উসূলে হাদীস সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য : “আদি যুগের আবোল-তাবোল প্রলাপ কে শুনে ?”
মওদূদী ঃ (ক) “আরে ! হাদীস বর্ণনার মূলনীতি রেখে দিন। বর্তমান সভ্যতার (আধুনিক) যুগে, আদিম যুগের এসব আবোল তাবোল প্রলাপ কে শুনে ?” (তরজুমানুল কোরআন : ১৪/১১১ পৃঃ)
(খ) মুহাদ্দেসীনে কেরাম হাদীস মূল্যায়নে যেসব কানুন ধার্য করেছেন, বিভিন্ন দিক থেকে উহাতে দুর্বলতা রয়েছে। অতএব, উক্ত কানুনের ভিত্তিতে কৃত মুহাদ্দেসীনে কেরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাদীস গ্রহণ বা বর্জন ঠিক হবে না; বরং হাদীস মূল্যায়নে কষ্ঠি পাথর হল- “বিজ্ঞ মানুষের পরিশুদ্ধ অভিরুচি। মানুষের অভিরুচী যে হাদীসকে গ্রহণ করবে উহাই গ্রহণীয় এবং যে হাদীসকে বর্জন করবে উহাই বর্জনীয়।” মুহাদ্দেসীনে কেরামের নিকট উহা সহীহ বা জয়ীফ ইত্যাদি যাই হোক না কেন।
মোটকথা, পরিশুদ্ধ অভিরুচিশীল ব্যক্তি আপন অভিরুচী মাফিক অনেক সময় জয়ীফ, গরীব সনদবিহীন ও দোষমুক্ত হাদীসকেও গ্রহণ করতে পারেন। আবার সহীহ, প্রসিদ্ধ ও পরিপূর্ণ সনদ সংযুক্ত ও দোষমুক্ত গ্রহণীয় হাদীসকেও আপন অভিরুচি মাফিক বর্জন করতে পারেন। (তাফহীমাত : ১/২৯৮ পৃঃ)
শরীয়ত ঃ মওদূদীর বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, হাদীস নির্ণয়ের মূলনীতি হিসেবে মুসলিম উম্মাহর যে মহাসম্পদ হাসিল হয়েছে, তা অনর্থক। এমনকি (নাউযুবিল্লাহ) এই আধুনিক যুগে তা ডাষ্টবিনে ফেলার উপযুক্ত। তার বক্তব্য অনুযায়ী মানুষ যেটাকে হাদীস মনে করবে সেটাই হাদীস। তাই উসূলে হাদীসের কোন প্রয়োজন নেই ।
অথচ ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, মুহাদ্দেসীনে কেরাম সঠিক আমল নির্ণয়ার্থে হাদীসের মূল্যায়ন বা সহীহ, জয়ীফ ইত্যাদি পার্থক্যকরণের জন্য কতক নির্ভরযোগ্য উসূল বা কানুন ধার্য করেছেন। উক্ত কানুনের ভিত্তিতেই হাদীসসমূহের শ্রেণী বিন্যাস ইত্যাদি করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে উক্ত উসূল ও কানুন নির্ভরযোগ্য। (তাহজীবুত তাহজীব : ১১/১৩০ পৃঃ)
হেদায়াত : মওদূদী সাহেব হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য বিজ্ঞ মানুষের পরিশুদ্ধ অভিরুচির যেই শর্তারোপে করেছেন, উহা একটি ভাওতাবাজি মাত্র। প্রকৃত কথা হল, মওদুদী মুনকিরে হাদীস বা হাদীস অস্বীকারকারীদের একজন। যার জ্বলন্ত প্রমাণ, প্রসিদ্ধ মুনকিরে হাদীস ‘তুলুয়ে ইসলাম পার্টির’ প্রধান মি. গোলাম আহমদ পারভেজ একদিন মুখ খুলে বলেই ফেলল, হাদীস সম্পর্কে মওদূদী সাহেবের যে চিন্তাধারা আমাদের ‘তুলুয়ে ইসলাম পার্টির’ও ঠিক সেই একই চিন্তাধারা। তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, মওদূদী সাহেব পাইকারীভাবে সকলকেই হাদীস গ্রহণ বর্জনের অধিকার দিয়েছেন। আর আমরা এই অধিকারটুকু শুধু ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ককেই দিয়ে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তা সত্ত্বেও মওদূদী সাহেব ও তার জামায়াতে ইসলামী দলের লোকেরা আমাদেরকে সদা-সর্বদা মোনকিরে হাদীস, মোনকিরে শানে রেসালাত ইত্যাদি সাব্যস্ত করে আমাদের তুলুয়ে ইসলাম পার্টিকে’ এক বড় ফেতনা আখ্যা দিয়ে চলেছেন। আর মওদূদী সাহেবকে হাদীসের সর্বশ্রেষ্ঠ সমর্থক, উত্তম অনুসারী ইত্যাদি ঘোষণা করেছেন। একি ইনছাফ ?
(তুলুয়ে ইসলাম, করাচী, ২রা এপ্রিল ১৯৫৫ ইং) মি. গোলাম পারভেজের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হল, মি. মওদূদী মি. গোলাম পারভেজদের থেকেও এ ব্যাপারে একধাপ এগিয়ে। সুতরাং উসূলে হাদীস। সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্যের জবাবে আমাদের একথাই বলতে হলো, ‘পাগলে কি বলে আর ছাগলে কি খায় এটা দেখার বিষয় নয়’।
(১২) ঈমান সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য ঃ
“কালিমা পড়লেই ঈমানদার বা মুসলমান হয় না”
মওদূদী ঃ (ক) কালিমা কয়েকটা অক্ষর ছাড়া আর কিই বা রয়েছে ? কাফ লাম, মীম, আলিফ, সীন এ রকমেরই কয়েকটা অক্ষর ছাড়া আর তো কিছুই নয়। এ অক্ষরগুলো যুক্ত করে মুখে উচ্চারণ করলেই কোন যাদুর স্পর্শে মানুষ এতখানি বদলে যায়। শুধু এতটুকু কথার দ্বারা কি মানুষের পরস্পরের মধ্যে এত আকাশ পাতাল পার্থক্য হতে পারে ? একটু চিন্তা করলেই আপনারা বুঝতে পারবেন- আপনাদের বিবেক বুদ্ধি বলে ওঠবে যে, কয়েকটা অক্ষর মিলিয়ে মুখে উচ্চারণ করলেই এত বড় ক্রিয়া কিছুতেই হতে পারে না। মূর্তিপূজক মুশরিকগণ অবশ্য মনে করে যে, একটা মন্ত্র পড়লেই পাহাড় টলে যাবে। যমীন ফেটে যাবে এবং তাহাতে পানি উথলে উঠবে। মন্ত্রের কোন অর্থ কেউ অবগত হোক বা না-ই হোক, তাতে কোন ক্ষতি বৃদ্ধি নেই।”
(ঈমানের হাকীকত ঃ ২৪ পূঃ খোতবাত : ৪/২৭ পৃঃ) (খ) মুখে মুখে যে ব্যক্তি আমি মুসলমান বা আমি মুসলমান হয়েছি বলে চিৎকার করবে, তাকেই কি মুসলমান মনে করতে হবে ? অথবা পূজারী ব্রাহ্মণেরা যেমন না বুঝে কতকগুলো সংস্কৃত মন্ত্র পাঠ করে, তেমনিভাবে আরবি ভাষায় কয়েকটি শব্দ না বুঝে মুখে উচ্চারণ করলেই কি মুসলমান হওয়া যাবে ? ইসলাম গ্রহণ করার তাৎপর্য কি এটাই ? (ঈমানের হাকীকত ঃ ৭ পৃঃ)
“কোরআনের দৃষ্টিতে শুধু কালিমায়ে তাইয়্যিবার স্বীকারোক্তি অনর্থক, যদি মানুষ কালিমার উপর অটল থেকে নামায এবং যাকাতের পাবন্দ না হয়।”
(খোতবাত : ১৮/১৪৭ পৃঃ) শরীয়ত : মওদূদীর উল্লিখিত বক্তব্যসমূহ দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কালিমায়ে তাইয়্যেবা পাঠ করলেও কোন মানুষ মুসলমান হবে না। ইসলামের মওদূদী জামাতের মতাদর্শ
অন্যান্য বিধান মানার পর মুসলমান হবে। অথচ কোরআন ও হাদীসে কালিমা পড়নেওয়ালাদেরকে মুসলমান ঘোষণা দিয়ে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কেননা, আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী বিশ্বাস করার নামই ঈমান।
ঈমান সম্পর্কে আকায়িদের কিতাবে বলা হয়েছে, روو
اَلْإِيْمَانُ هُوَ – الإِيْمَانُ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ……… وحلوه وَمُرِهِ مِنَ اللهِ تَعَالَى .
অর্থ ঃ “ঈমান বলা হয়, আল্লাহ, ফেরেস্তাসমূহ, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ এবং পরকাল ও মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করা। আর ভাল মন্দ, মিষ্ট, তিত সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় বলে জানা।” (আকিদাতুত্ ত্বহাবী ঃ ৯৮) ঈমান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
أمَنَ الرَّسُولُ بِمَا اُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ – كُلّ أمَنَ باللهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ .
অর্থ : “রাসূল (সাঃ) (ঈমান এনেছেন) বিশ্বাস করেন, ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে, আর মুসলমানরাও (একই জিনিসের উপর ঈমান এনেছে) তারা সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর পয়গাম্বরগণের প্রতি।” (সূরা বাকারা : ২৮৫)
হাদীসে জিব্রাঈল নামে প্রসিদ্ধ হাদীসে জিব্রাঈল (আঃ) যখন রাসূল (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলেন, ” ঈমান কাকে বলে ? তখন রাসূল (সাঃ) তার জবাবে বললেন,
نْ تُؤْمِنَ بِاللّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَبِلِقَانِهِ وَرُسُلِهِ الإيمان أن تـ
A وتؤمن بالبعث .
অর্থ : “ঈমান বলা হয়, যে তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ফেরেস্তাগণ, (পরকালে) তাঁর সাক্ষ্য এবং তাঁর রাসূলগণ ও পুনরুত্থান দিবসের প্রতি।” (বুখারী শরীফ : ১/১২পৃঃ)
উবাদা ইবনে ছামেত (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ)-কে বলতে এসেছি। তিনি বলেছেন,
অর্থ : “যে ব্যক্তি একবার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তায়ালা এই ব্যক্তির উপর জাহান্নামকে হারাম করে দেবেন।” (মুসলিম শরীফ ১/৪৩) এই হাদীসে শুধুমাত্র কালিমা তাইয়্যেবার সাক্ষ্যদাতাকে জাহান্নাম থেকে
মুক্তির সনদ দেয়া হয়েছে। আবু যর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন,
مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ثُمَّ مَاتَ عَلى ذلِكَ إِلَّا
دَخَلَ الْجَنَّةَ –
অর্থ ঃ “যেই ব্যক্তি বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অতঃপর এর উপর মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকবে, অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত : ১/১৪ পৃঃ) –উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস ছাড়াও আরো অসংখ্য হাদীসে শুধু কালিমায়ে তাইয়্যেবায় বিশ্বাসীদেরকে মুসলমান (ঈমানদার) ঘোষণা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে।
হেদায়াত ও কোন মানুষ শুধু কালিমা পড়লে মুসলমান হয় কিনা সেটা পরের কথা, কালিমাকে মূর্তি-পূজা ও মুশরিকদের যাদু-মন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে মওদূদী সাহেব যেই বিদ্রূপ করেছেন, এতে তার নিজের ঈমানই-তো হারিয়ে ফেলেছেন। (জাওয়াহিরুল ফিকহ ঃ ১/২৩ পৃঃ)
কালিমায়ে বিশ্বাসী বেআমল মুসলমানদের সম্পর্কে মওদূদী সাহেবের চিন্তাধারা মুতা মিলাদের চিন্তাধারার নবরূপ মাত্র। এজন্য তার এসব বক্তব্যের দ্বারা তাকে মুতাযিলীদের একজন দালাল বলেই প্রমাণিত হচ্ছে।
(১৩) মুসলমান সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য ঃ (১) “মুসলমান কোন জাতির নাম নয়”
মওদূদী ঃ “প্রকৃতপক্ষে ইসলাম কোন ধর্ম এবং মুসলিম কোন জাতির নাম নয়।” (তাফহীমাতঃ ১/997 )
শরীয়ত ঃ অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক কথা হল, মওদূদীর ধর্মে মুসলমানদের জাতি সত্ত্বাকেই অস্বীকার করা হয়েছে। অথচ পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসলিম একটি জাতির নাম । ইরশাদ হচ্ছে,
ملة ابيكم إبراهيم هو سمكم المسلمين –
অর্থ ঃ “তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের ধর্ম, তিনিই পূর্বে তোমাদের ‘মুসলমান (জাতি) নামকরণ করেছেন।” (সূরা হজ্জ : ৭৮) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
ربنا واجعلنا مسلمين لك ومن ذريتنا امة مسلمة لك অর্থ : “হে আমাদের প্রভু ! আমাদের উভয়কে তোমার অনুগত কর এবং
আমাদের বংশধর থেকেও একটি (মুসলিম জাতি) অনুগত দল সৃষ্টি কর।” (সূরা বাকারা : ১২৮)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
وإنّ هذه امتكم امة واحدة وانا ربكم فاتقون –
অর্থ ঃ “নিশ্চয় তোমাদের এই জাতি (মুসলিম জাতি) একই জাতি এবং আমি তোমাদের পালনকর্তা; অতএব, আমাকে ভয় কর।” (সূরা মু’মিনূন : ৫২)
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
وَمَنْ يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهُ
. A অর্থ : “ইব্রাহিমী মিল্লাত (জাতি) হতে সে ব্যক্তিই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে,
যার বিন্দুমাত্র বোধশক্তি নেই।” (সূরা বাকারা : ১৩০) উল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মুসলমান একটি জাতির নাম, যারা মিল্লাতে ইব্রাহিমী তথা দ্বীনে হানীফের অনুসারী।
হেদায়াত ঃ পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মুসলমানদেরকে সরাসরি জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করার পরও, ‘মুসলমান কোন জাতির নাম নয়’ মওদূদীর এই বক্তব্য- উল্লেখিত আয়াতসমূহকে অস্বীকার করার নামান্তর।
আর আকায়িদের কিতাবে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে কোরআনে বর্ণিত সুস্পষ্ট কোন বিধান বা খবরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, অথবা কোরআন দ্বারা স্বীকৃত বিষয়কে অস্বীকার বা কোরআনের মাঝে অস্বীকৃত বিষয়কে স্বীকার করে কিংবা এ বিষয়ে সংশয় সন্দেহ পোষণ করে, নিঃসন্দেহে সে কাফের হয়ে যায়। – বলা হয়েছে।” (ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ঃ ২১২ পৃঃ) গ্রন্থে এ কথাগুলিই
এখন মওদূদী সাহেব সম্পর্কে কি সিদ্ধান্ত আসবে সেটা বিজ্ঞ পাঠকগণ বিবেচনা করে নিবেন ।
(২) “মুসলমানের গর্ভে জন্ম নিলেও কেহ মুসলমান হয় না”
মওদুদী : (ক) “একটু ব্রেনের উপর চাপ সৃষ্টি করে ভেবে দেখুন যে, আপনি মুসলমানের শব্দ যা দাবী করছেন তার দ্বারা উদ্দেশ্য কি ? মানুষ কি পিতা-মাতার গর্ভ থেকে ইসলাম সাথে নিয়ে আসে ? কোন ব্যক্তি কি শুধু এ ভিত্তিতে মুসলমান হতে পারে যে, সে মুসলমানের সন্তান বা বংশের। আপনি কি এমনই বলবেন, না অন্য কিছু ?” বাস্তবে মুসলমান তাকে বলে না। মুসলমানতো সৃষ্টি হওয়ার জিনিস নয়; বরং ইসলাম গ্রহণ করা বা কবুল করার দ্বারাই একমাত্র মুসলমান হওয়া যায়।” (খোতবাত : ১/৬ পৃঃ)
(খ) “মূর্খতা নিয়ে মুসলমান হওয়া ও মুসলমান থাকা কিছুই সম্ভব নয়। যারা মুসলমানের ঘরে জন্মলাভ করেছে, মুসলমান নামে যারা নিজেদের পরিচয় দেয় ও মুসলমান বলে দাবী করে, তারা সকলেই প্রকৃতপক্ষে মুসলমান নয়।” (গ) “এক ব্যক্তি চাই সে ব্রাহ্মণ হোক বা রাজপুত, ইংরেজ হোক বা হিন্দু
(ঈমানের হাকীকত ঃ ৭ পৃঃ)
হোক….. যখন সে ইসলাম কবুল করে নিবে, তখনই সে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যাবে। অন্য আরেক ব্যক্তি, যে মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েছে, যদি সে
ইসলামের অনুসরণ ছেড়ে দেয়, তাহলে সে মুসলমানদের জামাআত থেকে বের
হয়ে যাবে।” (খোতবাত : ১/৬ পৃঃ)
(ঘ) “ইসলাম কোন বংশ, গোত্র বা কোন পঞ্চায়েতের নাম নয় যে, ইসলাম পিতা থেকে ছেলের, ছেলের থেকে নাতীর নিকট এমনিতেই নিজে নিজে পৌঁছে যাবে।” (খোতবাত : ২/১৩ পৃঃ)
শরীয়ত ঃ মওদূদী সাহেবের উল্লেখিত বক্তব্যসমূহ দ্বারা বুঝা যায়, মুসলমানের গর্ভে জন্ম নিলেই কেহ মুসলমান হয়ে যায় না; বরং যখন সে কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করে তখন সে মুসলমান হয়। অথচ সহিহ বুখারী, মুসলিমসহ অসংখ্য হাদীসের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মুসলমান হোক- অমুসলমান হোক, প্রতিটা সন্তানই মাতৃগর্ভ থেকে ইসলামের ফিতরাত (স্বভাব) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
রাসূলে কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন,
A مَا مِنْ مَولود إلا يولد على الفطرة فَابْوَاهُ يهودانه او ينصِرَانِهِ أَو يُمَحِسَانِهِ ثُمَّ يَقُولُ فِطْرَةُ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لا تَبْدِيلَ LED ANGELLAN LAN ال القيم –
متفق عليه –
অর্থ : প্রতিটা সন্তান মাতৃগর্ভ থেকে ফিতরাত তথা ইসলামী- স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদী অথবা খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। অতঃপর তিনি এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, “এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।” (বোখারী, মুসলিম, মিশকাত : ২১ পৃঃ)
মিশকাত শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা গ্রন্থ, মিরকাতুল মাফাতীহ’-এ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
(إِلَّا يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ) أى مَا مِنْ مَولا يُولَدُ عَلَى أمْرِ مِنَ الْأُمُورِ إِلَّا عَلى َهذَا الأمر — (فَأَبَوَاهُ يُهَودَانِهِ) أَى يُعَلِّمَانِهِ اليهودية ويجعلانه يَهُودِ يا او ينصِرانِه
او يمـجـسـانـه الخ – অর্থ : “প্রতিটা সন্তান মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেয়ার সময় একমাত্র এই ইসলামী স্বভাব নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীতে তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদীয়্যাত শিক্ষা দেয়, ফলে সে ইহুদী হয়ে যায়। অথবা খৃষ্টানিয়্যাত বা মজুসিয়্যাত শিক্ষা দেয়, ফলে সে খৃষ্টান বা মজুসী হয়ে যায়।” (মিরকাতুল মাফাতীহ ঃ ১/২৬১-৬২ পৃঃ)
এছাড়া পবিত্র কোরআনের আয়াত,
فطرت الله التي فطر الناس عليها – لا تبديل لخلق الله –
অর্থ ঃ “এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। (সূরা রুম : ৩০)
এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, মানুষ জন্মগতভাবেই ফিতরাতে ইসলামীর উপর জন্মগ্রহণ করে। এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে, “ফিতরাত বলে ইসলাম বোঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে মুসলমান (বানিয়ে) সৃষ্টি করেছেন। যদি পরিবেশ কোন কিছু খারাপ না করে। তবে প্রতিটি জন্মগ্রহণকারী শিশু ভবিষ্যতে মুসলমানই হবে।
কিন্তু অভ্যাসগতভাবেই পিতা-মাতা তাকে ইসলাম বিরোধী বিষয়াদি শিক্ষা দেয় । ফলে সে ইসলামের উপর কায়েম থাকে না। বোখারী ও মুসলিমে বর্ণিত এর হাদীসে তাই ব্যক্ত করা হয়েছে। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন : এটাই অধিকাংশ পূর্ববর্তী মনীষীর উক্তি।” (তফসীর মা’আরেফুল কোরআন : ১০৪৪ পৃঃ) তাছাড়া রুহের জগতে মানবাত্মাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর প্রশ্ন ও তাঁর প্রাপ্ত
উত্তরেও বুঝে আসে, মানুষ জন্মগতভাবেই ইসলামী ফিতরাতের উপর রয়েছে।
ইরশাদ হচ্ছে,
الست بربكم – قالوا بلى شهدنا . অর্থ ঃ “আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল, অবশ্যই আমরা অঙ্গীকার করছি। (যে আপনি আমাদের সকলের পালনকর্তা)”।
(সূরা আ’রাফ : ১৭২)
এবং মানবজাতিকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহর বাণী ঃ VAAZ A وَمَا خَلَقْتُ الجن والانس الا ليعبدون –
অর্থ : “মানুষ ও জ্বীন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত : ৫৬)
“উদ্দেশ্য এই যে, তাদের প্রকৃতিতে আমি এবাদতের আগ্রহ ও যোগ্যতা রেখে দিয়েছি। তারা একে কাজে লাগালে তাদের দ্বারা এবাদত ব্যতীত অন্য কোন কাজ সংঘটিত হবে না।” (তফসীর মা’আরিফুল কোরআন : ১০৪৪ পৃঃ)
হেদায়াত : আমাদের উল্লেখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা এ কথা প্রতিভাত হল, “মুসলমানের গর্ভে জন্ম নিলেই কেহ মুসলমান হয়না” মওদূদীর এ উক্তি মিথ্যা, বাতিল ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এখন জানার বিষয়, এজন্য কি মওদূদীর অজ্ঞতাই দায়ী নাকি হটকারীতাই দায়ী। তিনি এ সংক্রান্ত পবিত্র কোরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতসহ বুখারী মুসলিমে বর্ণিত একটি মাশহুর হাদীস অস্বীকার করেছেন। “অধিকাংশ উলামার মতে এ প্রকার হাদীসকে অস্বীকারকারীও কাফের হয়ে যাবে।” (ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ঃ ২১৩ পৃঃ)
(৩) “আমলহীন মুসলমানেরা কাফের”
মওদূদী ঃ (ক) “এমন কোন ব্যক্তিকে মুসলমান মনে করার অবকাশ নেই, যে নামায পড়েনা। কেননা, ইসলাম শুধু একটি বিশ্বাসগত জিনিসের নাম নয়, বরং ইহা একটি বাস্তবিক আমলী জিনিস।” (খোতবাত : ১২/৯৫ পৃঃ) (খ) “অনেক মুসলমান এই মনে করে যে, নামায না পড়লে এবং যাকাত না দিলেও সে মুসলমানই থেকে যায়। কিন্তু কোরআনে কারীমে এটাকে পরিষ্কার
ভাষায় অস্বীকার করা হয়েছে।” (খোতবাত ঃ ১৮/১৪৭ পৃঃ)
(গ) ঐ সমস্ত লোক যাদের সারা জীবন কখনো এ ধারণাও আসে নাই যে, তার উপর হজ্জ ফরজের গুরুত্বপূর্ণ যিম্মাদারী রয়েছে….. হজ্জের ইচ্ছাও সে অন্তরে পোষণ করে না। তাহলে সে নিশ্চিতভাবে মুসলমান নয়। যদি সে নিজেকে নিজে মুসলমান বলে, তাহলে সে মিথ্যা বলছে। আর এমন ব্যক্তিকে যে মুসলমান মনে করে সে কোরআনে কারীম সম্পর্কে অজ্ঞ।
(খোতবাত : ২৪/৩০৫ পৃঃ) (ঘ) “ইসলামকে না জেনে কেউ মুসলমান হতে পারে না; কারণ, মুসলমান ব্যক্তির ঔরসে জন্ম হলেই মুসলিম হওয়া যায় না। ইসলামকে জেনে বুঝে বিশ্বাস করে- কাজ করলেই তবে মুসলমান হওয়া যায়।”
(ঈমানের হাকীকত ঃ ৭ পৃঃ) মওদূদী সাহেবের পূর্বে উল্লেখিত বক্তব্যসমূহ দ্বারা বুঝা যায়, কোন মুসলমান যদি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি শরয়ী বিধান পালন না করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে উহা ছিল মু’তাযিলীদের আকিদা। এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান হল, যে সমস্ত মুসলমান ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর প্রতি বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে ইসলামের অন্যান্য বিধানাবলীকেও সঠিক বলে জানে, কিন্তু পরিবেশগত কারণে বা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আদায় করে না। তাহলে সে কাফের হবে না; বরং ফাসেক ও কবিরা গুনাহগার হবে, এ অবস্থায় মারা গেলে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত শাস্তি ভোগের পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। এর পর চিরস্থায়ী জান্নাতে যাবে। মোটকথা, এই ধরনের আমলহীন মুসলমান কাফের হবে না, যার ফলে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। কিন্তু মওদূদী সাহেব মু’তাযিলীদের সাথে সুর মিলিয়ে এ ধরনের মুসলমানকে কাফের বলে থাকেন। তাই আসুন, কোরআন হাদীসের আলোকে বিষয়টির ব্যাখ্যা জেনে নেই। শরীয়ত : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
اور ارود و يايها الذين امنوا كتب عليكم القِصاصُ فِى القتلى AJAPA فَمَنْ عُفِى لَهُ مِنْ أخِيهِ شَيْ فَاتِبَاعٌ بِالمَعروفِ.
অর্থ ঃ “হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে ।…… অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে।”
(সূরা বাকারা : ১৭৮)
এই আয়াত প্রসঙ্গে আল্লামা কারী তৈয়ব সাহেব (রহঃ) লিখেছেন,
فلم يخرج القَاتِل عن الذين امنوا مع أنه ارتكب الْقَتْلَ بِغَيْرِ الْحَقِّ فَثَبَتَ أَنَّ بَعْدَ الْقَتْلِ وَهُوَ اكْبَرُ الْكَبَائِرِ يَبْقَى الْإِنْسَانُ مُؤْمِنًا وَانَّا لِأَهْلِ الْإِيْمَانِ بِالْأُخُوةِ الدِّينِيَّة الإسلامية –
অর্থ : “অন্যায়ভাবে হত্যা করা সত্ত্বেও হত্যাকারী ঈমানদারদের থেকে খারিজ হয়ে যায় না। অথচ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হচ্ছে ভীষণ কবিরা গোনাহ। এতদ্সত্ত্বেও সে মুমিন থাকে এবং নিহতের দ্বীনি ভাই হিসেবে গণ্য হয়।” (হাশিয়ায়ে আবিদাতুত্ ত্বহাবী ঃ ৮৮ পৃঃ) এতে বুঝা গেল, বে আমল কবিরা গোনাহগার কাফের হয় না।
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بيْنَهُمَا ….. إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ اخويكم –
অর্থ : “যদি মু’মিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে।” (সূরা হুজুরাত ঃ ৯-১০) উক্ত আয়াতে বর্ণিত যুদ্ধরত দুই দলের একদল হজ্ব, আরেক দল বাতেল হওয়ার কথা। কিন্তু মুসলিম হওয়ায়, আল্লাহ তা’য়ালা উভয় দলকে মুমিন বলে
সম্বোধন করেছেন এবং তাদের পরস্পর দ্বীনি ভাই হিসেবে অভিহিত করেছেন। এতেও বুঝা যায়, বেআমল কবিরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের হয় না; বরং মুসলিমই থেকে যায়।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, হুজুর (সাঃ) মুয়াজ (রাঃ)-কে একদা তিনবার
সম্বোধন করার পর বলেন, مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلAE KAL الله وأن محمدا رسول اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلَّا حَرَّمَ اللهُ عَلَى النَّارِ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلَا أُخبِرُ بِهِ النَّاسَ GUANGALOWANAGANDANGG قَالَ إِذَا يَتَّكلوا فَاخَبَرَ بِهَا مُعَادٌ عِندَ مَوتِه نائما – متفق عليه
অর্থ ঃ “যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে একথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন। মুয়াজ (রাঃ) বলেন, আমি কি মানুষদের এই সংবাদ জানিয়ে দেব না; যাতে তারা সুসংবাদ গ্রহণ করে। তিনি বলেন, তাহলে তারা এর উপর ভরসা করে থাকবে। মুয়াজ (রাঃ) ইলম গোপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ভয়ে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে এই সংবাদ দিয়ে যান।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত : ১/১৪ পৃঃ)
অন্য হাদীসে রাসূল (সাঃ) مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ثُمَّ مَاتَ عَلى ذلِكَ الادخل বলেন, الْجَنَّةَ قلت وإن زنى وإن سَرَقَ قَالَ وَإِن زَنَى وَإِن سَرَقَ (قَالَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ عَلَى رَغمِ انْفِ إِبِى ذَرٍ –
অর্থ : “যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অতঃপর এই বিশ্বাসের সাথে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বর্ণনাকারী আবু যর (রাঃ) বলেন) আমি বললাম, সে যদি চুরি ও যিনা করে। তিনি বলেন, যদিও সে চুরি করে এবং যিনা করে। (একথা তারা তিনবার বললেন) অতঃপর হুজুর (সাঃ) বলেন, আবু যর-এর অপছন্দ হলেও।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত : ১/১৪ পৃঃ)
উপরোক্ত হাদীস দুটিতে একত্ববাদ ও রেসালাতের সাক্ষ্যদাতাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। যদিও তারা চুরি এবং যিনার মত ‘হক্কুল ইবাদ’-এর কবিরা গোনাহে লিপ্ত হয়। অথচ এখানে সং কাজ করার শর্ত করা হয় নাই। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বেআমল গোনাহগারগণ কাফের নয়।
দরসে নেযামীর অন্তর্ভুক্ত আক্বায়িদের সর্বোচ্চ কিতাবে শরহে আক্বায়িদে বলা হয়েছে
অর্থ ঃ “হাকীকতে ঈমান তথা ঈমানের মৌলিক বিশ্বাস বাকি থাকা অবস্থায় কোন মুমিন বান্দা ঈমান থেকে (তথা মুসলমান থেকে) খারিজ হয় না। মু’তাযিলীগণ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের ধারণা হল, কবিরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তি মুমিনও নন কাফিরও নন। তার স্থান এই দুটির মাঝামাঝিতে। এই ইখতিলাফের ভিত্তি হল, তাদের নিকট আ’মাল হল হাকীকতে ঈমানের অংশ।”
(শরহে আকায়িদ ঃ ১০৭ পৃঃ) এই রেওয়ায়তটি দ্বারা বুঝা যায়, বেআমল মুসলমানগণ মুসলমান নন- এটা হল, মু’তাযিলীদের আকীদা। কারণ, তাদের আক্বিদা মতে আমল করাটা মূল ঈমানের অংশ। কিন্তু এই দাবী এখন মওদূদী সাহেব করছেন। তাছাড়া আমাদের আরেকটি অন্যতম দলীল হল,
إِجْمَاعُ الأُمَّةِ مِنْ عَصْرِ النَّبي صلى الله عليه وسلم إِلَى يَوْمِنَا هَذَا بِالصَّلوةِ عَلَى مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِ الْقِبْلَةِ مِنْ غَيْرِ تَوْبَةَ وَالدُّعَاءُ وَالاسْتِغْفَارُ لَهُمْ مَعَ العِلم بِارْتِكَابِهِمِ الْكَبَائِرِ
অর্থ : “রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর যামানা থেকে এ পর্যন্ত সমস্ত উম্মতে মুসলিমা এ ব্যাপারে (ইজমা) তথা একমত যে, আমাদের কিবলায় বিশ্বাসী কেহ যদি তওবা ছাড়া মারা যায়, তাহলে তার জানাযার নামায এবং তার মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে।” একথা জানা সত্ত্বেও যে, সে কবীরা গোনাহে লিপ্ত ছিল।” (শরহে আকায়িদ ঃ ১০৮ পৃঃ)
মওদূদী সাহেবের মতে, যে ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি শরয়ী বিধান পালন করে না, সে যেহেতু মুসলমান নয়। এজন্য তার জানাযার নামাযও পড়া জায়েয নয়। এ হিসেবে তিনি ইজমায়ে উম্মাতের বিরোধী। 1
হেদায়াত ঃ আমাদের সামগ্রিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হল, মওদূদী সাহেব-বে-আমল মুসলমানদের সম্পর্কে ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পেশকৃত কোরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা এবং সুদীর্ঘ দেড় হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত ইজমা বিরোধী।
আর আক্বায়িদের কিতাবে বলা হয়েছে, “যে সব জরুরিয়্যাতে দ্বীনের উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে এমন জরুরিয়্যাতে দ্বীনের অস্বীকার করা কুফুরী। আল্লামা সুবকী (রহঃ) লিখেছেন,
جَاجِدُ المَجْمَعِ عَلَيْهِ المعلوم مِنَ الدِّينِ بِالضَروَةِ
كافر مطلقا –
অর্থ : “জরুরিয়্যাতে দ্বীন-যার উপর সর্বযুগে ইজমা সংঘটিত আছে-তার অস্বীকারকারী এক বাক্যে কাফের !”
(ইসলামী আক্বিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ : ২১৩ পৃঃ)
Leave a Reply