উল্লিখিত রেফারেন্সসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়, নবীগণ সকল প্রকার পাপ থেকে পূত-পবিত্র ছিলেন। (৩) ইরশাদ হচ্ছে,
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।”
উক্ত আয়াতে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে, আর কারো আনুগত্য করতে হলে তার যাবতীয় কর্মকান্ড অনুসরণ করতে হবে। এখন নবীগণ যদি পাপীই হন, তাহলে একজন পাপীর নিঃশর্ত অনুসরণের দ্বারা কিভাবে আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি দিলেন ? এতে বুঝা যায়, নবীদের দ্বারা পাপ সম্ভব নয়।
অর্থ ঃ “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।” (সূরা ফাতাহ : ৮ )
এখানে নবীকে সাক্ষী বানানো হয়েছে, নবী যদি নিজেই পাপী হন, তাহলে উম্মতের পাপের সাক্ষী দিবেন কোন্ সাহসে ?
(৫) ইরশাদ হচ্ছে, AD عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يظهر على غيبِهِ احَدًا – الا من い ارتضى مِن رسول – অর্থ ঃ তিনি অদৃশ্য বিষয়ে অবগত। তিনি তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত আর
অর্থ ঃ “তারা (নবীগণ) অবশ্যই আমার নিকট মনোনীত সন্তোষভাজন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা ছোয়াদ : ৪৭)
এই দুই আয়াতে রাসূলগণকে আল্লাহর সন্তোষভাজন এবং মনোনীত ও নির্বাচিত বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। আর কোন গোনাহগার বা পাপিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর মনোনীত ও নির্বাচিত হতে পারে না।
এরকম আরো অসংখ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী রাসূলগণ মাছুম ও নিষ্পাপ ছিলেন। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সেগুলো এখানে উল্লেখ করা গেলো না। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) এর Lusis এবং আল্লামা ইদ্রীস কান্দলভী (রহঃ)-এর এ ১। আল্লামা ইসহাক ফরিদী (রহঃ)-এর ‘ইসমতে আম্বিয়া’ গ্ৰন্থসমূহ।
বাকি কথা হলো, মওদূদী সাহেব বলেছেন, নবীরাও মানুষ একথা প্রমাণের জন্য আল্লাহ নবীদের দ্বারা পাপ কাজ করিয়েছেন। এর চেয়ে মূর্খতাসূলভ ও হাস্যকর কথা আর কি হতে পারে ? কেননা, নবীরা মানুষ একথা প্রমাণের জন্য তাদের বিবাহ, সন্তানাদী, খাওয়া, ঘুম ইত্যাদিই কি যথেষ্ট নয় ? হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَلَقَدْ أتَيْنَا إِبْرَاهِيمَ رشده من قبل وكنا به علمين
অর্থ : “আর ইতিপূর্বে আমি ইব্রাহিমকে তার সৎ পন্থা দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত ও ছিলাম।” (সূরা আম্বিয়া ঃ ৫১) আল্লাহ যাকে সৎ পন্থা তথা হেদায়াতের প্রতিশ্রুতি দিলেন, মওদূদী সাহের তার মধ্যে শিরকের ঘ্রাণ পেয়ে গেলেন। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হতে
পারে ? হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يُدَاوُدُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِى الْأَرْضِ فَاحْكُمُ بَيْنَ . النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الهَوى فَيُضِلّكَ عَنْ سَبِيلِ اللّهِ.
অর্থ ঃ “হে দাউদ ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি-
অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।”
(সূরা ছোয়াদ : ২৬)
এখানে দাউদ (আঃ)-কে সরাসরি প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তারপরও কি কোন নবীর পক্ষে প্রণতির তাড়নায় কারো প্রতি আসত হওয়ার কোন অবকাশ ছিল ? কখনো না। যদি দাউদ (আঃ) দ্বারা এমন
কিছু হতো, তাহলে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী তাকে সরল পথ হতে বিচ্যুত হতে হতো। অথচ এমন কিছু হওয়ার তো প্রশ্নও উঠে নাই।
কিন্তু মি. মওদূদী দাউদ (আঃ) সম্পর্কে ইসরাঈলী একটি বানোয়াট বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, মহান নবীর ইজ্জত নিয়ে যেই টানা হেচড়া করেছে, তার মত দুঃখজনক ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে কয়টি ঘটেছে আল্লাহ মালুম। এখানেই শেষ নয়, তার সুযোগ্য পুত্র হযরত সুলাইমান (আঃ) কে মওদূদী জারজ সন্তান বানানোরও পাঁয়তারা করেছে। অথচ সুলাইমান (আঃ) কে আল্লাহ তা’য়ালা সারা পৃথিবীর রাজত্ব দান করেছিলেন।
হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, وَلَمَّا بَلَغَ الـ اشده واستوى أتَيْنَهُ حَكَمًا وَ عِلْمًا – وَكَذَالِكَ نَجْزِى المُحْسِنِينَ .
অর্থ : “যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরা কাসাস : ১৪)
এই আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা মূসা (আঃ)-কে সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্ত
র্ভুক্ত করেছেন। আর মওদূদী সাহেব মূসা (আঃ)-কে পাপী খুনী বান্দাদের অন্ত
ভুক্ত করেছেন। এখন পাঠক দেখুন, কার বিচার মানবেন।
এভাবে সমস্ত নবীদের নিষ্পাপের অসংখ্য প্রমাণ পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রত্যেক নবীর জন্য আলাদা আলাদা আলোচনা করতে গেলে, মুস্তাক্কেল একটি কিতাবে পরিণত হবে। তাই আমরা পবিত্র কোরআনের এমন একটি আয়াত উল্লেখ করছি যার মধ্যে সমস্ত নবীদের ইসমতের দাবী করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
وَإِنَّهُم عِندَ نَا لمن المصطفين الاخيار . অর্থ ঃ “আর তারা (সমস্ত নবীরা) আমার কাছে মনোনীত ও সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা ছোয়াদ : ৪৭)
হেদায়াত : আমাদের উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সমস্ত নবী-রাসূল (আঃ) গণ মাছুম ও নিষ্পাপ ছিলেন। তাদের দ্বারা ছোট-বড় কোন গোনাহ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এজন্য মুফতী শফী (রহঃ) বলেছেন, “নবীগণ (আঃ) কে গোটা মানবজাতির অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল। যদি তাদের দ্বারা ছোট-বড় কোন পাপ কাজ সম্পন্ন হত,
তাহলে নবীদের কথা ও কাজের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে এবং তাঁরা আস্থাভাজন থাকবেন না। আর যদি তাঁদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস না থাকে, তাহলে দ্বীন ও শরীয়তের স্থান কোথায় ?” (মাআরিফুল কোরআন)
রাসূল (সাঃ) বলেন, সূদের সত্তরটিরও বেশী স্তর রয়েছে। এইগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন ও হালকা স্তরটি নিজের মায়ের সহিত জেনা করার সমতুল্য । আর সূদের একটি দেরহাম পঁয়ত্রিশবার জেনার চেয়েও অধিক মারাত্মক। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও সবচেয়ে ঘৃণ্যতম সূদ হল মুসলমানদের ইয্যত সম্মান নষ্ট করা ।
(ফাযায়েলে রমযান ঃ ৪৫-৪৬ পৃঃ) প্রিয় পাঠক ! ইতিহাসের জঘন্যতম বেয়াদব, মুসলিম নামের কলঙ্ক, কুখ্যাত মি. মওদূদী শুধু সাধারণ মুসলমানদের ইজ্জত সম্মান নষ্ট করেননি, বরং মানবকুলের শ্রেষ্ঠ মনীষী তথা আম্বিয়ায়ে কেরামের ইজ্জত নষ্ট করেছে। তাহলে এবার বলুন, মি. মওদূদীর এই অমার্জনীয় বেয়াদবীর কারণে- সে তার নিজের মায়ের সহিত কতবার যিনা করার পাপ অর্জন করেছে। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে কবর ও হাশর উভয় জগতে তার প্রাপ্য বদলাই দান করুন। আমীন !