1. info@izharehaq.com : MZakir :
রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মুখোশ উন্মোচন (মওদূদী মতবাদ) আহলে সুন্নতের ফিক্বাহ শাস্ত্রের ইমাম: ইসলামী আমলের ক্ষেত্রে বিদয়াতীদের চক্রান্ত আহলে সুন্নতের আক্বীদামতে মহানবীর মর্যাদা: অতি ভক্তি কিসের লক্ষণ রেজভীদের চক্রান্ত হুবহু ইবনে সাবার চক্রান্তের মত: রাসূলকে আলিমুল গাইব বলা সাবায়ী চক্রান্ত: আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’ত সুবিন্যস্ত হওয়ার ইতিহাস কুরআন ও হাদীসের ভাষায় ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথ: নবুওয়াত ও রিসালত: মওদুদীবাদ ইবাদত: মওদুদীবাদ কুরআন মাজীদ ও দ্বীনের সংরক্ষণ: কুরআন সংরক্ষণের অর্থ: কুরআন সংরক্ষণে খোদায়ী ব্যবস্থাপনা: মওদুদীবাদ দ্বীন কী? দ্বীনে নূহ: দ্বীনে ইব্রাহীম: দ্বীনে ইসমাঈল: দ্বীনে ইউসুফ: দ্বীনে মূসা: দ্বীনে ঈসা: মওদূদীবাদ মওদুদী সাহেবের শিক্ষা-দীক্ষার পরিধি গোয়েবলসীয় নীতি : হিটলারের ঐ মুখপাত্রও ”জামাত-শিবিরের মিথ্যাচারের কাছে হার মানায়”: পর্ব ১ ইক্বামাতে দ্বীনের তাৎপর্য এবং বাতিলপন্থীদের বিকৃত ব্যাখ্যা সাহাবাগণ রাঃ সত্যের মাপকাঠি এবং তাদের ইজমা সর্বসিদ্ধান্ত মতে শরীয়তের দলীল সাহাবা রাঃ গণ সত্যের মাপকাঠি খোলাফায়ে রাশেদীনগণের সোনালী আদর্শ সর্বসম্মতিক্রমে শরিয়তের দলীল শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: “তাঁরাই সত্যের মাপকাঠি” শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: সাহাবায়ে কেরাম “সত্যের মাপকাঠি: মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৬ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৫

আম্বিয়ায়ে কিরাম সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য: “নবীগণ নিষ্পাপ নন বরং খবীছ নফ্স দ্বারা আক্রান্ত”

নাম:
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে
(৭) আম্বিয়ায়ে কিরাম সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য ঃ “নবীগণ নিষ্পাপ নন বরং খবীছ নফ্স দ্বারা আক্রান্ত”
মওদুদী ঃ (ক) Spells of hall pople clit cas لوازم ذات سے نہیں اور ایک لطیف نکتہ یہ ہے کے الله تعالی نے بالارادہ ہر نبی سے کسی نہ کسی وقت حفاظت الهاكر ايك دو لغزشیں ہوجانے دی ہے تا کہ لوگ انبیاء کوخدانه سمجهیں اور جان لی که یه بهی بشرہے ۔
অর্থ ঃ “নিষ্পাপ হওয়া আম্বিয়া (আঃ)-এর জন্য আবশ্যকীয় নয়। এতে এমন একটি সূক্ষ্ম রহস্য বিদ্যমান আছে যে, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছাপূর্বক প্রত্যেক মুদ্রণ, নবী থেকে কোন না কোন মুহূর্তে স্বীয় হিফাযত উঠিয়ে নিয়ে তাদের থেকে দু’একটি পদস্খলন হতে দেন। যাতে লোকেরা তাদেরকে খোদা মনে না করে এবং বুঝে নেয় যে, তারাও মানুষ।” (তাফহীমাত : ২/৫৭ 18) ৬ষ্ঠ পাকিস্তান।
(খ) “নবীগণ বহুবার খবীস নফসের আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন।”
(তাফহীমাত ঃ ১/১৬৩ পৃঃ) (গ) “(নবী হউক সাহাবী হউক) যদি কোন ব্যক্তির সম্মান প্রদর্শনের জন্য জরুরী হয় যে, তার উপর কোন দিক থেকে সমালোচনা করা না হোক, তাহলে আমরা একে সম্মান প্রদর্শন মনে করি না; বরং মূর্তিপূজা মনে করি। আর এই মূর্তিপূজাকে মিটিয়ে ফেলা মোটামুটি এসব পরিকল্পনার এক বিশেষ পরিকল্পনা, যেটিকে জামায়াতে ইসলামী তার দৃষ্টিতে রাখছে।”
(তরজুমানুল কোরআন ঃ ৩২৭ পৃঃ) (ঘ) “কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেননি; বরং তাঁরা আপন মানবীয় দুর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।”
(তাফহীমুল কোরআন ঃ ২/৩৪৪ পৃঃ)
(3) “মানবাত্মার মাঝে এটা এমন এক অদম্য শক্তি যা বেশির ভাগ সময় তাঁর চিন্তা-চেতনায় ছেয়ে যায় এবং অনেক সময় তাকে জেনে বুঝে ভুল পথে পরিচালিত করে। সাধারণ মানুষতো দূরের কথা, বড় বড় মনীষীও যারা আপন জ্ঞানে-গুণে, বিবেক বুদ্ধিমত্তা ও বোধ-বিচক্ষণতার দিক থেকে যুগের বিস্ময় হয়েছেন, এই দস্যূর আক্রমণ থেকে বেঁচে থেকে কামিয়াব হতে পারেননি। এমনকি অনেক সময় পয়গাম্বরগণেরও এই দুরাত্মার ভীতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।” (তাফহীমাত ঃ ১/১৭৪ পৃঃ)
(চ) হযরত দাউদ (আঃ)-এর সম্পর্কে তাফহীমাতে বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে মওদূদী সাহেব লিখেছেন,
“একদিন অপরাহ্নে দাউদ নিজ প্রাসাদের ছাদে পায়চারী করছিলেন। এই সময় স্নানরত এক পরমা সুন্দরী রমণীর উপর তার দৃষ্টি পড়ল। দাউদ খোঁজ নিলেন মহিলাটি কে ? জানা গেল, সে এলিয়ামের কন্যা ও উরিয়াহিত্তার স্ত্রী বাতসাবা। দাউদ বাতসাবাকে ডেকে পাঠালেন এবং রাতে নিজের কাছে রাখলেন। সেই রাতেই সে গর্ভবতী হয়ে গেল। পরে সে দাউদকে নিজের গর্ভবতী হওয়ার কথা জানিয়ে দিল। এরপর দাউদ উরিয়াকে উয়াবের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। উয়াব তখন বনী আমুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল- এবং রাব্বা নগরীকে অবরোধ করে সেখানে অবস্থান করছিল। দাউদ উয়ারকে লিখলেন যে, রণাঙ্গনের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ স্পেনে চলছে, সেখানে তাকে নিয়োগ কর এবং তারপর তাকে একাকী রেখে সরে যাও, যাতে সে নিহত হয়। উয়ার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করল এবং উরিয়া নিহত হল। এভাবে উরিয়াকে খতম করার পর দাউদ ঐ মহিলাকে বিয়ে করলেন এবং তার পেট থেকেই হযরত সোলায়মান (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন। (নির্বাচিত রচনাবলী : ২/৬০ পৃঃ)
এরপর মওদূদী সাহেব লেখেন, “এ ধরনের ঘটনার সব সময় দু’টো সম্ভাবনা থাকে এবং দুটোই সমান শক্তিশালী। এমনও হতে পারে যে, একজন মানুষ তার ভাললাগা মহিলাকে পাওয়ার কোন চেষ্টাই করেনি। কিন্তু সে বিধবা হওয়ার পর কোন নৈতিক ও আইনগত বাধা না থাকায় তাকে বিয়ে করেছে। আবার এমনও হতে পারে যে, সে তাকে পাওয়ার জন্য অন্যায় চেষ্টা তদবিরে লিপ্ত। এই দু’টো সম্ভাবনার একটিকে অপরটির উপর নিশ্চিতভাবে অগ্রগণ্য মনে করা সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া সম্ভব বা সমীচীন নয়।”
(নির্বাচিত রচনাবলী : ২/৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা)
মওদূদীর অবাধ্য কলমের এ ধরনের চরম গোস্তাথীপূর্ণ কথার উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে, আমার কলম বার বার থেমে যাচ্ছে। কিন্তু জাতির কাছে তার বাতিল মতাদর্শকে তুলে ধরার অভিপ্রায়ে সামনে অগ্রসর হতে বাধ্য হলাম।
নবীগণের ইসমত প্রসঙ্গে মওদূদী সাহেবের এ বিষাক্ত কাল থাবার উপর চতুর্দিক থেকে যখন ভর্ৎসনা ও ধিক্কার আরম্ভ হল, তখন স্বীয় দাবিকে বহাল রাখার উদ্দেশ্যে, বেয়াদব মওদূদী আম্বিয়ায়ে কিরামের গোনাহের একটি সূচী প্রণয়ন করে। যার কিছু অংশ নিয়ে দেয়া হল।
(১) “হযরত আদম (আঃ) মানবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তার জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে তিনি আনুগত্যের উচ্চশিখর হতে নাফরমানীর অতল গহ্বরে নিপতিত হন।” (তাফহীমুল কোরআন : ৩/১৯৩ পৃঃ)
(২) “হযরত নূহ (আঃ) চিন্তাধারার দিক দিয়ে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়্যাতের জয়বা স্থান পেয়েছিল।” (তাফহীমুল কোরআন ঃ ২/৩৪৪ পৃঃ)
(৩) (ক) “হযরত ইবরাহীম (আঃ) ক্ষণিকের জন্য শিরকের গোনাহে নিমজ্জিত ছিলেন।” (তাফহীমুল কোরআন : ১/৫৫৮ পৃঃ)
(খ) “আল্লাহর হুকুমত কায়েম করার যেই মিশন দিয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে পাঠানো হয়েছিল, তিনি তা পূর্ণ করতে পারেননি। আংশিক করার পর ব্যর্থ হয়েছেন।” (তাজদীদ ও ইহয়ায়ে দ্বীন ঃ ২২ পৃঃ)
(৪) “হযরত ইউসুফ (আঃ) শুধু খাদ্যমন্ত্রী পদের আবেদন করেন নি, যেমনটি কেউ কেউ মনে করেন বরং এটা ডিক্টেটরশিপের আবেদন ছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে সায়্যিদুনা ইউসুফ (আঃ)-এর যে পজিশন অর্জন হয়, তা কাছাকাছি সেই পজিশন ছিল যা আজকাল ইতালির মসোলিনির রয়েছে।”
(তাফহীমাত : ২/১২৮ পৃঃ) (৫) (ক) “হযরত দাউদ (আঃ) এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাকের দরখাস্ত করেছিলেন। “
(তাফহীমাত : ২/৪২ পৃঃ)
(খ) “যে কর্মকান্ড দাউদ (আঃ) থেকে প্রকাশ পেয়েছিল, তার মাঝে রিপুর তাড়নারও কিছুটা দখল ছিল। আর ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। আর তা এমন কর্মকান্ড ছিল যা হকের সাথে শাসনকারী কোন শাসকের জন্য সমীচীন নয়।” (তাফহীমুল কোরআন : ৪/৩২৭ পৃষ্ঠার ২৮ নং পাদটিকা)
(গ) “হযরত দাউদ (আঃ) যা কিছু করেছিলেন যদিও তা বনী ইসরাঈলের এখানে সাধারণ নীতি ছিল। আর সেই রীতিতে প্রভাবিত হয়ে তার থেকে অঘটন কিছু একটা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যেহেতু দামী মানুষের কাজ ছিল- এজন্য গেল গেল রব পড়ে গেল।” (তাফহীমাত : ২/৪৮ পৃঃ)
(৬) (ক) “হযরত ইউনুছ (আঃ) ঠিকমত নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করেন নি। সম্ভবতঃ তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্দিষ্ট সময় আসার পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করেন।” (তাফহীমুল কোরআন : ২/৯৯ পৃঃ) (খ) “হযরত ইউনুছ (আঃ) যখন রিসালাতের দায়িত্ব আদায়ে অবহেলা।
করলেন এবং আল্লাহর নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নিজে স্বস্থান থেকে হটে গেলেন,
তখন আল্লাহ তা’য়ালার ইনসাফ এই জাতিকে আযাবে ফেলা পছন্দ করেনি।”
(তাফহীমুল কোরআন ঃ ২/৩১২ পৃঃ) তৃতীয় এডিশন। (৭) “হযরত মূসা (আঃ) খুব বড় একটা গোনাহ করেছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে কতল করে ফেলেন।” (রাসায়েল ও মাসায়েল : ১/৩১ পৃঃ)
(৮) (ক) “হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুওয়াতের দায়িত্ব আদায় করতে ভুল- ত্রুটি করেছেন এবং তিনি যে দ্বীন আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন তা পরিপূর্ণ নয় অসম্পূর্ণ।” (তাফহীমুল কোরআন : তাফসীরে সূরা নাছর)
(খ) “আরবের মত উপযুক্ত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলেই তো হুজুর (সাঃ)
সফলকাম হয়েছিলেন, অন্যথায় কি তিনি এ সফলতা লাভ করতে পারতেন।”
(আখলাকী বুনিয়াদ : ১০পৃঃ) (গ) “মহানবী (সাঃ) না মানব ঊর্ধ্বে ছিলেন না মানবিক দুর্বলতা মুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ তিনি মানবিক দুর্বলতার বশবর্তী হয়ে গুনাহ করেছিলেন। (তরজুমানুল কোরআন : ৫৮ সংখ্যা, এপ্রিল ১৯৭৬)
(ঘ) “মহানবী (সাঃ) মনগড়া কথা বলেছেন এবং তিনি নিজের কথায়
নিজেই সন্দেহ করেছেন।”
(তরজুমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল : সংখ্যা ১৩৬৫ হিজরি) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী আম্বিয়ায়ে কেরামকে মওদূদী যেভাবে আঘাত করেছে, তা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর হাজার বছরের দুশমন ইহুদী খ্রিষ্টানদের থেকেও কল্পনা করা যায় নি। সবচেয়ে দুঃখ ও পীড়াদায়ক কথা হল, সৃষ্টিকুলের সেরা মনীষী, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী, নবীকুল শিরোমনী মহানবী (সাঃ)ও তার আক্রমণ থেকে মুক্তি পেলেন না। তার এ সমস্ত অবাধ্য ও চরম বেয়াদবীপূর্ণ কথার জবাব দেয়ার ভাষা আমাদের কলমে নেই। তবে শুধু মাওলা পাকের কাছে এর বিচার কামনা করি।
শরীয়ত : মওদূদীর পূর্বোক্ত বক্তৃতাসমূহ দ্বারা বুঝা যায়, নবীদের মাধ্যমে গোনাহ হওয়া সম্ভব। অনেক নবীরা বিভিন্ন ধরনের গোনাহের কাজ করেছেন। এমনকি কোন কোন নবী (নাউযুবিল্লাহ) যিনাও করেছেন।
আসলে কি তাই । আগুন বিষয়টি একটু তলিয়ে দেখি এবং এ সম্পে
আমাদের আশ্বিদা-বিশ্বাস কি হওয়া উচিত তা জেনে নেই।
(১) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, وما ارسلنا من رسول إلا ليطاع باذن الله –
অর্থ ঃ “বস্তুত আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে
আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের অনুসরণ করা হয়।” (সূরা নিসা : ৬৪)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামকে আল্লাহ তা’য়ালা নিজ নিজ উম্মতদের অনুসরণের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন। আর যাকে অনুসরণের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, তিনিই যদি অন্যায় ও পাপ কাজে লিপ্ত হন, তাহলে তাকে কিসের মাপকাঠি বানানো হল ? যিনি (নাউযুবিল্লাহ) নিজেই খুন ধর্ষণ করেন, তিনি আবার উম্মতকে কিসের হেদায়াত করবেন ?
এতে প্রতীয়মান হয়, কোন নবীর দ্বারা গোনাহ হওয়া সম্ভব নয়। সমস্ত নবীরাই সকল প্রকার গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ মাসুম বা নিষ্পাপ। কোন কোন আয়াতে নবীদেরকে তিরস্কারের যে বর্ণনা রয়েছে, সেগুলো গোনাহের সংজ্ঞায় পড়েনা। তাছাড়া যে সমস্ত আয়াতে নবীদেরকে ইস্তেগফারের হুকুম করা হয়েছে, উহা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। যেমনঃ মহানবী (সাঃ)ও দুরূদ পড়তেন। কিন্তু সেটা ছওয়াবের জন্য নয়, বরং তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।
(২) পবিত্র কোরআনের অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, ردو کل امن بالله وملنكته وكتبه ورسله لا نفرق بين احد من رسله –
অর্থ ঃ “সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর পয়গাম্বরগণের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর পয়গাম্বরগণের মধ্যে তারতম্য করি না।” (সূরা বাকারা : ২৮৫)
উক্ত আয়াতে মু’মিনদের ঈমানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। যার একটি হল, সকল নবী-রাসূলগণের প্রতি একই ধরনের বিশ্বাস রাখা। এখন বিশ্বাসের ধরনটা কেমন হবে ? তা এখানে উল্লেখ নেই। ইহা আব্বায়িদের ইমামগণ তাদের কিতাবসমূহে বর্ণনা করেছেন। আকায়িদের সর্বোচ্চ কিতাব শরহে ফিকহে আকবর’ গ্রন্থে বলা হয়েছে,
والانبياء عليكم الصلوة والسلام كلهم منزهون عن A الصَّغَارِ وَالْكَبَائِرِ وَالْكُفْرِ وَالْقَبَائِحِ يَعْنِي قَبْلَ النَّبوَّة وبعدها –
অর্থ : “আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) সকলেই নবুওয়াতের আগে ও পরে সঙ্গীরা এবং কবীরা সবধরনের গোনাহ থেকে পবিত্র।” (শরহে ফিকহে আকবর ও ১৬ পৃঃ) মোল্লা আলী কারী (রহঃ) মেরকাত শরহে মেশকাত গ্রন্থে বলেন,
عِصْمَةَ الأَنْبِيَاءِ مِنَ الْكَبَائِرِ وَالصَّغَائِرِ قَبْلَ النَّبوة و بعدها –
অর্থ : “নবুওয়াতের আগে ও পরে নবীগণ সগীরা কবীরা সব ধরনের গোনাহ থেকে পবিত্র ।” (মিরকাত : ১/২৪৪ পৃঃ) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) আম্বিয়ায়ে কেরাম থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেও সগীরা গোনাহ পর্যন্ত প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব আখ্যায়িত
করে বলেন :
A
فلم يمكن صدوره (صدور الذنب) منه ولو صغيرة
قَبْلَ النُّبُوَّةِ عَلَى الصَّوابِ – نَقَلَهُ الْقَارِى فِي الْمِرْقَاةِ جرا تحتَ حَدِيْثِ رقم ٤١٠ فى باب الاعتصام بالكتاب
والسنة –
অর্থ ঃ “সঠিক মতানুসারে নবুওয়াতের আগেও নবীগণ থেকে গোনাহ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব নয়, চাই সগীরা গোনাহ হোকনা কেন।”
(ফাতহুল বারী সূত্র ঃ মিরকাত ১ম খন্ড) আমাদের আকায়িদ শাস্ত্রের ইমাম আল্লামা আবু মানসূর মাতুরিদী (রহঃ) বলেন, “ইসমত আল্লাহ তা’য়ালার এমন একটি নেয়ামত ও অনুগ্রহকে বলা হয়, যা নবী রাসূলগণকে সর্বদা আল্লাহ তা’য়ালার আদেশ-নিষেধ পালনে প্রস্তুত রাখে এবং সামান্যতম পাপ থেকেও দূরে রাখে।”
(নাসিমূর রিয়া সূত্র ঃ তরজুমানুস্ সুন্নাহ : ৩/৩০৫ পৃষ্ঠা) পাকিস্তানের প্রধান মুফতী আল্লামা মুফতী শফী (রহঃ) লেখেন, “চার ইমামসহ উম্মতের সম্মিলিত অভিমতেও নবীগণ ছোট বড় যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত ও পবিত্র।” (মা’আরিফুল কোরআন ঃ ১ম খণ্ড)
উল্লিখিত রেফারেন্সসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়, নবীগণ সকল প্রকার পাপ থেকে পূত-পবিত্র ছিলেন। (৩) ইরশাদ হচ্ছে,
A A ومن يطع الله ورسوله يدخله جنتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।”
(সূরা ফাতাহ : ১৭)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে, আর কারো আনুগত্য করতে হলে তার যাবতীয় কর্মকান্ড অনুসরণ করতে হবে। এখন নবীগণ যদি পাপীই হন, তাহলে একজন পাপীর নিঃশর্ত অনুসরণের দ্বারা কিভাবে আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি দিলেন ? এতে বুঝা যায়, নবীদের দ্বারা পাপ সম্ভব নয়।
(৪) ইরশাদ হচ্ছে,
” إِنَّا ارسلنك شَاهِدًا ومبشرا و نذيرا
অর্থ ঃ “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।” (সূরা ফাতাহ : ৮ )
এখানে নবীকে সাক্ষী বানানো হয়েছে, নবী যদি নিজেই পাপী হন, তাহলে উম্মতের পাপের সাক্ষী দিবেন কোন্ সাহসে ?
(৫) ইরশাদ হচ্ছে, AD عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يظهر على غيبِهِ احَدًا – الا من い ارتضى مِن رسول – অর্থ ঃ তিনি অদৃশ্য বিষয়ে অবগত। তিনি তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত আর
কারো কাছে গায়েবের বিষয় ব্যক্ত করেন না।” (সূরা জ্বিন ঃ ২৬-২৭)
AA (৬) ইরশাদ হচ্ছে- 3y) with all it linic po
অর্থ ঃ “তারা (নবীগণ) অবশ্যই আমার নিকট মনোনীত সন্তোষভাজন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা ছোয়াদ : ৪৭)
এই দুই আয়াতে রাসূলগণকে আল্লাহর সন্তোষভাজন এবং মনোনীত ও নির্বাচিত বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। আর কোন গোনাহগার বা পাপিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর মনোনীত ও নির্বাচিত হতে পারে না।
এরকম আরো অসংখ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী রাসূলগণ মাছুম ও নিষ্পাপ ছিলেন। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সেগুলো এখানে উল্লেখ করা গেলো না। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) এর Lusis এবং আল্লামা ইদ্রীস কান্দলভী (রহঃ)-এর এ ১। আল্লামা ইসহাক ফরিদী (রহঃ)-এর ‘ইসমতে আম্বিয়া’ গ্ৰন্থসমূহ।
বাকি কথা হলো, মওদূদী সাহেব বলেছেন, নবীরাও মানুষ একথা প্রমাণের জন্য আল্লাহ নবীদের দ্বারা পাপ কাজ করিয়েছেন। এর চেয়ে মূর্খতাসূলভ ও হাস্যকর কথা আর কি হতে পারে ? কেননা, নবীরা মানুষ একথা প্রমাণের জন্য তাদের বিবাহ, সন্তানাদী, খাওয়া, ঘুম ইত্যাদিই কি যথেষ্ট নয় ? হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَلَقَدْ أتَيْنَا إِبْرَاهِيمَ رشده من قبل وكنا به علمين
অর্থ : “আর ইতিপূর্বে আমি ইব্রাহিমকে তার সৎ পন্থা দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত ও ছিলাম।” (সূরা আম্বিয়া ঃ ৫১) আল্লাহ যাকে সৎ পন্থা তথা হেদায়াতের প্রতিশ্রুতি দিলেন, মওদূদী সাহের তার মধ্যে শিরকের ঘ্রাণ পেয়ে গেলেন। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হতে
পারে ? হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يُدَاوُدُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِى الْأَرْضِ فَاحْكُمُ بَيْنَ . النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الهَوى فَيُضِلّكَ عَنْ سَبِيلِ اللّهِ.
অর্থ ঃ “হে দাউদ ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি-
অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।”
(সূরা ছোয়াদ : ২৬)
এখানে দাউদ (আঃ)-কে সরাসরি প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তারপরও কি কোন নবীর পক্ষে প্রণতির তাড়নায় কারো প্রতি আসত হওয়ার কোন অবকাশ ছিল ? কখনো না। যদি দাউদ (আঃ) দ্বারা এমন
কিছু হতো, তাহলে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী তাকে সরল পথ হতে বিচ্যুত হতে হতো। অথচ এমন কিছু হওয়ার তো প্রশ্নও উঠে নাই।
কিন্তু মি. মওদূদী দাউদ (আঃ) সম্পর্কে ইসরাঈলী একটি বানোয়াট বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, মহান নবীর ইজ্জত নিয়ে যেই টানা হেচড়া করেছে, তার মত দুঃখজনক ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে কয়টি ঘটেছে আল্লাহ মালুম। এখানেই শেষ নয়, তার সুযোগ্য পুত্র হযরত সুলাইমান (আঃ) কে মওদূদী জারজ সন্তান বানানোরও পাঁয়তারা করেছে। অথচ সুলাইমান (আঃ) কে আল্লাহ তা’য়ালা সারা পৃথিবীর রাজত্ব দান করেছিলেন।
হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, وَلَمَّا بَلَغَ الـ اشده واستوى أتَيْنَهُ حَكَمًا وَ عِلْمًا – وَكَذَالِكَ نَجْزِى المُحْسِنِينَ .
অর্থ : “যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরা কাসাস : ১৪)
এই আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা মূসা (আঃ)-কে সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্ত
র্ভুক্ত করেছেন। আর মওদূদী সাহেব মূসা (আঃ)-কে পাপী খুনী বান্দাদের অন্ত
ভুক্ত করেছেন। এখন পাঠক দেখুন, কার বিচার মানবেন।
এভাবে সমস্ত নবীদের নিষ্পাপের অসংখ্য প্রমাণ পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রত্যেক নবীর জন্য আলাদা আলাদা আলোচনা করতে গেলে, মুস্তাক্কেল একটি কিতাবে পরিণত হবে। তাই আমরা পবিত্র কোরআনের এমন একটি আয়াত উল্লেখ করছি যার মধ্যে সমস্ত নবীদের ইসমতের দাবী করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
وَإِنَّهُم عِندَ نَا لمن المصطفين الاخيار . অর্থ ঃ “আর তারা (সমস্ত নবীরা) আমার কাছে মনোনীত ও সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা ছোয়াদ : ৪৭)
হেদায়াত : আমাদের উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সমস্ত নবী-রাসূল (আঃ) গণ মাছুম ও নিষ্পাপ ছিলেন। তাদের দ্বারা ছোট-বড় কোন গোনাহ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এজন্য মুফতী শফী (রহঃ) বলেছেন, “নবীগণ (আঃ) কে গোটা মানবজাতির অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল। যদি তাদের দ্বারা ছোট-বড় কোন পাপ কাজ সম্পন্ন হত,
তাহলে নবীদের কথা ও কাজের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে এবং তাঁরা আস্থাভাজন থাকবেন না। আর যদি তাঁদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস না থাকে, তাহলে দ্বীন ও শরীয়তের স্থান কোথায় ?” (মাআরিফুল কোরআন)
রাসূল (সাঃ) বলেন, সূদের সত্তরটিরও বেশী স্তর রয়েছে। এইগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন ও হালকা স্তরটি নিজের মায়ের সহিত জেনা করার সমতুল্য । আর সূদের একটি দেরহাম পঁয়ত্রিশবার জেনার চেয়েও অধিক মারাত্মক। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও সবচেয়ে ঘৃণ্যতম সূদ হল মুসলমানদের ইয্যত সম্মান নষ্ট করা ।
(ফাযায়েলে রমযান ঃ ৪৫-৪৬ পৃঃ) প্রিয় পাঠক ! ইতিহাসের জঘন্যতম বেয়াদব, মুসলিম নামের কলঙ্ক, কুখ্যাত মি. মওদূদী শুধু সাধারণ মুসলমানদের ইজ্জত সম্মান নষ্ট করেননি, বরং মানবকুলের শ্রেষ্ঠ মনীষী তথা আম্বিয়ায়ে কেরামের ইজ্জত নষ্ট করেছে। তাহলে এবার বলুন, মি. মওদূদীর এই অমার্জনীয় বেয়াদবীর কারণে- সে তার নিজের মায়ের সহিত কতবার যিনা করার পাপ অর্জন করেছে। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে কবর ও হাশর উভয় জগতে তার প্রাপ্য বদলাই দান করুন। আমীন !

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরির আরো
© All rights reserved © 2019 www.izharehaq.com
Theme Customized BY Md Maruf Zakir