সিরিজ-৩
মিথ্যাচারের উপর দাঁড়িয়ে আছে কারা? কওমী শিক্ষাব্যবস্থা না জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস?
বেশি বেশি শেয়ার করে সত্য প্রচারে এগিয়ে আসুন। জাযাকুমুল্লাহ।
ইদানিং মওদূদীপন্থী জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী ভাইগণ কওমী শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোসাল মিডিয়ায় আঙ্গুল তুলার দৃশ্য ভাইরাল। তারা বলছেন- “কওমী শিক্ষা ব্যবস্থা না কি মিথ্যাচারের উপর দাঁড়িয়ে আছে”। নাউজুবিল্লাহ।
অথচ বিষয়টা একবারে বিপরীত।
মিথ্যাচার ও ছল চাতুরীর ভিত্তির উপর দন্ডায়মান আলীয়া মাদরাসার ইতিহাস; যা আলীয়া মাদরাসার ইতিহাস নামক পুস্তকে মাওলানা আব্দুস সাত্তার সাহেব সহ অনেক আলেম স্ববিস্তারে তোলে ধরেছেন। ইনশাআল্লাহ এবিষয়ে আমাদের পরবর্তী সিরিজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আজকে আলোচনা হবে আমাদের প্রকাশিত সিরিজ ১ ও ২ এর মতো সিরিজ-৩. জামায়াতে ইসলামীর মিথ্যাচার সম্পর্কে। চলুন তাইলে শুরু করা যাক।
মওদূদী সাহেব ‘আল-জমিয়ত’
পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করা
সংক্রান্ত জামায়াতীদের মিথ্যাচার:
জামায়াত নেতা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ ‘মাওলানা মওদূদীর বিরোধিতার ইতিহাস’ শিরোনামে লিখেছেন-
“মাওলানা মওদূদী সাহেবের বিরোধিতা কখন, কিভাবে কোথা হইতে শুরু হয়, তাহা আলোচনা করা প্রয়োজন। ইহাতে প্রকৃত ব্যাপার নিরপেক্ষ সত্যসন্ধানী মুসলমানের কাছে উদঘাটিত হইয়া যাইবে। মাওলানা মওদূদী সাহেব ১৯২৫ সনে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপত্র আল-জমিয়তের সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে কংগ্রেসকে সমর্থন গ্রহণ করে এবং আল-জমিয়ত পত্রিকা মারফত মাওলানা মওদূদী সাহেবকে কংগ্রেসের অনুকূলে প্রোপাগান্ডা করিতে চাপ দেয়, তখন মাওলানা মওদূদী সাহেব উক্ত পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। কংগ্রেস ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলার রাষ্ট্রে পরিণত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিবার পর এক কলম কালি কিংবা একটি কথা দ্বারাও কংগ্রেসের সহযোগিতা মুসলমানের পক্ষে অন্যায় এবং ইসলামবিরোধি কাজ বলিয়া তিনি ঘোষণা দিয়াছিলেন। ইহাতে কংগ্রেসপন্থী আলেমরা রীতিমত মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে উঠেন”। (জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে-পৃ. ৯)।
এ কে এম ইউসুফ সাহেবের অনুরূপ লিখেছেন, ‘সত্যের আলো’ লেখক সিলেটের মাওলানা বশীরুজ্জামান। তিনি উপরোক্ত কথাগুলো ঈষৎ পরিবর্তন ও সংক্ষেপন করে লিখেছেন-
“কিছু সংখ্যক উলামায়ে কিরামের বিরোধিতার পিছনে রয়েছে এক করুণ ইতিহাস। ১৯২৫ সনে মাওলানা যখন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপত্র আল-জমিয়ত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, তখন জমিয়ত রাজনৈতিক অঙ্গনে কংগ্রেসের অনুকূলে প্রচারনা চালানোর জন্য মাওলানার উপর চাপ সৃষ্টি করে। মাওলানা তা অস্বীকার করে পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন এবং ঘোষণা করেন যে, কংগ্রেস ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় , তার অনুকূলে কোন কথা বলা কিংবা কোন প্রকার সহযোগিতা করা মুসলমানদের জন্য অন্যায় ও ইসলামবিরোধী কাজ। এতে কংগ্রেসী উলামায়ে কিরাম মাওলানার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেন।” (সত্যের আলো-পৃ. ১৭১)
সিলেটের আরেক তরুণ জামাআতী মিথ্যাবাদী লিডার আসলম হোসাইন তার পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে লিখেছেন-
“আর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কংগ্রেসকে সমর্থন জানায় এবং আলজমিয়ত পত্রিকায় মাওলানা মওদূদীকে কংগ্রেসের অনুকূলে প্রোপাগান্ডা করতে চাপ দেয়। কিন্তু মাওলানা মওদূদী এই সর্বনাশা আন্দোলন মেনে নিতে পারেননি।
(আলোচিত অভিযোগের কাঙ্ক্ষিত জবাব, প্রথম মুদ্রন, ২০১৯, পৃষ্ঠা, ১৭)
উত্তর ও খন্ডন:
উপরে যে কথাগুলো এ কে এম ইউসুফ সাহেব এবং তার পয়রবী করে বশিরুজজামান ও আসলাম হোসাইন লিখেছেন। তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এটা উলামায়ে কিরামের উপর জঘন্য মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছু নয়।
তাদের এ কথাগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তারা নিজ গুরু মওদূদী সাহেবের জীবনবৃত্তান্ত বা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ইতিহাস সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত নন। জমিয়ত কখন রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে? তাও সঠিকভাবে তারা জানেননা।
মওদূদী সাহেবের ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করার যে কারণ তারা বর্ণনা করেছেন, তা আগাগোড়া মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরদের লিখিত বর্ণনার সথে মিলিয়ে দেখলে তাদের মিথ্যাচার ও অপপ্রচার দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে।
আসুন, দেখি ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পদকের পদ ত্যাগ করা সম্পর্কে স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচররা কি বলছেন?
মওদূদী সাহেবের বক্তব্য:
জামায়াতের দলীয় রচনা মুহাম্মদ ইউসুফ ভুট্টা কর্তৃক সংকলিত এবং এদারায়ে মাআরিফে ইসলামী লাহোর কর্তৃক প্রকাশিত ‘مولانا مودوی اپنی اور دوسروں کی نظر میں নামক বইয়ে মওদুদী সাহেবের স্বহস্তে লিখিত একটি আত্মজীবনী সন্নিবেশিত হয়ে আছে। এ আত্মজীবনীটি তিনি ১৯৩২ সালে তার জনৈক বন্ধু সাইয়িদ মানযার আলী আশহার (‘মানযারুল কিরাম’ বইয়ের লেখক) সাহেবের অনুরোধে পত্রস্থ করেছিলেন। এতে মওদূদী সাহেব নিজের জীবনবৃত্তান্ত উল্লেখ করতে যেয়ে লিখেন-
“১৯২০ সালের শেষাংশে আমি দিল্লী ফিরে আসি। ১৯২১ সালের প্রথমাংশে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে- মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ ও মাওলানা আহমদ সাঈদ সাহেবদ্বয়ের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। এ বছর তারা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে ‘মুসলিম’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং আমাকে এর সম্পাদক নিযুক্ত করেন। পত্রিকাটি ১৯২৩ সাল পর্যন্ত জারি থাকে এবং শেষ অবধি আমিই এর সম্পাদক ছিলাম।
১৯২৩ সালে ‘মুসলিম’ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায় আর আমি হায়দারাবাদের উদ্দেশ্যে দিল্লী ত্যাগ করি। কিন্তু পথিমধ্যে ভূপাল আমাকে আটকে ফেলে এবং আমি হায়াদারাবাদ যাবার ইচ্ছা পরিত্যাগ করি। ভূপালে দেড় বছর কায়মনে বইপুস্তক অধ্যয়নে প্রবৃত্ত থাকি এবং দু একটি নিবন্ধ ব্যতীত লেখালেখির কোন কাজই করিনি। ১৯২৪ সালের প্রথমাংশে দিল্লী ফিরে আসি। তথায় মাওলানা মুহাম্মদ আলী সাহেবের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি ‘হামদর্দ’ পত্রিকায় আমাকে নিজের সহযোগী করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু এ সময় মাওলানা আহমদ সাঈদ সাহেব জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকা পকাশ করার উদ্যোগ নেন এবং পূর্ব-সম্পর্কের কারণে আমি হামদর্দের উপর ‘আল-জমিয়ত’কে প্রাধান্য দেই।
তাছাড়া এ প্রাধান্য দানের আরেকটি কারণ ছিল এই যে, আমি স্বভাবগত ভাবে স্বকীয়তা পছন্দ করে থাকি। যাই হোক, ১৯২৫ সালের প্রথম থেকে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় এবং ১৯২৮ সালের শেষ নাগাদ আমি উক্ত পত্রিকাটি একাকী নিজ দায়িত্বে প্রকাশ করতে থাকি। এ সময় পত্রিকা লিখনের সাথে সাথে বিভিন্ন শাস্ত্রের অধ্যয়নও অব্যাহত রাখি। আরবী পাঠ্যসূচীর শীর্ষস্থানীয় যে কতিপয় কিতাব রয়ে গিয়েছিলো, সেগুলোর পাঠ গ্রহণ করি এবং দু’টো পুস্তকও রচনা করি- যেগুলো ‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ এবং ‘দৌলতে আসিফিয়া ও হুকুমাতে বরকতিয়া’ নামে প্রকাশিত হয়ে গেছে।
এখন এমন সময় আসল যে দশ বছরের লব্ধ অভিজ্ঞতাপ্রবাহ ভারতের এবং বিশেষত উর্দূ ভাষায় পত্রিকা লিখন থেকে আমাকে একেবারে বীতশ্রদ্ধ করে ফেলেছিল এবং এ জীবন আমার জন্য মর্মপীড়ার কারণে পরিণত হতে যাচ্ছিল। পরিশেষে ১৯২৮ সালের শেষাংশে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সাথে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলি এবং ভবিষ্যতে রচনা ও গ্রন্থনাবৃত্তি নিজের জন্য পছন্দ করে নেই।” (মাওলানা মওদূদী: আপনী আওর দূসরৌঁ কী নযর মেঁ, পৃ. ৩৫,৩৬)
মালিক গোলম আলী সাহেবের বক্তব্য:
উপরোক্ত বইয়ে মওদূদী সাহেবের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত সহচর মালিক গোলাম আলী সাহেবের রচিত একটি নিবন্ধও রয়েছে। এ নিবন্ধটি তিনি ‘এদারায়ে তাসনীম’ এর কর্মকর্তাদের অনুরোধে মওদূদী সাহেবের ব্যক্তিত্ব ও জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে লিখেছিলেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন-
“১৯২৫ সালের শুরুতে ‘মুসলিম’ পত্রিকার স্থলাভিষিক্ত ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার প্রকাশনা আরম্ভ হয় এবং এর সম্পাদনার দায়িত্ব পুনরায় মাওলানা (মওদূদী)র উপর অর্পিত হয়। এ দায়িত্ব তিনি ১৯২৮ সালের শেষ পর্যন্ত পালন করতে থাকেন। এখানে এ কথা উল্লেখ করা আবশ্যক যে, যে সময় মাওলানার সম্পাদনার সম্পর্ক ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সাথে ছিল, সে সময় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কংগ্রেসের চিন্তাধারা ও কর্মকৌশলের সমর্থক ছিলো না, বরং জমিয়ত তখন সেই স্বাধীন পলিসির উপর চলছিল যা; মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ আলী তখনকার জাতীয় ও ধর্মীয় ব্যাপারে অবলম্বন করেছিলেন। ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব থেকে মাও. মওদূদী পৃথক হবার দু’বছর বা আরো অধিককাল পর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ তার স্থায়ী সম্পর্ক কংগ্রেসের সাথে স্থাপন করে।” (মাওলানা মওদূদী: আপনী আওর দূসরৌঁ কী নযর মেঁ, পৃ. ২৫১-২৫২)
সম্মানিত পাঠক-
স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরের লিখিত বিবরণ থেকে সংগৃহীত উদ্ধৃতাংশ দুটো থেকে যা প্রমাণিত হচ্ছে তা হলো এই-
(ক) ১৯২৮ সালের শেষাংশে ‘আল-জমিয়তে’র সম্পাদনার দায়িত্ব থেকে মওদূদী সাহেবের পৃথক হবার কারণ হচ্ছে এই যে, এ সময় দশ বছরের লব্ধ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের এবং বিশেষত উর্দূ ভাষায় পত্রিকালিখন থেকে তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন এবং বইপুস্তক রচনা ও প্রণয়নের পেশা তার কাছে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদকের পদ তিনি ত্যাগ করার এটাই হচ্ছে প্রকৃত কারণ। তিনি নিজে এ কারণটি উল্লেখ করেছেন। তাই এতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই।
(খ) ১৯২৫ সালের প্রথম থেকে ১৯২৮ সালের শেষ পর্যন্ত মওদূদী সাহেব ‘আল-জমিয়ত’এর সম্পাদক থাকাকালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি; বরং এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এর দু’বছর বা আরো অধিককাল পর। মওদূদী সাহেবের ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম আলী মালিক সাহেব এ কথাটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এটাই বাস্তব।
উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে যারা জ্ঞান রাখেন তারা অবশ্যই জানেন যে, ১৯২৯ সালে ‘লাহোর অধিবেশনে’ কংগ্রেস উপমহাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব পাশ করার পর ১৯৩০ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত ‘আমরূহা সম্মেলনে’ জমিয়তে উলামা স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের সাথে শরীক হবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ প্রসংগে দুটো ঐতিহাসিক প্রমাণ উল্লেখ করছি।
দু’টো ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি:
১. আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মরহুম জনাব তুফায়েল আহমদ লিখেন-
“জমিয়তে উলামার নবম অধিবেশন ১৯৩০ সালের মে মাসের ৩ তারিখ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত চারদিনব্যাপী শাহ মঈনুদ্দীন আজমীরী সাহেবের সভাপতিত্বে ‘আমরূহায়’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাশকৃত অন্যতম বিশেষ প্রস্তাব ছিল এরূপ-
“যেহেতু লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে এবং নেহরু রিপোর্টকে খারেজ করে দিয়েছে, সেহেতু জমিয়তুল উলামা কংগ্রেস থেকে পৃথক থাকবে না বরং এর সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবে”। (রওশন মুসতাক্ববিল। জমিয়তে উলামা কিয়া হায়? উর্দু ২য় খন্ড, পৃ. ২৬৪, মাও. সায়্যিদ মুহাম্মদ মিয়া।)
২. প্রখ্যাত আলিম, জামায়াতে ইসলামীর প্রথম নায়েবে আমীর এবং পরে জামায়াতত্যাগী, মাওলানা মনযূর নূমানী সাহেব লিখেন-
“১৯৩০ সালে বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস পুনরায় স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। পক্ষান্তরে, জমিয়তুল উলামাও এ সংগ্রামে কংগ্রেসের সাথে যৌথভাবে অংশ নেয়ার জন্য দলের আমরূহা অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অতঃপর কংগ্রেসের সাথে সংগ্রামের ময়দানে অবতীর্ণ হয়।” (মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচর্যের ইতিবৃত্ত , পৃ.১৬)
উপরে উল্লিখিত মওদূদী সাহেব ও গোলাম আলী সাহেবের বর্ণনা এবং ঐতিহাসিক তথ্যাবলী দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, মওদূদী সাহেব ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে জমিয়ত রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করেনি।
সুতরাং কংগ্রেসের অনুকূলে প্রচারণা চালানোর জন্য জমিয়তের পক্ষ থেকে মওদূদী সাহেবের উপর চাপ দেয়া এবং তিনি তা অস্বীকার করে ‘আল-জমিয়তের’ সম্পাদক-পদ ত্যাগ করার কোন প্রশ্নই আসেনা।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ‘ইউসুফ-বশীর’ জুটিসহ জামায়াতে ইসলামীর লোকজন এ অবাস্তব অবান্তর প্রলাপই বকছেন দীর্ঘকাল ধরে।
নিরপেক্ষ সত্যসন্ধানী মুসলমানদের কাছে প্রকৃত ব্যাপার উদঘাটন বা করুণ ইতিহাসের নামে তারা যা প্রকাশ করছেন, তা আগাগোড়া মিথ্যা ও অলীক। এতে সত্যের লেশ মাত্র নেই। এটা ইতিহাস সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার পরিচায়ক অথবা তাদের নিজ গুরুর বক্তব্য মিথ্যা আখ্যা দেয়ার নামান্তর। মওদূদীপ্রেমে বিভোর হয়ে অথবা তথাকথিত ইসলামী বিপ্লবের গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে তারা এ ধরণের গাঁজাখুরী বক্তব্য রেখেছেন।
সর্বোপরি উলামায়ে কিরামকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন ও বিরাগভাজন করার হীন উদ্দেশ্যে তারা মিথ্যাচারের এ ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করেছেন।
চ্যালেঞ্জ:
সর্বশেষে ম ওদূদীপন্থী জামাতীদের চ্যালেঞ্জ করছি। আপনারা সত্যবাদী হলে নির্ভরযোগ্য দলীল দস্তাবেজের মাধ্যমে প্রমাণ করুন যে, মওদূদী সাহেব আল-জমিয়তের সম্পাদক থাকাকালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল এবং কংগ্রেসের অনুকূলে প্রচারণা চালানোর জন্য তার উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। আর তা অস্বীকার করে তিনি পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেছেন।
আমরা তো আপনাদের নিজ গুরু স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরের বক্তব্য এবং ঐতিহাসিক তথ্যাবলীর আলোকে প্রমাণ করেছি যে, আপনাদের এ প্রচারণা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও নির্জলা মিথ্যা। এখন আপনারা নিজেদের সত্যতা প্রমাণ করুন। কিন্তু কস্মিনকালেও আপনারা তা পারবেননা ইনশাআল্লাহ।
অতএব আল্লাহকে ভয় করুন এবং এ ধরণের মিথ্যাচার থেকে তাওবা করুন।
সিরিজ- ৪
মওদূদী সাহেব কর্তৃক
‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ বই রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জামাআতী ভাইদের মিথ্যাচার ও আমাদের খন্ডন-
উলামায়ে দেওবন্দের সাথে প্রতিহিংসাবশত জামায়াতের ভাইয়েরা মিথ্যাচার ও জালিয়াতির ইতিহাস রচনা করেছেন। আর সেই মিথ্যাচারকে এতো ব্যাপকভাবে প্রচার প্রসার করেছেন, যেনো এগুলো সত্যে পরিণত হয়ে যায়। জামায়াতের অনুসারী ভাইগণ তো এগুলোকে আর যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন ই মনে করেন না। কারণ তাদের নেতাদের বই পুস্তকে লেখা
বিষয়াদীকে তারা যেনো ওহীর মতো গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। অথচ এটাই হলো প্রকৃত অন্ধ ভক্তি ও আকাবির পুজা। মূলত তারা করেন আকাবির পুজা, আর এই অপবাদে দোষারোপ করেন আমাদেরকে।
অন্যদিকে আমাদের কওমীয়ানদের কিছু কিছু লোকেরাও তাদের অল্প অধ্যয়ন কিংবা তাহকিক করার বই পুস্তক নিজের কাছে না থাকায় অথবা যাচাই-বাছাই করার মতো সময় বের করতে না পারায় এইসব মিথ্যাচার দেখতে দেখতে ও শুনতে শুনতে প্রায় বিশ্বাসের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন। যা তাদের কোনো কোনো বয়ান বক্তৃতা ও কমেন্ট দ্বারা প্রমাণিত হয়।
তাই মওদূদী সাহেব কর্তৃক
‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ বই রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জামাআতী ভাইদের মিথ্যাচারের আরেক ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের এই সিরিজে আলোকপাত করা হলো।
অতএব নিচের লেখাটি নিজে পড়ুন, সত্য জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করুন এবং অন্যকে জানানোর জন্য শেয়ার কপি করে ছড়িয়ে দিন।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের ‘এ কে এম ইউসুফ’ সাহেব লিখেন-
“গান্ধীর অহিংস আন্দোলন যে, ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
“মাওলানা মওদূদী সাহেব ‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ নামক বিরাট গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া উহাও মুসলমানদের ভালভাবে বুঝাইয়া দেন। ইহাতে দেওবন্দের কংগ্রেসী আলেমরা মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায় এবং ইতিপূর্বে যাহারা মাওলানা মওদূদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন তাহারাই তাহার লেখার ভুল অর্থ করিয়া উল্টাইয়া-পাল্টাইয়া অথবা পূর্বাপন ছেদন করিয়া ফতোয়া দেওয়ার চেষ্টা করেন”। (জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে, পৃ. ১০)
খন্ডন- উত্তর:
আমরা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছি যে, ইউসুফ সাহেবের এ কথাগুলোও সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আলিমদের উপর জঘন্য অপবাদ। তার এসব কথা যে ভিত্তিহীন ও বানোয়োট এর বিবিধ তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আছে।
প্রথমত:
আলোচ্য ‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ বইটি রচনার প্রকৃত প্রেক্ষাপট ও ইতিবৃত্ত হচ্ছে এই যে, বর্তমান শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইউরোপের পক্ষ থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হত যে ইসলাম একটি রক্তক্ষয়ী ধর্ম। সে তার অনুসারীদের রক্তপাত শিক্ষা দেয়। ১৯২৬ সালের ডিসেম্বরের শেষভাগে আর্য সমাজের নেতা ও শুদ্ধি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ নিহত হবার পর এ অপপ্রচার আরো তীব্র আকার ধারণ করে। তখন মওদূদী সাহেব উক্ত অপপ্রচারের খন্ডনে এবং ইমলামের সঠিক শিক্ষা দুনিয়ার সামনে পেশ করার প্রয়োজনে আলোচ্য বইটি রচনা করার প্রয়াস পান। এ কথাগুলো বইটির ভূমিকায় মওদূদী সাহেব নিজেই উল্লেখ করেছেন।
গান্ধীর অহিংস আন্দোলন যে ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী এ কথা বুঝানোর লক্ষ্যে তিনি বইটির রচনা করেছেন বলে যেমন এর ভূমিকায় উল্লেখ করেননি, তেমনি বইয়ের কোথাও তিনি এ আভাষও দেননি।
এদ্বারা কি প্রমাণিত হয় না যে, ইউসুফ সাহেব উক্ত বই রচনার যে প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা ও অবাস্তব ?
দ্বিতীয়ত:
‘আল জিহাদ-ফিল ইসলাম’ বইটি রচনা ও প্রকাশনাকালে মওদূদী সাহেব ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদকই ছিলেন এবং ‘আল-জমিয়তে’র কলামেই তিনি তা প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন। ২৩/২৪ সংখ্যা প্রকাশ করার পর অবশেষে আলোচনা দীর্ঘায়িত হয়ে যাওয়ার কারণে ‘আল-জমিয়তের’ পত্রিকায় উক্ত বইয়ের প্রকাশনা বন্ধ করে দেন এবং পরে গ্রন্থাকারে তা প্রকাশ করেন। তখন তারিখ ছিল ১৫ই জুন, ১৯২৭ সাল। এসব তথ্য বইটির ভূমিকায় মওদূদী সাহেবের কলমেই বিবৃত হয়েছে।
এদ্বারা কি প্রমাণিত হয়না যে, ইউসুফ সাহেব বইটিকে কেন্দ্র করে দেওবন্দের কংগ্রেসী উলামায়ে কিরাম সম্পর্কে যা লিখেছেন তা-ও সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটাও তাদের উপর জঘন্য অপবাদ বৈ কিছু নয়?
বইটি রচনার কারণে যদি সত্যিই তাঁরা মওদূদী সাহেবের উপর ক্ষিপ্ত হতেন, তা হলে কি এর ২৩/২৪ সংখ্যা তাদেরই মুখপত্র ‘আল-জমিয়তে’ প্রকাশ করার সুযোগ তিনি পেতেন? অথবা এরপরও কি তিনি এর সম্পাদক থাকতে পারতেন?
অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, বইটি রচনা ও প্রকাশনার পর আরও দেড় বছরকাল তিনি এ দায়িত্বে বহাল ছিলেন। তাকে এ পদ থেকে সরানো হয়নি। অবশ্য এরপরে তিনি নিজে যখন সাংবাদিকতা থেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং বইপুস্তক রচনার স্পৃহা তার হৃদয়ে জাগরিত হয়ে উঠে, তখন তিনি স্বেচ্ছায় ১৯২৮ সালের শেষভাগে উক্ত পদ ত্যাগ করেন। এসব তথ্য স্বয়ং মওদূদী সাহেবের কলমে ,,,,নং সিরিজে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোট কথা, আলোচ্য ‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ বইটিকে কেন্দ্র করে ইউসুফ সাহেব যা লিখেছেন, তা যে আগাগোড়া মিথ্যা ও উলামায়ে কিরামের উপর ভিত্তিহীন অপবাদ।
এ কথা প্রমাণ করতে দূর যাওয়ার দরকার নেই; খোদ উক্ত বইয়ের ভূমিকাই যথেষ্ট। তার গুরু স্বয়ং মওদূদী সাহেব নিজ বইটি রচনার প্রেক্ষাপট ও ইতিবৃত্ত বর্ণনা করতে যেয়ে নিজ কলমে এসব প্রমাণাদি রেখে গেছেন।
তৃতীয়ত:
‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ বইটির রচনা ও প্রকাশনা কাল হচ্ছে ১৯২৭ সালের প্রথমভাগ। মওদূদী সাহেব নিজে তা উল্লেখ করেছেন। এ সময় তো জমিয়তে উলমায়ে হিন্দ রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলনা। যেমন ,,,,নং সিরিজে মালিক গোলাম আলী প্রমুখের বরাতে তা প্রমাণ করা হয়েছে।
সুতরাং যদি মেনেও নেয়া যায় যে, আলোচ্য বইটি কংগ্রেস নেতা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের খন্ডনে রচিত হয়েছে, তাহলে এতে দেওবন্দী উলামায়ে কিরাম মওদূদী সাহেবের উপর ক্ষিপ্ত হবেন কেন? এদ্বারা তো তাদের চিন্তাধারায় কোন আঘাত পড়েনি এবং কেনই বা এ কারণে তার বিরুদ্ধে তারা ফাতওয়া দেয়ার চেষ্টা করবেন?
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ইউসুফ সাহেব এ হাস্যকর কথাই বলেছেন।
চতুর্থত:
যে শুদ্ধি আন্দোলনের নেতা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ নিহত হওয়ার পর ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার তীব্র হয়েছিল এবং এ অপপ্রচারের খন্ডনে মওদূদী সাহেব আলোচ্য বইটি রচনা করেছিলেন; সে শুদ্ধি আন্দোলনের মুকাবেলায় জমিয়ত নিজেই তৎপর ছিল এবং এই উদ্দেশ্যে আল জমিয়ত পত্রিকাটিও বের করেছিল।
যেমন মাওলানা মানযূর নূমানী সাহেব লিখেন-
“দ্বীন সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন মুসলমানরা উল্লিখিত শুদ্ধি সংগঠন আন্দোলনের বিরুদ্ধে দ্বীনের হেফাযতের নিমিত্তে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তৎকালীন ‘জমিয়তুল উলামার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এ ক্ষেত্রেই নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া সে সময় জমিয়তুল উলামা ‘আল-জমিয়ত’ নামে নিজেদের একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মাওলানা মওদূদী সাহেবকে উক্ত পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় এবং তখন তার যৌবনকাল ছিল। আমি ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার মাধ্যমেই সর্বপ্রথম তার নামের সাথে পরিচিত হই। (মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচর্যের ইতিবৃত্তÑপৃ. ১৬)।
সুতরাং মওদূদী সাহেব সে সময় আলোচ্য বইটি রচনা করে তো শুদ্ধি আন্দোলনের মোকাবেলার ক্ষেত্রে কার্যত জমিয়তে উলামাকে সহায়তাই করেছেন। এতে তো তাঁরা তার উপর সন্তষ্ট হওয়ারই কথা; উল্টো তাঁরা তার উপর চটে যাবেন কেন? এবং কেনই বা তার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দেয়ার চেষ্টা করবেন?
কোন ব্যক্তিকে তার কাজে কেউ সহায়তা করলে সে কি সহায়তাকারীর উপর ক্ষিপ্ত হয় বা তার বিরুদ্ধে লেগে যায়?
কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার, ইউসুফ সাহেব উলামায়ে কিরামের উপর এমন কান্ডজ্ঞনহীন অভিযোগই উত্থাপন করছেন।
কিমার্শ্চ মতঃপরম।
পঞ্চমত:
ঐতিহসিক সত্য হচ্ছে যে, দেওবন্দ থেকে মওদূদী সাহেবের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম ফাতওয়া বের হয়েছে ১৯৫০ সালে তথা মওদূদী সাহেব কর্তৃক ‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ বইটি রচিত হওয়ার সুদীর্ঘ ২৩ বছর পর। এর পূর্বে দেওবন্দী উলামায়ে কিরাম তার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়না বরং এর পূর্ব পর্যন্ত মওদূদী সাহেব সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা হয়ত তার অনুকূলে কথা বলেছেন নতুবা তার বিরুদ্ধে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন।
কিন্তু শত আশ্চর্য! ইউসুফ সাহেব এ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে ‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরই উলামায়ে কিরাম মওদূদী সাহেবের উপর ক্ষেপে গিয়ে তার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দেয়া শুরু করেছেন।
এটা যে তাদের বিরুদ্ধে কত জঘন্য মিথ্যাচার ও ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে।
কারও উপর ভিত্তিহীন অপবাদ দেয়া যে কত বড় গোনাহ, তা যে কোন সচেতন মুসলমানেরই জানা আছে।
কিন্তু জামায়াত-নেতৃত্বের জন্যে এটা যেন সম্পূর্ণ জাইয বরং পুণ্যের কাজ। ক্বোরআন সুন্নাহর জ্ঞান বক্ষে ধারণকারী, মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আকীদা সংরক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী আলিম সমাজের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা যেন তাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার।
لا حول ولا قوة الا بالله
মাওলানা মুখলিসুর রাহমান রাজাগঞ্জী সিলেট।
———————————
(তাহকিক ও সম্পাদনা-
হাফিজ আল্লামা মাহমুদ হোসাইন সিলেটি, সাবেক শায়খুল হাদীস জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর, বর্তমান শায়খুল হাদীস জামেয়া ইসলামিয়া বার্মিংহাম, ইউকে।)