(৮) সুন্নাত সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য : “সুন্নাতের অনুসরণ করা বিদয়াত ও কুসংস্কার”
মওদূদী ঃ (ক) “আমার আকিদা বা বিশ্বাস হল, হুজুর (সাঃ) এর আদব- আখলাক এবং স্বভাব-চরিত্রকে সুন্নাত বলা এবং উহা অনুসরণে জোর দেওয়া সাংঘাতিক ধরনের বিদআত বা কুসংস্কার এবং মারাত্মক ধর্ম বিগড়ান। “
(রাসায়েল ও মাসায়েল : ১/২৪৭ খৃঃ)
(খ) “আমি উসওয়াহ এবং সুন্নাত ও বিদয়াত ইত্যাদি পরিভাষাগুলোর সেসব অর্থসমূহকে গলদ বরং দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি সাধনের হাতিয়ার বলে মনে করি- যা সাধারণতঃ আপনাদের এখানে বহুল প্রচলিত। আপনার এ ধারণা যে, নবী (সাঃ) যতটা লম্বা দাড়ি রেখেছিলেন ঠিক ততটা লম্বা দাড়ি রাখা সুন্নাতে রাসূল বা উসওয়ায়ে রাসূল- এ অর্থ রাখে যে, আপনি আদতে রাসূলের অভ্যাসকে সে সুন্নাত মনে করেছেন, যার প্রচলন ও প্রতিস্থাপনের জন্য নবী (সাঃ) এবং অন্যান্য আম্বিয়া (আঃ) প্রেরিত হতেন। কিন্তু আমার মতে শুধু এতটুকুই নয় যে, এটা সুন্নাতের সঠিক সংজ্ঞা নয়; বরং আমি এ বিশ্বাস লালন করি যে, এই ধরনের সাধারণ অনুসঙ্গকে সুন্নাত স্থির করা এবং পরে এর অনুসরণের ব্যাপারে হটকারিতা করা এক মারাত্মক ধরনের বিদয়াত এবং এক ভয়ানক ধর্ম বিকৃতি। যার অপ্রিয় ফল অতীতেও প্রকাশ পেতে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও প্রকাশ পাওয়ার আশংকা আছে। (রাসায়েল ও মাসায়েল : ১/২২৯ পৃঃ)
(গ) “(মাআযাল্লাহ) আল্লাহ সম্পর্কে আপনার কি এই ধারণা যে, তিনি তাঁর অনুগতদের চেনার এতটুকুও তমিজ রাখেন না, যেটুকু দুনিয়ার এসব অল্প আকল মানুষের মাঝে রয়েছে ? আপনি কি মনে করেছেন যে, তিনি দাড়ির দৈর্ঘ্য, টাখনু এবং পায়জামার নিম্নাংশের ব্যবধান, তাসবীহর দানা এবং ওয়াজিফা, নফল এবং এমনি আরো কিছু জিনিস দেখেই ধোঁকা খেয়ে যাবেন যে, আপনি তার সাচ্চা ফরমাবরদার।” (ইসলামী নেযামে যিন্দেগী ঃ ৩০৪ পৃঃ)
শরীয়ত : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ اسَوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ : “রাসূল (সাঃ)-এর জীবনীতে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব : ২১)
এই আয়াতের তফসীরে বলা হয়েছে, “এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বাণীসমূহ ও কার্যাবলী উভয়ই অনুসরণের হুকুম রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। (তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন : ১০৩৭ পৃঃ)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللهِ –
অর্থ : “বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের অনুসরণ করা হয়।” (সূরা নিসা : ৬৪)
উল্লিখিত আয়াত দুটিতে রাসূল (সাঃ) এবং তার কার্যাবলীর অনুসরণের দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সুন্নাতের অনুসরণ। কেননা, মহানবীর কথা-বার্তা, চাল-চলন, আদব-আখলাক, পোশাক-আশাক ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে অনুকরণ ছাড়া তাঁর অনুসরণ সম্ভব নয়।
মহানবী (সাঃ) নিজেই সুন্নাতের গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেন, تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمَرينِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله –
অর্থ : “আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দুটি জিনিস আকড়ে ধরে থাকবে, ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। আর সেই দুটি জিনিস হল কিতাবুল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাত।”
এই হাদীসে সুন্নাতের অনুসরণকে হেদায়াতের উপর টিকে থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া সুন্নাত বর্জনকে Jus বা পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অন্য হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন,
AAA
عليكم بسنتی وسنة الخلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ المهدين – অর্থ ঃ “তোমাদের উপর আবশ্যক হল, আমার সুন্নাত এবং আমার হেদায়াত প্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নাতের অনুসরণ করা।”
(আবু দাউদ শরীফ ঃ ২/৬৩৫ পৃঃ)
এই হাদীসে রাসূল (সাঃ) সুন্নাতের অনুসরণ করাকে উম্মতের জন্য আবশ্যক করে দিয়েছেন। অন্য এক হাদীসে রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণকারীদেরকে নিজের
সাথে জান্নাতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যথা-
مَنْ اَحَبَّ سنتى فقد احبنى ومن احبنِي كَانَ مَعِى فِي
الْجَنَّةِ –
অর্থ : “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবাসবে সে আমাকে ভালবাসবে, আর যে আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে যাবে।”
(তিরমিযী সূত্রে মিশকাত : ৩০ পৃঃ)
হেদায়াত : সুন্নাতের এতসব গুরুত্ব সত্ত্বেও যারা সুন্নাতের উপর আমল করে না অথবা বিরোধিতা করে তাদের সম্পর্কে ফয়সালা রাসূল (সাঃ) নিজেই দিয়ে গেছেন। সুন্নাত থেকে বিমুখদের সম্পর্কে তিনি বলেন,
Aw
من رغب عن سنتي فليس مني
অর্থ : “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার উম্মাত নয়।”
(বুখারী মুসলিম সূত্রে মিশকাত : ২৭ পৃঃ)
এখন মওদূদী সাহেব ও তার চেলারা কার উম্মত হবেন। বলবেন কি ?
কারণ, তারা তো শুধু সুন্নাত থেকে বিমুখ হন নাই, বরং সুন্নাতকে বিদয়াত ও
কুসংস্কার আখ্যা দিয়ে চরম বেয়াদবী করেছেন। সুন্নাত নিয়ে মওদূদী যেরূপ
ঠাট্টা বিদ্রূপ ও ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলেছেন, তা কুফুরির সামিল। এ ধরনের
bo লোকের ঈমান থাকেনা। বউ থাকলে তালাক হয়ে যায়।
(জাওয়াহিরুল ফিকহ : ১/২৩)
(৯) হাদীস সম্পর্কে মওদুদীর বক্তব্য ঃ “হাদীসের সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করা যায় না। “
মওদূদী : (ক) usituail is curiLail Estat حد اگر کوئی چیز سے حد پہنچتی ہوئی آتی ہیں جن سے. حاصل ہوتی ہے تووہ گمان صحت ہے نہ کہ علم –
অর্থ : “হাদীস শাস্ত্র হল কিছু সংখ্যক মানুষ থেকে কিছু সংখ্যক মানুষের নিকটে পৌঁছে যাওয়া একটি শাস্ত্র। এ পদ্ধতিতে কারো নিকট কিছু অর্জিত হলে তাকে বিশুদ্ধ বলে ধারণা করা যেতে পারে, তার উপরে দৃঢ় বিশ্বাস বা ইয়াকিন রাখা যায় না।” (তরজুমানুল কোরআন : খন্ড ২৬, সংখ্যা ৩, পৃ ২৬৭)
قرآن اور سنت رسول عليه الصلوة والسلام کی (3) تعلیم سب پر مقدم مگر تفسیر وحدیث کے پران ذخیروں سے نہیں ۔
অর্থ : “কোরআন সুন্নাহর শিক্ষা সবার উপরে; কিন্তু তা তফসীর ও হাদীসের পুরাতন ভান্ডার হতে নয়।” (তানকীহাত ঃ ১৭৫ পৃঃ)
দিয়েছেন- এমন প্রতিটি রেওয়াতকে হাদীসে রাসূল বলে বিশ্বাস করা আবশ্যক। কিন্তু আমরা সনদের যথার্থতাকে হাদীসের যথার্থতার জন্যে অপরিহার্য প্রমাণ
(গ) আপনাদের মতে সনদের দিক দিয়ে মুহাদ্দিসগণ নির্ভুল আখ্যা মনে করি না । (নির্বাচিত রচনাবলী : ১/২০০ পৃঃ)
(ঘ) নবীয়ে কারীম (সাঃ) সন্দেহযুক্ত মনগড়া ধারণাও (হাদীস হিসেবে ব্যক্ত করতেন।” (তরজুমানুল কোরআন : ১৩৬৫ হিঃ)
*মওদূদী সাহেবের এই সমস্ত বক্তব্যের সারমর্ম হল, সনদের দিক দিয়ে যথার্থ হলেও কোন হাদীস দ্বারা শরয়ী হুকুম সাব্যস্ত করা যায় না। বড় জোর ধারণা করা যায় যে, এটা হাদীস কিন্তু তার হুকুম মানা যাবে না। অর্থাৎ হাদীসকে কখনো প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যাবে না। তাছাড়া বুখারী মুসলিম সহ সহীহ হাদীসের যত কিতাব আছে। এই ভান্ডার এখন পুরাতন হয়ে গেছে। সুতরাং এগুলো থেকে কোন ইসলামী শিক্ষা হাসিল করা যাবে না ।
শরীয়ত : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে وما اتكم الرسول فخذوه ومَا نَهَكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
وَاتَّقُوا الله
অর্থ : “রাসূল (সাঃ) তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা হাশর : ৭) এই আয়াতে হাদীসের হুজ্জত হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ রয়েছে।
কেননা এর তফসীরে বলা হয়েছে,
যে কোন নির্দেশ অথবা ধনসম্পদ অথবা অন্য কোন বস্তু তিনি কাউকে দেন, তা তার গ্রহণ করা উচিত এবং তদনুযায়ী কাজ করতে সম্মত হওয়া উচিত। পক্ষান্তরে তিনি যে বিষয় নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকা দরকার। অনেক সাহাবায়ে কেরাম আয়াতের এই ব্যাপক অর্থ অবলম্বন করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রত্যেক নির্দেশকে কোরআনের নির্দেশের অনুরূপ অবশ্য পালনীয় সাব্যস্ত করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে এহরাম অবস্থায় সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে দেখে তা খুলে ফেলতে আদেশ করেন। লোকটি বলল, আপনি এ সম্পর্কে কোরআনের কোন আয়াত বলতে পারেন কি, যাতে সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এ সম্পর্কে আয়াত আছে। অতঃপর তিনি ১। আয়াতটি পাঠ করে দিলেন। (বস্তুতঃ ইহা ছিল হাদীসের নির্দেশ) ইমাম শাফেয়ী একবার উপস্থিত লোকজনকে বললেন, আমি তোমাদের প্রত্যেককে প্রশ্নের জওয়াব কোরআন থেকে দিতে পারি। জিজ্ঞাসা কর, যা জিজ্ঞাসা করতে চাও। এক ব্যক্তি আরয করল, এক ব্যক্তি এহরাম অবস্থায় প্রজাপতি মেরে ফেলল, এর বিধান কি ? ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এই আয়াত তেলাওয়াত করে হাদীস থেকে এর বিধান বর্ণনা করে দিলেন। (কুরতুবী)
(তফসীরে মাআরেফুল কোরআন : ১৩৫২ পৃঃ) এই ব্যাখ্যার দ্বারা প্রমাণিত হয় সাহাবায়ে কেরাম এবং আম্বিয়ায়ে কেরাম এই আয়াত দ্বারা হাদীসকে হুজ্জত প্রমাণ করে গেছেন। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
الله – 人 قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله – অর্থ ঃ “বলুন ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসবেন।” (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
الله لا يُحِبُّ فَإِنَّ قُل اطيعوا الله والرسول فإن تولوا فإن الله
الكفرين.
অর্থ : “বলুন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসবেন না।”
(আলে ইমরান : ৩২)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহর আনুগত্য বলতে কোরআনের হুকুম মানা এবং রাসূলের আনুগত্য বলতে হাদীসের হুকুম মানা উদ্দেশ্য। তাছাড়া উলামায়ে উম্মত এ ব্যাপারে একমত যে,
পবিত্র হাদীসসমূহ নবী কারীম (সাঃ) হতে মহা মনীষী সাহাবায়ে কেরান (রাঃ) গণের বর্ণনার মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য সূত্রে মুহাদ্দেসীনে কেরামের নিকট পৌঁছেছে। অতঃপর মুহাদ্দিসগণ সাধ্যাতীত সতর্কতা অবলম্বন করতঃ বর্ণনা- কারির সার্বিক অবস্থাদি যোগসূত্র ইত্যাদি যাচাই বাছাই ও উসূলে হাদীসের ভিত্তিতে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উহা গ্রহণ করেছেন। কাজেই হাদীস শাস্ত্র সত্য, বিশ্বাস্য ও নির্ভরযোগ্য। (দাওয়াত ও আজিমত : ১/৮১ পৃঃ)
হেদায়াত : নামায, হজ্জ, যাকাত, ওমরাহ, তায়াম্মুম ইত্যাদি অসংখ্য শরয়ী বিধান কোরআনে পাকে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু হাদীनে সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখন যদি কোন হাদীস সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাসই না জন্মে, তাহলে এ সমস্ত বিধান মানাই অসম্ভব। তাছাড়া হাদীসের কিতাবকে পুরাতন ভান্ডার আখ্যা দিয়ে তা পরিত্যাগ করার যে ঘোষণা মওদূদী সাহেব দিলেন, এর দ্বারা কোরআনকেও পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ কোরআনও তো পুরাতন হয়ে গেছে। মোটকথা, হাদীস সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য কোরআন সুন্নাহ বিরোধী যা কুফুরীর সামিল।
(১০) বোখারী শরীফ সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য ঃ “বোখারীর হাদীস বিনা সমালোচনায় গ্রহণ করা অন্যায়”
মওদূদী ঃ (ক) কোন ভদ্রলোকই একথা বলতে পারে না যে, যেসব হাদীস আমাদের নিকট পৌঁছেছে তা ধ্রুব সত্য, তার সত্যতা সন্দেহাতীত। বোখারী শরীফের ছয় হাজার হাদীসের সবগুলো যে সহীহ হাদীসের গোড়া কোন ব্যক্তিও একথা বলতে পারে না। (দ্বীনী রুজহানাত ঃ ১০০ পৃঃ)
(খ) বোখারী শরীফের হাদীসও বিনা সমালোচনায় গ্রহণ করা অন্যায়। (তরজুমানুল কোরআন : শাওয়াল, ১৩৫২ হিঃ)
(গ) বোখারী শরীফের ৪৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত ইব্রাহিম (আঃ) কর্তৃক তার স্ত্রীকে বোন বলা সংক্রান্ত (C) সহিহ (2) মারফু ও (ii) মুত্তাসিল হাদিসটি সম্পর্কে মওদূদীর বক্তব্য হল,
به مهمل افسانه بی – رسائل) و مسایل جلد ٢ ص (٣٤) অর্থ : এটা অনর্থক প্রলাপ। (রাসায়েল ও মাসায়েল : ২/৩৬ পৃঃ)
শরীয়ত ও ইমাম বুখারী (রহঃ) এর স্মরণশক্তি, দ্বীনদারী, খোদাভীরুতা ও হাদীস শাস্ত্রে অবর্ণনীয় যোগ্যতার কোন তুলনা চলে না। এজন্য সারা পৃথিবীর সমস্ত ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত (ইজমা) ঐক্যমত হল,
أَصَحُ الْكُتُبِ بَعْدَ كِتَابِ اللهِ صَحِيح البخاري
অর্থ : “আল্লাহর কিতাব (তথা কোরআন শরীফের পর সবচেয়ে বি কিতাব হল সহীহ বুখারী শরীফ।” (নুখবাতিল ফিকার)
(১) ইমাম বুখারী (রহঃ) ছয় লক্ষ হাদীস থেকে তার কিতাব চয়ন করেছেন। একটি হাদীস লেখার পূর্বে তিনি গোছল করে নিতেন। পরে দু’রাকআত নামায পড়ে হাদীসটি সহীহ কিনা এ ব্যাপারে ইস্তেখারা করতেন। অতঃপর হাদীসটি তার কিতাবে স্থান দিতেন। তিনি বলেন, আমি এ কিতাব ১৬ বছরে পূর্ণ করেছি। এতে কেবল সহীহ হাদীস উপস্থাপন করেছি। দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে যেসকল সহীহ হাদীস ছেড়ে দিয়েছি তার সংখ্যাও অনেক বেশী।
(কাশফুল বারী শারহুল বুখারী : ১/২২৯ পৃঃ) (২) ইমাম বুখারী (রহঃ) তার কিতাবের মূল পাণ্ডুলিপি মক্কা, বসরা ও বুখারায় তৈরী করেছেন এবং চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি মসজিদে হারামে সমাপ্ত করেছেন। মদীনা মুনাওয়ারায় রওজা শরীফের পার্শ্বে বসে তারাজেমে আবওয়াব (অধ্যায় শিরোনামগুলো) লিখেন। তার ছাত্র মুহাম্মদ ইবনে আবু হাতেম ওয়াররাক (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম বুখারী (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি বুখারী শরীফে যে সকল হাদীস উদ্ধৃত করেছেন তার সবগুলো কি স্মরণ আছে ? তিনি উত্তরে বললেন, বুখারীর কোন একটি হাদীস আমার নিকট অস্পষ্ট নেই। কেননা, আমি তা তিন বার লিখেছি।
(হাদইউস সারী শারহুল বুখারী : ১/১৮ পৃঃ) (৩) তিনবার পান্ডুলিপি তৈরীর উদ্দেশ্য হল খসড়া, চূড়ান্ত ও নিরীক্ষণ । সম্ভবত এ কারণেই সহীহ বুখারীর পান্ডুলিপি বিভিন্ন ধরনের হয়েছে। কোন কোন সূফী বলেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) প্রথমবার খসড়া পাণ্ডুলিপি করেছেন। দ্বিতীয়বার চূড়ান্ত করেছেন। তৃতীয়বার নবী করীম (সাঃ)-এর দরবারে পেশ. করেছেন। কাশফ অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে যে হাদীসের ব্যাপারে রাসূলের পক্ষ থেকে অনুমতি পেয়েছেন, সে হাদীস সহীহ হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস অর্জনের পর কিতাবে স্থান দিয়েছেন। (আশেআতুল লুমআত : ১/১০ পৃঃ)
এর পরও বর্ণনাকারী স্বীয় বর্ণনা যার থেকে গ্রহণ করে বর্ণনা করবেন, উভয়ের পারস্পরিক সাক্ষাত ও সরাসরি শ্রবণ করা, তার কাছে যতক্ষণ সাব্যস্ত না হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি উক্ত বর্ণনাকে গ্রহণ করেননি। যদিও উভয়েই সমকালীন ব্যক্তি এবং পরস্পর সাক্ষাত হওয়ার, সরাসরি শ্রবণ করার সম্ভাব্যতাও বিদ্যমান থাকে। এত কঠোর শর্ত অন্য কোন হাদীসবেত্তাগণ করেননি। এজন্য আল্লাহ তা’য়ালা তার বুখারীকে কবুল করে নিয়েছেন।
(৪) আবু যায়েদ মারওয়ায়ী (রহঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমি বাইতুল হারামে রুকন ও মাকামে ইব্রাহিমের মাঝে শয়নাবস্থায় ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আবু যায়েদ শাফেয়ীর কিতাব আর কতদিন পড়বে ? আমার কিতাব পড় না কেন ? আমি বললাম, হে রাসূল (সাঃ) ! আপনার কিতাব কোনটি ? তিনি বললেন, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈলের ‘জামে’ সহীহ (বুখারী শরীফ)।” (হাদইউস্ সারী : ২/২৬২ পৃঃ)
(৫) “আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশমিরী (রহঃ) বর্ণনা করেন, ইমাম আবদুল ওয়াহ্হাব শারানী (রহঃ) লিখেন, তিনি স্বপ্নে দেখলেন, ইমাম বুখারী (রহঃ), রাসূল (সাঃ)-এর সামনে বুখারী শরীফ পড়ছেন। তার সাথে আরো আটজন সাথী, যাদের মধ্যে একজন হানাফী।” (কাশফুল বারী শারহুল বুখারী : ১/২৩১ পৃঃ)
হিদায়াত : ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর মত ব্যক্তিত্ব ও তার বুখারী সম্পর্কে মওদূদীর মত নাদান, জাহেল, বেউকুফ কি বলে তা দেখার বিষয় নয়। কিন্তু আফসোস হয় এই বিষয়ে যে, মওদূদীর কলমের অস্ত্রাঘাত থেকে ইমাম বুখারী ও তার বুখারী শরীফও রেহাই পেল না। কিভাবে রেহাই পাবে- যেখানে আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরাম, আয়িম্মায়ে কেরাম, মাশায়েখে কেরাম ও ওলামায়ে কেরাম পর্যন্ত রেহাই পায়নি। আল্লাহ মালুম এই কলমবাজের শাস্তি কি হবে।
Leave a Reply