1. info@izharehaq.com : MZakir :
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মুখোশ উন্মোচন (মওদূদী মতবাদ) আহলে সুন্নতের ফিক্বাহ শাস্ত্রের ইমাম: ইসলামী আমলের ক্ষেত্রে বিদয়াতীদের চক্রান্ত আহলে সুন্নতের আক্বীদামতে মহানবীর মর্যাদা: অতি ভক্তি কিসের লক্ষণ রেজভীদের চক্রান্ত হুবহু ইবনে সাবার চক্রান্তের মত: রাসূলকে আলিমুল গাইব বলা সাবায়ী চক্রান্ত: আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’ত সুবিন্যস্ত হওয়ার ইতিহাস কুরআন ও হাদীসের ভাষায় ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথ: নবুওয়াত ও রিসালত: মওদুদীবাদ ইবাদত: মওদুদীবাদ কুরআন মাজীদ ও দ্বীনের সংরক্ষণ: কুরআন সংরক্ষণের অর্থ: কুরআন সংরক্ষণে খোদায়ী ব্যবস্থাপনা: মওদুদীবাদ দ্বীন কী? দ্বীনে নূহ: দ্বীনে ইব্রাহীম: দ্বীনে ইসমাঈল: দ্বীনে ইউসুফ: দ্বীনে মূসা: দ্বীনে ঈসা: মওদূদীবাদ মওদুদী সাহেবের শিক্ষা-দীক্ষার পরিধি গোয়েবলসীয় নীতি : হিটলারের ঐ মুখপাত্রও ”জামাত-শিবিরের মিথ্যাচারের কাছে হার মানায়”: পর্ব ১ ইক্বামাতে দ্বীনের তাৎপর্য এবং বাতিলপন্থীদের বিকৃত ব্যাখ্যা সাহাবাগণ রাঃ সত্যের মাপকাঠি এবং তাদের ইজমা সর্বসিদ্ধান্ত মতে শরীয়তের দলীল সাহাবা রাঃ গণ সত্যের মাপকাঠি খোলাফায়ে রাশেদীনগণের সোনালী আদর্শ সর্বসম্মতিক্রমে শরিয়তের দলীল শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: “তাঁরাই সত্যের মাপকাঠি” শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: সাহাবায়ে কেরাম “সত্যের মাপকাঠি: মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৬ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৫

মওদূদীবাদের দর্পণে শী’আ মতবাদের ছবি: মওদূদীবাদের আয়নায় শীআদের প্রতিচ্ছবি।

নাম:
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৪৪৬ বার পড়া হয়েছে
মওদূদীবাদের দর্পণে শী’আ মতবাদের ছবি
উক্ত শিরোনামের আলোচনায় প্রবেশের পূর্বে আমরা সংক্ষিপ্তাকারে শীআ মতবাদের পরিচয় তুলে ধরব। যাতে শীআ মতবাদের ছবি মওদূদী দর্পণে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
শীআ মতবাদের মৌলিক ভিত্তি :
শীআ মতবাদের বিশেষ বৈশিষ্টাবলী ও শীআদের মৌলিক বিশ্বাসসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হল।
শীআদের মৌলিক বিশ্বাস : (১) কুরআন বিকৃতির আকীদা অর্থাৎ কুরআনে কারীম শাব্দিক ও অর্থগত হিসেবে বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীনভাবে বিকৃতি সাধনের অপচেষ্টা করা। যাতে ধর্মের মূল ভিতই নড়বড়ে ও সন্দিহান হয়ে পড়ে। (২) কুরআন-হাদীসের মধ্যস্থতাকে অস্বীকার। অর্থাৎ হযরতে সাহাবায়ে কিরামের বিরুদ্ধে অন্তরের মধ্যে অবিশ্বাস ও অনির্ভরতা সৃষ্টি করা। কারণ, যখন শিক্ষা ও প্রচার প্রসার সাধারণ মুসলমান পর্যন্ত পৌঁছার এই মাধ্যমগুলোই অনির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হবে তখন তো দীনের মূল শিক্ষার মাধ্যম বিকৃতি ও পরিবর্তনের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
শীআদের আমলী বৈশিষ্ট্যসমূহ : (১) ভোগ ও প্রবৃত্তির চাহিদার জন্য শরীআতের বিবাহ বিধান ছাড়াও মু’আ (সাময়িক বিবাহ) এর নামে যিনা- ব্যভিচারের অবকাশ বের করা। (২) সত্য থেকে গা ঢাকা দেওয়া। অন্যদের বিদ্রোহের ভয়ে “তাকিয়্যা” (নিজের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে অন্যটা প্রকাশ করা) করা। ধর্ম ও সওয়াবের নামে নিজের মনমত শরীআতের গোপন দরজা খোলা।
শীআ মতবাদের এ সকল মৌলিক বৈশিষ্টাবলী মানুষের মধ্যে ভালভাবেই পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। তাই এর জন্য কোন প্রমাণ পেশ করার প্রয়োজন নেই।
শীআ মতবাদের এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকা ও পরিচিতির পর এখন আমরা মওদূদীবাদের আয়নায় উক্ত ছবির কিছুটা আলোকচ্ছটা দেখাব।
মওদূদীবাদের আয়নায় শীআদের প্রতিচ্ছবি :
শীআদের উল্লেখিত বৈশিষ্টাবলীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক আকীদা হল- কুরআন বিকৃতির আকীদা। থাকে আল্লামা মওদূদী স্বীয় রচনাবলীর অনেক ক্ষেত্রে অবিকল পেশ করার চেষ্টা করেছেন। তাছাড়াও মওদূদীবাদের গঠনতন্ত্রে কুরআন বিকৃতির মত জঘন্য কুফরী আকীদা ও বাতিল বিশ্বাসসমূহ স্থান পেয়েছে।
কুরআন বিকৃতির আকীদার মূল কথা : মওদূদী সাহেব নিজ আন্দোলনের বুনিয়াদী ও প্রাথমিক গ্রন্থ “কুরআন কি চার বুনিয়াদী ইসতেলাহ” (কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা) এর মধ্যে কুরআন বিকৃতির শীআ আকীদার ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
লক্ষ্য করুন! প্রিয় পাঠক। উক্ত গ্রন্থের একস্থানে মওদূদী সাহেব। বলেছেন, আরবে যখন কুরআন অবতীর্ণ হত তখন প্রত্যেকটি ব্যক্তিই জানত যে, “ইলাহ” শব্দের অর্থ কি? এবং “রব” কাহাকে বলে? কিন্তু পরবর্তী শতাব্দীতে ধীরে ধীরে এসকল শব্দের (ইলাহ-রব- ইবাদত-দীন) ঐ আসল অর্থ যা কুরআন অবতীর্ণের সময় বুঝা যেত, তা পরিবর্তন হতে লাগল। এমনকি প্রত্যেকটি শব্দ নিজের সম্পূর্ণ ব্যাপকতা হারিয়ে একেবারেই সংকীর্ণ, বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গেছে যার ফলাফল এই হল যে, কুরআনের আসল দাবীই বুঝা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে গেল। সুতরাং এর বাস্তবতা এই দাঁড়াল যে, শুধু এই চারটি মৌলিক পরিভাষার অর্থের উপর পর্দা পড়ে যাওয়ায় কুরআনের তিন চতুর্থাংশের অধিক শিক্ষা তার বাস্তব রুহ বা উদ্দেশ্য হারিয়ে দৃষ্টি থেকে অগোচর হয়ে গেল। (পৃঃ ১০/১৩ সংক্ষিপ্ত)
মওদূদী সাহেবের উক্ত বক্তব্য কুরআন বিকৃতির আকীদার প্রতি কি পরিমাণ দিক নির্দেশনা দিয়েছে তা উল্লেখিত ইবারতের দ্বারাই সুস্পষ্ট হয়ে যায় । আর যে সকল বন্ধুগণ বক্রতা ও ভ্রষ্ট মন-মানসিকতা লালন করেন তারা তাদের চিন্তা-ফিকিরকে নিজের বক্রতা ও বিভ্রান্ত মতের ভিত্তিতে রচনা করার সুবর্ণ সুযোগ পেরে যান। বিশেষ করে এমন প্রেক্ষাপটে যখন আল্লামা মওদূদী অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পাঠকদেরকে সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক অপব্যাখ্যা এ বলে বুঝাতে চেয়েছেন যে, উল্লেখিত পরিভাষাসমূহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যেই দৃষ্টিতে তিনি বর্ণনা করেছেন, তা তার নিজস্ব কোন অভিমত নয়। বরং ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কিছু দলীল-প্রমাণও রয়েছে। অতঃপর তিনি উক্ত বিষয়ের আলোচনা দীর্ঘ করতে-করতে এক পর্যায়ে বলেছেন- কিছু লোক অভিধান এবং কুরআনের আয়াতের প্রমাণ ব্যতিরেকে আমার প্রত্যেক ব্যাখ্যাকেই নিজস্ব অভিমত বলে মনে করে। আর আমার মত কখনো ঐ সমস্ত লোকদের জন্য প্রশান্তির কারণ হতে পারে না, যারা আমার সাথে মত বিরোধ করে থাকেন। আমি উক্ত বিষয়ের প্রতি সম্পূর্ণ সজাগ দৃষ্টি রাখব যেন এই চারটি পরিভাষার পরিপূর্ণ অর্থ স্পষ্ট করে দিতে পারি। তাছাড়া আমি এ ব্যাপারে এমন কোন কথা কখনো বর্ণনা করব না যার প্রমাণ কোন অভিধানে বা কুরআনে পাওয়া যায় না। (কুরআনের মৌলিক চারটি পরিভাষা পৃষ্ঠা-১৪)
আল্লামা মওদূদীর অজ্ঞতা
আল্লামা মওদূদী উল্লেখিত আলোচনায় যেভাবে বই রচনা ও ইলম- গবেষণাকে শিশুদের খেলনায় পরিণত করে দিয়েছেন তা শুধু তাঁর মত একজন নগন্য চিন্তাবিদেরই কাজ হতে পারে। ইলম ও গবেষণার ময়দানে যে কোন মানুষ মন মত চর্চায় লেগে যেতে পারে না। এটা হল অনধিকার চর্চা। আল্লামা মওদূদীর পাঠকবৃন্দ হয়তো বা এই বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে উদাসীন রয়েছে। কিন্তু স্বয়ং আল্লামা মওদূদী তো উক্ত বিষয়ে নিশ্চিত অজ্ঞ নয় যে, তার মতের বিরোধীতাকারীগণ এ জবাবের দ্বারা আশ্বাস্ত হয়ে যাবে। তিনি এ গ্রন্থে যা কিছু উল্লেখ করেছেন তাহল, এক দিকে তিনি উক্ত চারটি শব্দের আভিধানিক অর্থের ব্যাখ্যা লিখেছেন। সাথে সাথে কুরআনের কিছু আয়াত একত্রিত করে একথার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, কুরআন মাজীদের এই আয়াতের এ শব্দ দ্বারা এই অর্থ উদ্দেশ্য আর ঐ আয়াতে ঐ অর্থ উদ্দেশ্য। এভাবেই তিনি প্রমাণ ও গবেষণা শেষ করে দিলেন। কিন্তু আল্লামা মওদূদীর সাথে ইখতেলাফকারীরা তার এই মনগড়া ইলম ও তাহকীককে এভাবেই মেনে নিবেন এটা কি হতে পারে? তাহলে তো আর মতভেদের কোন ক্ষেত্রই থাকবে না। বরং এক্ষেত্রে আল্লামা মওদূদীর জন্য জরুরী ছিল যেন তিনি প্রাথমিকভাবে প্রত্যেকটি শব্দের আভিধানিক অর্থ বর্ণনা করেন। অতঃপর কুরআনের আয়াতগুলোতে ঐ সকল অর্থগুলো নির্দিষ্ট করে বাস্তবায়ন করে দিতেন। তারপর এ কথা প্রমাণ করার জন্য যে, এটা তার নিজস্ব কোন মত নয় তিনি নিজের প্রত্যেকটি ব্যাখ্যাকে নির্ভরযোগ্য মুফাসীরীনে কিরামের রচনাবলী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে অকাট্যভাবে প্রমাণিত করতেন। কিন্তু তিনি সর্বস্বীকৃত এ পথটিকেও স্পষ্টভাবে পাশ কেটে গেছেন, শুধু তাই নয় বরং অত্যন্ত দুঃসাহসিকতার সাথে এ মতামত ব্যক্ত করতে চেয়েছেন যে, এ সকল বক্তব্য তার নিজস্ব অভিমত নয়। এ যেন শরাবকে শরবত বলে চালিয়ে যাওয়া।
আল্লামা মওদূদীর এ ভুলের শিকার যদি কোন প্রাচীন সেকেলে মেযাজের মকতবের শিক্ষক বা অন্ধ অনুসারীরা হত তাহলে এটা আশ্চর্যের কোন বিষয় ছিলনা। কিন্তু বিস্ময়ের কথা হল, আল্লামা মওদূদীর এ চমকপ্রদ বক্তব্য ও মুক্ত যুক্তিতে পড়ে কিছু মুমিন সালেহীন বান্দাও উক্ত ভুলের শিকার হয়ে পড়েছেন এবং কঠিন মন্তব্য করেছেন যে, আল্লামা মওদূদী স্বীয় কিতাবে সম্পূর্ণ গবেষণা ভিত্তিক কথা উপস্থাপন করেছেন। নিজের প্রত্যেকটি বক্তব্য ও ব্যাখ্যাকে দলিল দিয়ে পরিপূর্ণ রূপে প্রমাণিত করেছেন। তাছাড়া সেই যুগের লিখিত হযরত মাওলানা আলী মিয়া নদবী (রঃ) এর অমূল্য কিতাব “বর্তমান যুগে দীনের বুঝ ব্যাখ্যা” এর উপর মন্তব্য করে যিন্দেগী নামক পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মওদূদীর তাহকীক ও গবেষণাকে এভাবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর বলে অভিহিত করেছেন যে,
আমার নিকট আল্লামা মওদূদীর একটি বড় কৃতিত্ব ইহাও যে, তিনি নিজের অকাট্য দলীল প্রমাণ এবং ক্ষুরধার লিখনী দ্বারা ব্যক্তি পূজার শিকড় কেটে দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর জ্ঞানী ব্যক্তিগণ উন্মুক্ত বুদ্ধিও মেধার ভিত্তিতে তার গ্রন্থগুলো পাঠ করেন। যে সকল বক্তব্যে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেন না সে ক্ষেত্রে তারা তার সাথে মতবিরোধ করেন। (সূত্রঃ যিন্দেগী পূঃ ৩২ মার্চ-১৯৭৯)
উক্ত দাবী ভিত্তিহীন কেন হল?
সম্মানিত সম্পাদক উক্ত পত্রিকার ৩৩ নং পৃষ্ঠায় হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী (রঃ) এর সমালোচনা করতে যেয়ে একটি বিচ্যুতি এভাবে বর্ণনা করেছেন যে,
প্রশ্ন হল ঐ দীনী মেযাজ (স্বভাব) কি? মাওলানা সাহেবের জন্য তা অল্প কয়েক লাইনের মধ্যেই চিহ্নিত করা উচিৎ ছিল। জানা নেই কেন তিনি এই বিষয়টিকে অস্পষ্ট রেখে চলে গেছেন। (এই প্রশ্ন করার পর যিন্দেগী পত্রিকার সম্পাদক নিজেই ইসলামী মেয়াজের রূপরেখা বর্ণনা করে কেমন যেন হযরত আলী মিয়া নদভী সাহেবের ত্রুটি বা দূর্বলতাকে দূর করার প্রচেষ্টা করেছেন। অথত হরত মাওলানা আলী মিয়া সাহেব তার ব্যাখ্যা পরবর্তীতে বর্ণনা করেছেন।
জনাব আল্লামা আরুজ সাহেব জামায়াতে ইসলামীর মুক্ত চিন্তার অধিকারী জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের প্রশংসা করে যে বক্তন্য দিয়েছেন যে, তারা মুক্ত মনে তার কিতাবগুলো পাঠ করেন এবং যে সকল বক্তব্য সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিতে পারেন না সেক্ষেত্রে মওদূদীর সাথে ও মতবিরোধ করেন। এক্ষেত্রে মাওলানা সাহেবের উক্ত জোরদাবীর সমর্থনে আল্লামা মওদূদীর সাথে জামাআতে ইসলামীর বিরোধের কিছু দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বর্ণনা করা উচিৎ ছিল। তাহলে দাবীটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হত। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের ধ্যান- ধারণাতো এই যে, মুক্ত চিন্তার অধিকারী যে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি যদি আল্লামা মওদূদীর সাথে মতবিরোধ করে তাহলে তার জন্য জামায়াতে ইসলামীতে থাকার কোন অধিকার নাই। এজন্যই আল্লামা মওদূদীর সাথে মতবিরোধকারীদের কিছু দৃষ্টান্ত এখানে পেশ করা জরুরী ছিল।
যাতে কোন সন্দেহ না থাকে। কিন্তু তার প্রতি সামান্যতম ইঙ্গিতও আল্লামা আরুজের রচনায় উপস্থিত নেই। অথচ এর বিপরীতে হযরত মাওলানা আলী মিয়া সাহেব (রঃ) দীনের মেযাজ এবং নবুওতের মেযাজের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা নিজ কিভাবে সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। হযরত মাওলানা আলী মিয়া সাহেবের কিতাবের ৬৩ পৃষ্ঠায় এক স্বতন্ত্র শিরোনামই রয়েছে “উসওয়ায়ে আম্বিয়া ওয়া মেযাজে নবুওয়ত” এই শিরোনামের অধীনে প্রায় ২০ পৃষ্ঠা ব্যাপি কিতাবের ৮৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত উরু বিষয়বস্তুর আলোচনা রয়েছে। আল্লামা আরুজ সাহেব যদি উক্ত কিতাব অধ্যয়ন করে ৮০ তম পৃষ্ঠা থেকে সামনে অগ্রসর হন তাহলে আশা করা যায় তিনি তার উক্ত প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব পেয়ে যাবেন। সুতরাং নতুনভাবে তনু আমরা উক্ত বক্তব্যের ব্যাপারে আল্লামা আরুজের নিকট দৃষ্টান্ত তলব করা ব্যাতীত আর কিছু বলা দুষ্কর মনে করছি। আর এ আলোচনা আমরা এখানেই সমাপ্ত করা ও পূর্বের নদবো ফিরে যাচ্ছি।
আল্লামা আরুজের মি’রাজের জ্ঞান
সম্মানিত সম্পাদক জনাব আরুজ সাহেব শিল্পগী পত্রিকার ঐ পর্যালোচনার ৪১ নং পৃষ্ঠায় “মাওলানা নদভী কা ভরজে আমল” নামক এক শিরোনাম প্রস্তুত করে লিখেছেন :
মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী সাহেব মওদূদী সাহেবের উপস্থাপিত প্রমাণাদির প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপও করেন নাই। বরং তার দাবী খন্ডানোর জন্য উস্তাদ হাসান আল-হাজাবীর গ্রন্থ “দু’আতুল আকজাত” এর কিছু ইবারাতের শুধু অনুবাদ উল্লেখ করেছেন —— মাওলানা নদভী সাহেবের যদি উক্ত বক্তব্য প্রত্যাখান করাই উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে মাওলানা মওদূদীর উল্লেখিত প্রমাণাদিকে ভুল প্রমাণিত করে দিতেন।
কিন্তু তা তিনি করেনি। যদি কোন ব্যক্তি আল্লামা নদভীর মন্তব্যগুলো শুধু পাঠ করে, কিন্তু মাওলানা আবুল আ’লা মওদূদীর কিতাব না পড়ে দেখে তাহলে সে এটাই বুঝবে যে মাওলানা মওদূদী শুধু দাবী করেছেন তার কোন প্রমাণ পেশ করেন নাই। (সূত্র যিন্দেগী-৪১)
আল্লামা আরুজ উপরোল্লেখিত ইলম ও তাহকীকের বৃহদাংশে যা কিছু বর্ণনা করেছেন তার উপর বিস্তারিত আলোচনা করা তখনই যথোপযুক্ত হবে যখন তার ব্যাখ্যা “যিন্দেগী” পত্রিকায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হবে। এখন সংক্ষিপ্তভাবে সামান্য কিছু বর্ণনা করাই যথেষ্ট মনে করি। এ ব্যাপারে আমরা সর্বপ্রথম আল্লামা আরুজের দাবীকে সনাক্ত করব। অতঃপর একটি উদাহরণের মাধ্যমে তার বাস্তবতা প্রকাশ করে দিব।
(ক) আল্লামা আরুজের এ বক্তব্যের সারাংশ হল হযরত মাওলানা আলী মিয়া নদভী আল্লামা মওদূদীর কিতাবের উপর এমনিতেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন । এবং আল্লামা মওদূদীর ঐ দলীলগুলো একেবারেই খণ্ডন করেননি যা তিনি স্বয়ং লিপিবদ্ধ করেছেন।
(খ) আল্লামা আরুজের উল্লেখিত বক্তব্য এক আশ্চর্য কথা। ইন্দ্রজাল সম্বলিত বিরল লিখনী। তার এ ভেল্কি প্রকাশ পাওয়ার কারণ সম্ভবত এটা যে, তিনি আল্লামা মওদূদীর গ্রন্থ “কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা” গভীর মনযোগ সহকারে পাঠ করেননি। আর আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী সাহেবের কিতাব ঠাণ্ডা মাথায় পড়ার প্রয়োজনই মনে করেননি। এটাই কারণ যে, মৌলভী সাহেব মন্তব্য বা সমালোচনা করতে খুব তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যথায় তিনি কখনো হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী (রঃ) এর উপর এমন মারাত্মক অভিযোগ আনতে পারতেন না যে, তিনি আল্লামা মওদূদীর দলীল প্রমাণের প্রতি প্রক্ষেপই করেননি। যিন্দেগী পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদক সাহেবকে এ কথা বলা অবশ্যই অপাত্রে বীরত্ব দেখানো হবে যে, তিনি যেন একবার অনুগ্রহ করে এ লেখকের কথায় জনাব মওদূদী সাহেবের কিতাব নতুন করে পড়ে নেন। এবং হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) এর সমালোচনার উপর যেন ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করেন। এরপর একটু কষ্ট করে নিজের পাণ্ডুলিপিটি বিশুদ্ধভাবে সংশোধন করে দেখেন। তাহলে বুঝতে পারবেন জনাব মওদূদী সাহেব উল্লেখিত আলোচ্য বিষয়ে কোনটিকে দাবী সাব্যস্ত করেছেন আর কোনটিকে দলীল মনে করেছেন। যদি মনে কিছু না করেন তাহলে বলব যে, জনাব মওদূদী সাহেব এ স্থলে দাবী ও দলীল মিশ্রিত করে। ফেলেছেন। যাকে আপনি আল্লামা মওদূদীর দলীল-প্রমাণ মনে করে অনেক জোরে-শোরে মণদূদীর ওকালতী করতে চাচ্ছেন, তা প্রকৃতপক্ষে দলীল নয়। এবং এটাই তার দাবী। যাকে আল্লামা মওদূদী প্রমাণহীন পেশ করার দুঃসাহস্কিতা দেখিয়েছেন।
একটি দৃষ্টান্ত
উক্ত বক্তব্যকে পরিষ্কারভাবে বুঝানোর জন্য একটি উপমা বর্ণনা করছি। যেমন- মনে করুন, যায়েদ বলছে যে, কুরআনে কারীমে “সিজদার” যত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল- আত্মসমর্পণে মস্তক অবনত করা। অতঃপর নিজের এ দাবী প্রমাণ করার জন্য কোন অভিধান দেখে একথা বর্ণনা করে দিয়েছে যে, অভিধানে “সেজদা” শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণে মস্তক অবনত করাও আসে। তাহলে কি আপনি তার একথা মেনে নিবেন যে, সে তার দাবী পরিপূর্ণ প্রমাণ করে দিয়েছে। আর যদি আপনি এতটুকু আভিধানিক অর্থকেই কুরআনের তাফসীরের জন্য যথেষ্ট মনে করেন তবে নিশ্চিতভাবে
দলীল প্রমাণের প্রতি ভ্রক্ষেপই করেননি। যিন্দেগী পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদক সাহেবকে এ কথা বলা অবশ্যই অপাত্রে বীরত্ব দেখানো হবে যে, তিনি যেন একবার অনুগ্রহ করে এ লেখকের কথায় জনাব মওদূদী সাহেবের কিতাব নতুন করে পড়ে নেন। এবং হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) এর সমালোচনার উপর যেন ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করেন। এরপর একটু কষ্ট করে নিজের পাণ্ডুলিপিটি বিশুদ্ধভাবে সংশোধন করে দেখেন। তাহলে বুঝতে পারবেন জনাব মওদূদী সাহেব উল্লেখিত আলোচ্য বিষয়ে কোনটিকে দাবী সাব্যস্ত করেছেন আর কোনটিকে দলীল মনে করেছেন। যদি মনে কিছু না করেন তাহলে বলব যে, জনাব মওদূদী সাহেব এ স্থলে দাবী ও দলীল মিশ্রিত করে ফেলেছেন। থাকে আপনি আল্লামা মওদূদীর দলীল-প্রমাণ মনে করে অনেক জোরে-শোরে মওদুদীর ওকালতী করতে চাচ্ছেন, তা প্রকৃতপক্ষে দলীল নয়। এবং এটাই তার দাবী। যাকে আল্লামা মওদূদী প্রমাণহীন পেশ করার দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন।
একটি দৃষ্টান্ত
উক্ত বক্তব্যকে পরিষ্কারভাবে বুঝানোর জন্য একটি উপমা বর্ণনা করছি। যেমন- মনে করুন, যায়েদ বলছে যে, কুরআনে কারীমে “সিজদার” যত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল- আত্মসমর্পণে মস্তক অবনত করা। অতঃপর নিজের এ দাবী প্রমাণ করার জন্য কোন অভিধান দেখে একথা বর্ণনা করে দিয়েছে যে, অভিধানে “সেজদা” শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণে মস্তক অবনত করাও আসে। তাহলে কি আপনি তার একথা মেনে নিবেন যে, সে তার দাবী পরিপূর্ণ প্রমাণ করে দিয়েছে? আর যদি আপনি এতটুকু আভিধানিক অর্থকেই কুরআনের তাফসীরের জন্য যথেষ্ট মনে করেন তবে নিশ্চিতভাবে আল্লামা মওদূদী নিজের দাবীকে প্রমাণিত করে দিয়েছেন। তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হল এই যে, কুরআনের তাফসীরের জন্য এতটুকু কথা কক্ষনো যথেষ্ট নয়, হতেও পারে না। বরং তার জন্য এটা ও জরুরী যে, একথা প্রমাণ করতে হবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম এবং নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরীনে কিরাম এ অর্থ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। উক্ত পদ্ধতি ব্যতীত যে কোন তাফসীরই রচিত হোক না কেন তা প্রকৃত ইসলাম অনুসারীদের নিকট দলীলহীন দাবীরই নামান্তর । আল্লামা মওদূদী স্বীয় গ্রন্থ “কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা” এর মধ্যে এই মৌলিক মারাত্মক ভুলটিই কেেছন। এতদয়ত্ত্বেও জনাব মওদূদী সাহেব বার-বার একথা বলতে চেষ্টা করেছেন যে, এ ব্যাখ্যা তার নিজস্ব অভিমত নয়। যে সকল পাঠকবৃন্দ জনাব মওদূদী সাহেবের উক্ত গ্রন্থ গভীর মনযোগ সহকারে পাঠ করেছেন তাদের নিকট এ বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আল্লামা মওদূদী দীন ধর্মকে বুঝানের ক্ষেত্রে কিছু দৃষ্টিভঙ্গি পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। অতঃপর প্রত্যেকটি দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনে কুরআনের কিছু আয়াত অনুবাদসহ একত্রিত করে এ ঘোষণা দিয়েছেন যে, এসকল আয়াতগুলো ধারাবাহিক পাঠ করলে একথা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, কুরআনে কারীম রবুবিয়্যাত বা প্রতিপালককে একেবারেই প্রশাসক ও রাজত্বের সমার্থবোধক সাব্যস্ত করেছেন। (কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা-১২৩)
এ কথা স্পষ্ট যে, এ ধরনের উপস্থাপনাকে প্রতারণার দলীল বলা চলে । কিন্তু প্রকৃত দলীল বলা মুশকিল।
কুরআন বিকৃতির আকীদার কেন্দ্রবিন্দু
আল্লামা মওদূদী স্বীয় গন্থ “কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা” এর মধ্যে চারটি পরিভাষা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পর সর্বশেষ কুরআন বিকৃতির আকীদা এবং অবিশ্বস্ততার ভিত রচনা করে দিয়েছেন। যা সম্ভবত সাধারণ পাঠক কোন দিন অনুভবই করতে পারবে না। মওদূদী সাহেব “দীন” শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেন-
এই দীন শব্দটি আরবী ভাষায় চারটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। (১) কোন শক্তিধরের পক্ষ থেকে কর্তৃত্ব ও বিজয় (২) কোন শক্তিধরের সম্মুখে আনুগত্য ও বন্দেগী প্রকাশ করা (৩) নীতিমালা, সংবিধান, জীবন পদ্ধতি, যার অনুসরণ করা যায়। (৪) আত্ম সমালোচনা ও সিদ্ধান্ত, প্রতিদান ও পুরস্কার। (কুরআনের ৪টি মৌলিক পরিঃ ১৫৮)
অতঃপর আল্লামা মওদূদী উল্লেখিত ৪টি আয়াত দিয়ে উদাহরণ পেশ করার পর “দীন” শব্দের এক নতুন অভিনব অর্থ উদ্ভাবন করেছেন। তিনি বলেন “এ পর্যন্ত যা কিছু আলোচনা হল, কুরআনে কারীম এ শব্দকে প্রায় এসকল অর্থের জন্যই ব্যবহার করেছে। যা আরববাসীদের কথা-বার্তায় ব্যবহৃত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই যে, তারা এ “দীন” শব্দটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এবং তারা এর দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে এমন এক জীবন ব্যবস্থাকে, যাতে মানুষ কোন একজনকে শক্তিশালী-ক্ষমতাধর নেতা মেনে নিয়ে তার অনুসরণ ও আনুগত্যের উপর ইজ্জত-সম্মান, উন্নতি এবং পুরস্কারের আশাবাদী হবে। এবং তার অবাধ্যতায় লাঞ্ছনা- অবমাননা ও শাস্তির ভয় রাখবে। সম্ভবতঃ দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ পরিভাষা সম্বলিত শব্দ নেই। যা দীনের সম্পূর্ণ অর্থ বুঝাতে সক্ষম। বর্তমান যুগের শব্দ “ষ্টেট” প্রায়ই এক কথায় তার কাছাকাছি অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু এখনও ষ্টেট শব্দটি পূর্ণ দীনের অর্থ আয়ত্বে করতে আরো অধিক ব্যাপকতার প্রয়োজন রয়েছে। (চারটি মৌলিক পরিভাষা- ১৬৮/১৬৯)
আল্লামা মওদূদী নিজের উঁচু মর্যাদা ও স্বীয় রায় সঠিক হওয়ার ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, নিজের নব উদ্ভাবিত ও নব আবিষ্কৃত এ দাবী প্রমাণের জন্য কোন ভাষাবিদ, আরববাসী, পূর্বের উলামায়ে কিরাম এবং কোন তাফসীরবীদ থেকে কোন প্রকারের সাক্ষ্য, প্রমাণ, সূত্র কোন ধরনের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেননি। তিনি নিজের কোন্ সাফাইয়ের ভিত্তিতে কুরআন বুঝার হকগুলো পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরাম থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেই হক সংরক্ষণ করে নেয়ার দুঃসাহসিকতা দিলেন? তা বুঝা মুশকিল। আর একথা স্পষ্ট যে, এভাবে পূর্ববর্তীদের মধ্যস্থতা খতম করে দেওয়ার পর সিরাতে মুস্তাকীম বা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে আল্লাহর কালাম বিকৃতির রাজপথ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আল্লামা মওদূদী স্বীয় তাফসীর তাফহীমুল কুরআনে নিজস্ব নব আবিষ্কৃত সেই পথের উপরই অন্যদেরকে চালানোর অপচেষ্টা করেছেন। যেমন নাকি লিখক (মুফতী আব্দুল কুদ্দুস রুমী) “তাফহীমুল কুরআন সামাঝনে কী কৃশেস” নামক গ্রন্থে একথা বিস্তারিতভাবে প্রমাণ করেছেন। বিস্তারিত জানতে আগ্রহী পাঠকগণ সেখানে দেখে নিতে পারেন ।
আল্লামা মওদূদীর উপরোল্লেখিত চয়নকৃত অংশটুকুর প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, মওদূদী সাহেব যখন “দীন” শব্দের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক শব্দে তার চারটি প্রসিদ্ধ অর্থ থেকে সরে গিয়ে আরেকটি পঞ্চম অর্থ উদ্ভাবন করেছেন। যার ব্যাপারে তিনি নিজে ও পরবর্তী স্থানে একথা স্বীকার করেছেন যে, “দীন” শব্দটি উক্ত অর্থে আরবদের কথা-বার্তায় ব্যবহার হত না। এখন প্রশ্ন হয় যে, যখন এ শব্দটি উক্ত অর্থের জন্য আরবদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল না, ব্যবহৃত হত না তখন আরবরা উক্ত শব্দের অর্থ বুঝেছিল কিনা?
এ প্রশ্নের জবাব তো স্পষ্ট এটাই যে, তারা এ শব্দের অর্থ বুঝতে সক্ষম হয় নাই। কেননা এ অর্থে উক্ত শব্দ তাদের মধ্যে ব্যবহারই হত না। এমতাবস্থায় উক্ত শব্দের এ অর্থ আল্লামা মওদূদীর অন্তরে কোথা থেকে অবতীর্ণ হল। অন্য দিকে মওদূদী সাহেব হযরত সুফিয়ায়ে কিরামের ইলকায়ে রব্বানী তথা অন্তরে আল্লাহ প্রদত্ত গোপন রহস্য উদঘাটনের প্রবক্তাও নন যে, একথা মেনে নিব যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্তরে ইলকা হয়েছে। তাহলে এই ইলকা বা নতুন কথা অন্তরে ঢালা কার পক্ষ থেকে মানা হবে? শয়তানের, না অন্য কারো পক্ষ থেকে?
এটাই কুরআন বিকৃতি আকীদার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু যাকে কুরআন বিকৃতির প্রথম ধাপ বলা চলে। এ অবস্থায় বিশেষভাবে চিন্তা করলে অন্তরে ঘূর্ণিপাক খাওয়ার কারণ হল এই যে, যখন দীনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক শব্দই আল্লামা মওদূদীর কুরআন বিকৃতির প্রথম শিকার হল- তাহলে এ ভিত্তির উপর দীনের যত প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে- যা প্রকৃতপক্ষে মূল দীন যা পূর্বসূরী নবী-সাহাবাদের থেকে পাওয়া গেছে- তার উপর কোন দিনই হবে না। বরং তা হবে নতুন দীন মওদূদীর নতুন ইসলাম ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরির আরো
© All rights reserved © 2019 www.izharehaq.com
Theme Customized BY LatestNews