখানে মি. মওদূদী তাকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছেন। নবীর দুশমনি করে আবার তার উম্মতের দাবী করা মওদূদীর মত রাসূল বিদ্বেষীর মুখে মানায় না ।
(২) “মহানবী (সা.) মনগড়া কথা বলেছেন”
মওদূদী : “মহানবী (সা.) মনগড়া কথা বলেছেন এবং তিনি নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ করেছেন।”
(তরজুমানুল কোরআন, রবিউল আঃ সংখ্যা ঃ ১৩৬৫ হিঃ)। শরীয়ত : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
ވ وما ينطق عن الهوى – إن هو إلا وحي يوحى –
অর্থ : “মহানবী (সা.)] মনগড়া কোন কথা বলেন না। ওহীর মাধ্যমে যা প্রত্যাদেশ করা হয়, সেটাই তিনি বলেন, ”
(সূরা নাজম : ৩-৪)
পবিত্র কোরআনের সরাসরি ঘোষণার পরও এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
হেদায়াত : মহানবী (সা.) মনগড়া কথা বলেন, এটা ছিল আরবের মুশরিকদের দাবী। আর ১৪ শত বছর পর সেই মুশরিকদের এক অনুচর পাকিস্তানে বসে এই দাবী পুনরাবৃত্তি করলেন মাত্র। এতে মনিব ও গোলামের পরিপূর্ণ সাদৃশ্যতাই প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য আশ্চর্যের কিছু নেই। ফতোয়ার কিতাবে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে দোষারোপ করবে কিংবা ত্রুটিযুক্ত মনে করবে, সে কাফির হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে।” (ফতোয়ায়ে শামী : ৪/২৩৪ পৃঃ)
(৩) “মহানবী সা. মানবিক দুর্বলতায় লিপ্ত ছিলেন”
মওদূদী ঃ
وه نه فوق البشر ہے – نه بشری کمزوریوں سے بالاترھے
অর্থ : তিনি [মহানবী (সা.)] না মানব ঊর্ধ্বের ছিলেন, না মানবিক দুর্বলতা মুক্ত ছিলেন। (অর্থাৎ তিনি মানবিক দুর্বলতার বশবর্তী হয়ে গুনাহ করেছিলেন।) (তরজুমানুল কোরআন ৫৮, সংখ্যা এপ্রিল ১৯৭৬)
শরীয়ত : উক্ত উদ্ধৃতিতে মওদূদী সাহেব মহানবী (সা.) সম্পর্কে মানবিক দুর্বলতার দোহাই দিয়ে তাকে পাপিষ্ট বানানোর ষড়যন্ত্র করেছেন। অথচ আকায়িদের কিতাবসমূহে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,
ولم يرتكب النبي صلى الله عليه وسلم صغيرة وَلَا كَبِيرَةً قَدُّ يَعْنِى قَبْلَ النَّبوة وبعدها –
অর্থ ঃ “নবীয়ে কারীম (সা.) নবুওয়াতের আগে ও পরে সগীরা এবং কবীরা কোন ধরনের গুনাহ করেন নি।” (শরহুল ফিকহিল আকবর ঃ ১৬ পৃঃ) মোল্লা আলী কারী (রহঃ) মেরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থে বলেন,
عِصْمَةُ الأَنْبِيَاءِ مِنَ الكَبَرِ وَالصَّغَائِرِ قَبْلَ النُّبُوَّةِ وبعدها
অর্থ : “রুওয়াতের আগে পরে নবীগণ সগীরা কবীরা সব ধরনের গোনাহ
থেকে পবিত্র।” (মিরকাত : ১/২৪৪ পৃঃ বাবু ঈমান বিল কাদরী) তাছাড়া তরজুমানুস সুন্নাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “মহানবী (সা.) মানবিক
দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন।” (তরজুমানুস সুন্নাহ ঃ ৩/৩০৫ পৃঃ) হেদায়াত : আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা পরিপন্থী মওদূদীর মন্তব্যের দ্বারা তাকে সালমান রুশদীসহ সকল যুগের নবী বিদ্বেষীদের অনুসারীই বুঝা যাচ্ছে।
(৪) “যোগ্য সাহাবী না পেলে মহানবী সফল হতেন না”
মওদূদী : নবী করীম (সা.)-এর আরবে যে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন হয় এবং যার প্রভাব ও নিবিড় ছোঁয়া অল্পদিনের মধ্যেই ভারত মহাসাগর থেকে নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত- দুনিয়ার এক বিশাল জনপদ অনুভব করল, এর কারণ তো এই ছিল যে, তার আরবে উত্তম জনশক্তি মিলে গিয়েছিল, যাদের মাঝে আকর্ষণের প্রবল প্রতিভা বর্তমান ছিল। আল্লাহ না করুন যদি তাঁর হীনবল, কমহিম্মত, ক্ষীণ ইচ্ছা ও অনাস্থাশীলদের পাল মিলে যেত, তাহলে কি তিনি সেই চমৎকারিত্ব দেখাতে পারতেন ? (ইসলামী নেযামে যিন্দেগী : ২৬ পৃঃ)
শরীয়ত : মওদূদী সাহেব এখানে যেই দাবী করেছেন, এতে বুঝা যায়, মহানবীর সাফল্য তার যোগ্য সাহাবায়ে কেরামেরই ফসল। অন্যথায় তিনি। (নাউযুবিল্লাহ) ব্যর্থ হতেন। এজন্য সাফল্যের রাজ মুকুট মহানবীর নয়, বরং সাহাবাদের প্রাপ্ত ছিল।
অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, একট
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য নিশ্চিত বিজয় দান করেছি।”
(সূরা ফাতাহ : ১)
এখানে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, অর্থাৎ- নবী আপনার জন্য আমি এই বিজয় দান করেছি। আর যদি সাফল্যের চাবিকাঠি সাহাবায়ে কেরামেরই শুধু হতেন, তাহলে SJ Li বলার প্রয়োজন হতো ।
পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
وَمَا رميت إذ رميت ولكن الله رمى
অর্থ : “এবং তুমি যখন নিক্ষেপ করেছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ করোনি, বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন।” (সূরা আনফাল : ১৭)
এখানেও আল্লাহ তায়ালা বলে, শুধু মুহাম্মদ (সা.)কে সম্বোধন করেছেন। বলার প্রয়োজন মনে করেননি। এতে প্রমাণিত হয়,
সাহাবায়ে কেরামের এই মহান কাফেলা না থাকলেও আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)কে এই মহাবিজয় দান করতেন।
হেদায়াত : এখানে মি. মওদূদী মহানবীর মহাবিজয়ের রাজমুকুট ছিনিয়ে
নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টার দ্বারা যেই বেয়াদবী করেছেন, তা অমার্জনীয়। আল্লাহ মালুম
এ ধরনের বেয়াদবের শাস্তি কিরূপ হবে।
where to buy valtrex 1g
synthroid 0.025
cilias
where to get valtrex
can you buy azithromycin over the counter nz
generic tadalafil india
synthroid 0.5 mcg
how much is valtrex
prednisone 300 mg
happy family drugs
synthroid 300 mcg tablets
valtrex prescription uk
tadalafil prescription cost
valtrex 3000 mg
mail order cialis
can i order azithromycin online without prescription
cheapest price for synthroid