আবুল আ’লা মওদূদী মরহুম যেভাবে হাদীস অস্বিকারকারীদের কাতারে নাম লেখালেন!
মাওলানা লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
জামাআতে ইসলামী দলটির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আ’লা মওদূদী সাহেব একজন বিতর্কিত মানুষ। তার লেখনি ও বক্তব্যগুলো ভালো ও মন্দের মিশ্রণে এমনভাবে ঘুলাটে যে, তাকে এক ব্যাক্যে বাতিল বলা সাধারণ্যের কাছে দুস্কর। কিন্তু আহলে ইলমদের কাছে তার ভ্রান্তিতা দিনের আলোর মত পরিস্কার।
অতি আধুনিক মানুষটির কলমে যেমন ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছে। তেমনি তার কলমের কালো কালিতে ইসলামের সৌন্দর্য ও মৌলিকত্ব ভূলুণ্ঠিতও হয়েছে।
মাওলানা মওদূদী সাহেবের ভ্রান্তিতা বিষয়ে উলামায়ে হক বিভিন্ন আঙ্গিকে কলম ধরেছেন। তার স্বেচ্ছাচারীতামূলক তাফসীর। ভুল মাসায়েল। ভ্রান্ত আকীদা। দ্বীনের বিকৃতি ইত্যাদি।
আমি আজকে আপনাদের সামনে মাওলানা মওদূদী সাহেবের একটি ভ্রান্ত দিক সম্পর্কে সামান্যতম আলোকপাত করতে চাই।
মাওলানা মওদূদী সাহেব যেমনিভাবে কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে স্বর্ণালী পূর্বসূরীদের মত ও পথ ছেড়ে দিয়ে নিজের বিবেক বুদ্ধি ও বুঝকে মানদণ্ড বানিয়ে তাফহীমুল কুরআন নামে ‘তাহরীফুল কুরআন’ এর পথকে আকড়ে ধরেছেন। তেমনি হাদীসের ক্ষেত্রেও জরাহ তা’দীলের ইমামদের মতকে অগ্রাহ্য করে নিজস্ব বোধ-বুদ্ধি ও বিবেককেই মানদণ্ড বানিয়ে হাদীস অস্বিকারের পথকে সুগম করেছেন।
হাদীস বিষয়ে মাওলানা মওদূদীর মানসিকতা!
‘আর হাদীস শাস্ত্রের দৃষ্টিতে কোন হাদীসের বর্ণনা পরম্পরা মজবুত হওয়ার ফলে এটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে না যে, তার “মতন” (মূল হাদীস) যতই আপত্তিকর হোক না কেন তাকে চোখ বন্ধ করে “সহী” বলে মেনে নিতে হবে। বর্ণনা পরম্পরা সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবার পরও এমন অনেক কারণ থাকতে পারে, যার ফলে এমন “মতন” ত্রুটিপূর্ণ আকারে উদ্ধৃত হয়ে যায় এবং এমন সব বিষয়বস্তু সম্বলিত হয় যে, তা থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, একথাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ নিসৃত হতে পারে না। তাই সনদ তথা বর্ণনা পরস্পরার সাথে সাথে “মতন”ও দেখা অপরিহার্য। যদি মতনের মধ্যে সত্যিই কোন দোষ থেকে থাকে তাহলে এরপরও অযথা তার নির্ভূলতার ওপর জোর দেয়া মোটেই ঠিক নয়। [তাফহীমুল কুরআন-৮/১৩২-১৩৩, সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-৬৩, টিকা নং-৬০, আধুনিক প্রকাশনী ১১শ প্রকাশ]
মাওলানা মওদূদী সাহেব তার নিজস্ব মতবাদের মাধ্যমে সনদকে হাদীস গ্রহণের মানদণ্ড হওয়া থেকে অস্বিকার করে দিলেন। অথচ মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতে ‘সনদ হল দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত’। [সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দিমা]
হাদীসের মতনকে তিনি তার বিবেক বুদ্ধি অনুপাতে মানার এক নতুন মূলনীতি কায়েম করেছেন। যা তাকে অনেক বিশুদ্ধ হাদীসকে অস্বিকার করতে উৎসাহ যুগিয়েছে।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কিত হাদীস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَمْ يَكْذِبْ إِبْرَاهِيمُ النَّبِيُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ، قَطُّ إِلَّا ثَلَاثَ كَذَبَاتٍ، ثِنْتَيْنِ فِي ذَاتِ اللهِ، قَوْلُهُ: إِنِّي سَقِيمٌ، وَقَوْلُهُ: بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَذَا، وَوَاحِدَةٌ فِي شَأْنِ سَارَةَ، فَإِنَّهُ قَدِمَ أَرْضَ جَبَّارٍ وَمَعَهُ سَارَةُ، وَكَانَتْ أَحْسَنَ النَّاسِ، فَقَالَ لَهَا: إِنَّ هَذَا الْجَبَّارَ، إِنْ يَعْلَمْ أَنَّكِ امْرَأَتِي يَغْلِبْنِي عَلَيْكِ، فَإِنْ سَأَلَكِ فَأَخْبِرِيهِ أَنَّكِ أُخْتِي، فَإِنَّكِ أُخْتِي فِي الْإِسْلَامِ، فَإِنِّي لَا أَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ مُسْلِمًا غَيْرِي وَغَيْرَكِ،
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাবী ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কখনো মিথ্যা বলেন নি; তিনবার (রূপক মিথ্যা) ব্যতীত। দু’বার আল্লাহ সস্পর্কিত। একবার তো তিনি বলেছিলেন, আমি অসুস্থ আর তাঁর কথা, “বরং এদের বড়টাই একাজ করেছে” (মূর্তি ভেঙ্গেছে)। আরেকটা ‘সারা’ সম্পর্কে। যখন তিনি এক অত্যাচারীর দেশে গিয়েছিলেন, (স্ত্রী) সারাও সঙ্গে ছিলেন। সারা ছিলেন সেরা সুন্দরী। তখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) সারাকে বললেন, এ অত্যাচারী রাজা যদি জানতে পারে যে, তুমি আমার স্ত্রী, তবে তোমাকে ছিনিয়ে নেবে। কাজেই তোমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, তুমি বলবে যে, তুমি আমার বোন। ইসলামের দিক দিয়ে তুমি তো আমার বোনই হও। কেননা তুমি আর আমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মুসলিম আছে বলে আমার জানা নেই। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩৭১, ইফাবা-৫৯৩২, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৩৫৮]
এখানে দু’টি বিষয়। এক হল, হাদীসটির বিশুদ্ধতা। আরেক হল, হাদীসটার ব্যাখ্যা?
এ হাদীসটি বিশুদ্ধ হওয়া বিষয়ে উম্মতের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই।
তবে তারা হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। সেটি হল এই যে, এখানে মূলত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মিথ্যা বলেননি। বরং তিনি কৌশল অবলম্বন করেছেন।
১ম ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হল, মানুষ শারিরীকভাবেও অসুস্থ্য হয়, আবার মানসিকভাবেও অসুস্থ্য হয়। শরীর সুস্থ্য হলেও যদি মন সুস্থ্য না থাকে, তাহলে এটাকে পরিপূর্ণ সুস্থ্যতা বলে না।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার পিতা ও জাতির মূর্তিপূজার কারণে মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছিলেন। সেই হিসেবে তার মানসিক অসুস্থ্য হবার কথা বলাটা কোন মিথ্যা কথা নয়।
কিন্তু বাহ্যিকভাবে যেহেতু মানুষ শারিরীক সুস্থ্যতাকেই সুস্থ্যতা মনে করে তাই বাহ্য দৃষ্টিতে তা মিথ্যা বলে মনে হয়। এ কারণে এটাকে বাহ্য দৃষ্টিতে মিথ্যা বলে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
২য় ক্ষেত্রেও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মৌলিকভাবে মিথ্যা বলেননি। বরং মূর্তিপূজকদের বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাতের জন্য শিক্ষার জন্য তাদের বিশ্বাস হিসেবে এমনটি বলেছেন।
কারণ, মূর্তিপূজকদের বিশ্বাস ছিল, এ মূর্তিগুলোই সবাইকে সৃষ্টি করেছে। তারা পরাক্রমশালী। শক্তিধর। সব কিছু করার ক্ষমতা রাখে।
তাদের এ দাবী যে অসাড়। অন্তসারশূণ্য। তা তাদের হৃদয়ে বদ্ধমূল করার জন্য ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কাফেরদেই বিশ্বাস অনুপাতে বলেছেন যে, যদি এসব মূর্তি ক্ষমতাবানই হয়ে থাকে, তাহলে তারা পরস্পর ঝগড়া করে ছোট মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তাহলে এখানে মিথ্যা বলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উদ্দেশ্য নয়। বরং তাদের অন্ধ বিশ্বাস ভেঙ্গে দেয়া উদ্দেশ্য ছিল। তাছাড়া তিনি মিথ্যা হিসেবেও কথাটি বলেননি, বরং তাদের বিশ্বাস অনুপাতে তাদের কথাটি শুনিয়েছেন।
তাই তার কথাটি সত্যিকার অর্থে মিথ্যা নয়। কিন্তু বাহ্য দৃষ্টিতে মিথ্যার মত হওয়ায় এটিকেও মিথ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩য় কথাটি যে মিথ্যা নয়, তা হাদীস দ্বারাই পরিস্কার। সারা আলাইহিস সালামতো ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মুসলিম হিসেবে বোনই হোন। তাহলে এটা মিথ্যা হল কিভাবে?
কিন্তু এটাও যেহেতু দিব্য দৃষ্টিতে মিথ্যার মত মনে হয়, তাই এটাকেও মিথ্যা হিসেবে তা’বীর করা হয়েছে।
তাহলে আমরা হাদীসটি বিশুদ্ধ মানার পরও ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মত মহান নবীর চরিত্রকে মিথ্যার কালিমা লেপন থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম।
আর একাজটিই করেছেন পূর্বযুগের বিজ্ঞ উলামা ও মুহাদ্দিসগণ।
বুখারী মুসলিমে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসটিকে অস্বিকার করার কোন প্রয়োজনই পড়ে না। কিন্তু মাওলানা মওদূদী সাহেব উক্ত হাদীসটি অস্বিকার করার জন্য তার সীমিত কিন্তু স্বাধীনচেতা বুদ্ধি খাটিয়ে যা করেছেন রীতিমত বিস্ময়কর। তিনি লিখেনঃ-
“দুর্ভাগ্যক্রমে হাদীসের এক বর্ণনায় একথা এসেছে যে, হযরত ইরাহীম (আ) তাঁর জীবনে তিনবার মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে এটি একটি “মিথ্যা”। দ্বিতীয় “মিথ্যা” হচ্ছে, সূরা সাফ্ফাতে হযরত ইবরাহীমের (انى سقيم) কথাটি। আর তৃতীয় “মিথ্যাটি” হচ্ছে তাঁর নিজের স্ত্রীকে বোন বলে পরিচিত করানো। একথাটি কুরআনে নয় বরং বাইবেলের আদি পুস্তকে বলা হয়েছে। এক শ্রেনীর বিদ্বানদের “রেওয়াত” প্রীতির ব্যাপারে সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে যে, তাদের কাছে বুখারী ও মুসলিমের কতিপয় বর্ণনাকারীর সত্যবাদিতাই বেশী প্রিয় এবং এর ফলে যে একজন নবীর ওপর মিথ্যা বলা অভিযোগ আরোপিত হচ্ছে, তার কোন পরোয়াই তাদের নেই”। [তাফহীমুল কুরআন-৮/১৩২, সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-৬৩, টিকা নং-৬০, আধুনিক প্রকাশনী ১১শ প্রকাশ]
মাওলানা মওদূদী সাহেব বুখারী মুসলিমে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসটিকে সরাসরি অস্বিকার করে দিলেন।
বিশুদ্ধ হাদীসকে অস্বিকার করতে গিয়ে তিনি দুঃখজনক কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন-
১- দুর্ভাগ্যক্রমে হাদীসের বর্ণনায় এসেছে।
২- এসব বাইবেলের কথা। নবীজীর কথা হতে পারে না।
৩- হাদীসের বর্ণনার প্রতি আসক্তি সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছু নয়।
এমন সব শব্দ প্রয়োগ করে যিনি বিশুদ্ধ হাদীসকে পরিত্যাগ করেন। এমন ব্যক্তিকে হাদীস অস্বিকারকারী বলে সন্দেহ করাটা কি অযৌক্তিক?
সুলাইমান আলাইহিস সালাম সম্পর্কিত বুখারীর হাদীস অস্বিকার!
মাওলানা মওদূদী সাহেব তার বিতর্কিত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফহীমুল কুরআন’ এ লিখেনঃ
তৃতীয় দলটি বলেন , একদিন হযরত সুলাইমান কসম খান , আজ রাতে আমি সত্তরজন স্ত্রীর কাছে যাবো এবং প্রত্যেক গর্ভে একজন করে আল্লাহর পথের মুজাহিদ জন্ম দেব। কিন্তু একথা বলতে গিয়ে তিনি ইনশাআল্লাহ বলেননি। এর ফলে মাত্র একজন স্ত্রী গর্ভবতী হয় এবং তাঁর গর্ভেও একটি অসমাপ্ত ও অপরিপক্ক শিশুর জন্ম হয়। দাই শিশুটিকে এনে হযরত সুলাইমানের আসনের ওপর ফেলে দেয়। এ হাদীসটি হযরত আবু হুরাইরা (রা ) নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। বুখারী , মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন রাবীর মাধ্যমে এটি উদ্ধৃত করেছেন। বুখারী শরীফেই এ হাদীসটি যেসব রাবীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তার কোনটিতে স্ত্রীদের সংখ্যা বলা হয়েছে ৬০, কোনটিতে ৭০, কোনটিতে ৯০, কোনটিতে ৯৯, আবার কোনটিতে ১০০ও বলা হয়েছে। সনদের দিক দিয়ে এর মধ্য থেকে অধিকাংশই শক্তিশালী এবং রেওয়ায়াত হিসেবে এগুলোর নির্ভুলতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা যেতে পারে না। কিন্তু এ হাদীসের বিষয়বস্তু সুম্পষ্টভাবে সাধারণ বিবেক – বুদ্ধির বিরোধী। এর ভাষা বলছে , একথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এভাবে বলেননি যেভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। বরং তিনি সম্ভবত ইহুদীদের মিথ্যা ও অপবাদমূলক কিচ্ছা – কাহিনীর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে কোন পর্যায়ে একে এভাবে উদাহরণ স্বরূপ বর্ণনা করে থাকবেন এবং শ্রোতার মনে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়ে থাকবে যে , নবী করীম (সা ) নিজেই এ ঘটনা বর্ণনা করছেন। এ ধরনের রেওয়ায়াতকে নিছক জোরে লোকদের হজম করাবার চেষ্টা করানো দীনকে হাস্যাস্পদ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা, সূরা সা’দ, টিকা নং ৩৬, খণ্ড-১৩, পৃষ্ঠা-১০৯, আধুনিক প্রকাশনী]
মাওলানা মওদূদী সাহেব প্রথমে বললেনঃ-
১
হাদীসটি বুখারী মুসলিমের একাধিক স্থানে আসছে।
২
হাদীসটি সনদের বিচারে বিশুদ্ধ হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
তারপর বুখারী মুসলিম বর্ণিত এ সহীহ হাদীসটিকে অস্বিকার করে মন্তব্য করলেনঃ-
১
হাদীসটি বিবেক বুদ্ধির বিরোধী।
২
হাদীসটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেননি। সাহাবী আবূ হুরায়রা রাঃ ভুলে এমনটি বলেছেন। নাউজুবিল্লাহ।
৩
হাদীসটির বক্তব্য মূলত ইহুদীদের মিথ্যা ও অপবাদমূলক কিচ্ছা কাহিনী। নবীজীর হাদীস নয়।
৪
এমন হাদীস বিশ্বাস করা দ্বীনকে হাস্যাস্পদ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বুখারী মুসলিমে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসকে অস্বিকার করার জন্য এমন ভয়ংকর ৪টি মন্তব্য করেছেন মওদূদী সাহেব।
তাহলে তিনি আসলেই আহলে সুন্নাতের অনুসারী নাকি ‘মুনকিরীনে হাদীস’ তথা হাদীস অস্বিকারকারী দলেরই একজন একনিষ্ট কর্মী? জাতির কাছে এ প্রশ্ন রইল।
ইউসুফ আলাইহিস সালামের চারিত্রিক পরিশুদ্ধতা যাচাই সম্পর্কিত হাদীস
মাওলানা মওদূদী সাহেব ইউসুফ আলাইহিস সালাম সম্পর্কিত একটি মু’জিজা বিষয়ক ঘটনা এভাবে উদ্ধৃত করেনঃ-
কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে, একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু এ সাক্ষ্য পেশ করেছিল। শিশুটি ঐ ঘরে দোলনায় শায়িত ছিল। আল্লাহ তাকে বাকশক্তি দান করে তার মুখ দিয়ে এ সাক্ষের কথা উচ্চারণ করিয়েছিলেন। কিন্তু এ বর্ণনাটি কোন নির্ভুল সনদের মাধ্যমে প্রমাণিত নয় । আর তাছাড়া এ ব্যাপারে অযথা মু’জিযার সাহায্য নেয়ার কোন প্রয়োজন অনুভূত হয় না। সাক্ষদাতা যে পরিবেশগত সাক্ষের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা ছিল যথার্থই যুক্তিসংগত ব্যাপার এ সাক্ষের প্রতি দৃষ্টি দিলে এক মুহূর্তেই বুঝা যায় যে, এ ব্যক্তি অতীব বিচক্ষণ, সূক্ষ্মদর্শী ও ব্যাপকতর অভিজ্ঞতার অধিকারী ছিল। ঘটনার চিত্র তার সামনে এসে যেতেই সে তার গভীরে পৌঁছে গেছে। বিচিত্র নয় যে, উল্লেখিত ব্যক্তি কোন বিচারপতি বা ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারে। (উল্লেখ থাকে, মুফাসসিরগণ দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাক্ষদানের যে বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন তা ইহুদী বর্ণনা থেকে গৃহীত হয়েছে। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-৬/৮৭, সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-২৬, টিকা নং-২৪, আধুনিক প্রকাশনী]
মওদূদী সাহেব মু’জিজা অস্বিকার করার জন্য কয়েকটি মন্তব্য করেছেনঃ-
১
এ সংক্রান্ত বর্ণনা নির্ভূল সনদে প্রমাণিত নয়।
২
বর্ণনাটি ইহুদীদের থেকে গৃহিত।
৩
অযথা মু’জিজার দিকে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। যুক্তি দিয়েই তা খণ্ডানো যায়।
এভাবে ভয়ানক শব্দ প্রয়োগ করে তিনি উক্ত বিষয়ক হাদীসকে অস্বিকার করেছেন। অথচ এ সংক্রান্ত হাদীস বিশুদ্ধ সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে।
যেমন-
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: ” تَكَلَّمَ أَرْبَعَةٌ صِغَارٌ: عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلامُ، وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ، وَشَاهِدُ يُوسُفَ، وَابْنُ مَاشِطَةِ ابْنَةِ فِرْعَوْنَ “
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, চারজন শিশু বাক ফোটার আগেই কথা বলেছে। ঈসা আলাইহিস সালাম। যুরাইজ। ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাক্ষী। ফিরআউন সন্তান ইবনে মাশিতাহ। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৮২১, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৩৮৩৫, আলমু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১২২৭৯, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৫১৯]
إسناده حسن، فقد سمع حماد بن سلمة من عطاء بن السائب قبل الاختلاط عند جمع من الأئمة، وأبو عمر الضرير: اسمه حفص بن عمر البصري روى له أبو داود، وهو صدوق، وباقي رجاله ثقات رجال الصحيح.
وأخرجه الطبراني (12280) عن عبد الله بن أحمد بن حنبل، عن أبيه، بهذا الإسناد. (حاشية مسند احمد بن حنبل، الشيخ شعيب الأرنوت، رقم الحديث-2821)
এটি হাসান পর্যায়ের হাদীস। ইমাম হাকিমের মতে এটি সহীহ হাদীস। বাতিল বলার কোন সুযোগ নেই।
কিন্তু মাওলানা মওদূদী সাহেব তার খোড়া যুক্তির আলোকে এমন একটি হাদীসকে ইহুদীদের থেকে নেয়ার দোহাই দিয়ে বাতিল করে দিলেন।
তাহলে তিনি কি হাদীসের বন্ধু নাকি মুনকিরীনে হাদীসের দোস্ত? এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
Leave a Reply