1. info@izharehaq.com : MZakir :
সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আহলে সুন্নতের ফিক্বাহ শাস্ত্রের ইমাম: ইসলামী আমলের ক্ষেত্রে বিদয়াতীদের চক্রান্ত আহলে সুন্নতের আক্বীদামতে মহানবীর মর্যাদা: অতি ভক্তি কিসের লক্ষণ রেজভীদের চক্রান্ত হুবহু ইবনে সাবার চক্রান্তের মত: রাসূলকে আলিমুল গাইব বলা সাবায়ী চক্রান্ত: আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’ত সুবিন্যস্ত হওয়ার ইতিহাস কুরআন ও হাদীসের ভাষায় ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সোজা পথ: নবুওয়াত ও রিসালত: মওদুদীবাদ ইবাদত: মওদুদীবাদ কুরআন মাজীদ ও দ্বীনের সংরক্ষণ: কুরআন সংরক্ষণের অর্থ: কুরআন সংরক্ষণে খোদায়ী ব্যবস্থাপনা: মওদুদীবাদ দ্বীন কী? দ্বীনে নূহ: দ্বীনে ইব্রাহীম: দ্বীনে ইসমাঈল: দ্বীনে ইউসুফ: দ্বীনে মূসা: দ্বীনে ঈসা: মওদূদীবাদ মওদুদী সাহেবের শিক্ষা-দীক্ষার পরিধি গোয়েবলসীয় নীতি : হিটলারের ঐ মুখপাত্রও ”জামাত-শিবিরের মিথ্যাচারের কাছে হার মানায়”: পর্ব ১ ইক্বামাতে দ্বীনের তাৎপর্য এবং বাতিলপন্থীদের বিকৃত ব্যাখ্যা সাহাবাগণ রাঃ সত্যের মাপকাঠি এবং তাদের ইজমা সর্বসিদ্ধান্ত মতে শরীয়তের দলীল সাহাবা রাঃ গণ সত্যের মাপকাঠি খোলাফায়ে রাশেদীনগণের সোনালী আদর্শ সর্বসম্মতিক্রমে শরিয়তের দলীল শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: “তাঁরাই সত্যের মাপকাঠি” শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: সাহাবায়ে কেরাম “সত্যের মাপকাঠি: মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৬ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৫ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৪

মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৫

নাম:
  • আপডেট সময় : শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪
  • ২৬২ বার পড়া হয়েছে

মওদূদী সাহেব ‘দস্তূরে জামাতে ইসলামী’তে লিখেন, ‘আল্লাহর রাসূল ছাড়া কাউকে সত্যের মাপকাঠি বানানো যাবে না, কাউকে সমালোচনার উর্ধ্বে মনে করা যাবে না, কারো যেহনী গুলামীতে লিপ্ত হওয়া যাবে না’।
মওদূদী সাহেবের এই চরণগুলো কী পরিমাণ হাদীসের খেলাফ, তা লক্ষ করুন। হাদীসে আছে,
عن حذيفة رضى اللّه عنه قال قال رسول الله صلى اللّه عليه وسلم انى ما أدرى ما بقائى فيكم فاقتدوا با للذين من بعدى ابي بكر وعمر وزاد الحافظ أبو نصر القصا وفانهما حبل الله الممدود فمن تمسك بهما تمسك بالعروة الوثقى لا انفصام لها (مرقاة ٥٤٩) رواه الترمذي وحسنه واحمد وابن ماجہ وصححہ ابن حبان والحاكم: والطبراني عن ابى الدرداء والترمذي عن ابن مسعود رضى الله عنهم
অর্থাৎ হুযুর ﷺ ইরশাদ করেছেন, আমি জানি না কতদিন তোমাদের মাঝে থাকব। সুতরাং আমার পরে তোমরা আবু বকর ও উমর উভয়ের অনুসরণ করবে। কারণ তাঁরা উভয়ে আল্লাহর বিস্তৃত রজ্জু; যে তাঁদেরকে (মত ও পথকে) আঁকড়ে থাকবে, সে এমন মযবুত হাতল ধরল যা কখনও টুটবেনা।[মিরকাত, পৃষ্ঠা ৫৪৯]
মওদূদী সাহেব বলছেন যে, আবু বকর ও উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা কোন সাহাবীই হক্কানিয়তের মিয়ার নন; না তাঁরা তানকীদের উর্ধ্বে আর না তাঁদের তাকলীদ বৈধ। তাহলে তো উক্ত হাদীসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছে, না হয় নি?
عن عمران بن حصين رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خير امتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم ثم بعـد هم قوما يشهدون ولا يستشهدون (رواه الشيخان)
অর্থাৎ রাসূলে করীম ﷺ ইরশাদ করেছেন, সমস্ত যুগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আমার যুগ। অতঃপর তাবেয়ীনদের যুগ। অতঃপর তাবে-তাবেয়ীনদের যুগ। তারপর এমন লোকের প্রাদুর্ভার ঘটবে, যারা উপযাচক হয়ে সাক্ষী দিবে।[বুখারী-মুসলিম]

মওদূদী সাহেব উক্ত হাদীস অস্বীকারকারী। তিনি বলেছেন, প্রায়শই সাহাবায়ে কিরাম একে অন্যের উপর আঘাত হানতেন ইত্যাদি। তাঁদের কেউই সমালোচনার উর্ধ্বে ও সত্যের মাপকাঠি ছিলেন না।
عن ابي هريرة رضى الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من انفق زوجين من شئ من الاشياء في سبيل الله دعى من ابواب الجنة يا عبد الله هذا خير فمن كان من اهل الصلوة دعى من باب الصلوة ومن كان من اهل الجهـاد دعى من باب الجهاد ومن كان من اهل الصدقة دعى من باب الصدقة ومن كان من اهل الصيام دعى من باب الصيام باب الريان فقال أبو بکر رضى الله عنه ما على الذي يدعى من تلك الابواب من ضرورة وقال هل يدعى منها كلها احد يا رسول الله فقال نعم وارجو ان تكون منهم يا أبا بكر (رواه الشيخان)
অর্থাৎ হযরত আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল ﷺ কে ইরশাদ করতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন জিনিসের দুই জোড়া আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তাকে জান্নাতের দরজা থেকে ডাকা হবে এ বলে- হে আল্লাহর বান্দা, এটা উত্তম। যে ব্যক্তি নামাযী হবে, তাঁকে নামাযের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে জিহাদকারীদের অন্তর্ভূক্ত হবে, তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। সদকাকারীকে সদকার দরজা থেকে আহবান করা হবে। রোযাদারকে রোযার দরজা থেকে আহবান করা হবে অর্থাৎ বাবে রায়্য়ান থেকে। হযরত আবু বকর আরজ করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদিও কাউকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা জরুরি নয়, তবুও এমন কেউ আছে কি- যাকে সকল দরজা থেকে ডাকা হবে? ইরশাদ হল, হ্যাঁ, আশা করি তুমি আবু বকর তাঁদের অন্তর্ভূক্ত হবে।[বুখারী-মুসলিম]
উক্ত হাদীস থেকে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে, হযরত আবু বকর রাযি. সকল আমলের জামে’ তথা যাবতীয় সৎকর্মের আধার। কিন্তু মওদূদী সাহেব বলেছেন যে, এহেন ব্যক্তিও সত্যের মাপকাঠি নন, সমালোচনার উর্ধ্বে নন, অনুসরণাবশ্যকীয় নন।
ان امنّ الناس علىّ في صحبته وماله أبو بکر ولو كنت متخذا خليلا غير ربّى لاتخذت أبا بكر خليلا (رواه البخارى)
অর্থাৎ বন্ধুত্ব ও আর্থিক দিক থেকে আমার উপর সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহ আবু বকরের। আর আমি যদি আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কাউকে আমার খলীল ও দোস্ত বানাতাম, তবে আবু বকরকে বানাতাম।[বুখারী]

হুযুর ﷺ তো সমগ্র মানবের মাঝে আবু বকরকে বন্ধু বানানোর সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত এবং হিতাকাঙ্ক্ষী মনে করেছেন, তাঁকে সাহাবায়ে কিরামের ইমাম, নিজের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন। কিন্তু মওদূদী সাহেব বলেছেন যে, তিনিও তাকলীদের উপযুক্ত নন, সমালোচনার উর্ধ্বে নন এবং মিয়ারে হক নন।
عن العرباض بن ساریۃ رضى الله عنه عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكو بها وعضوا عليها بالنواجذ- مشكوة: رواه أحمد وابو داؤد والترمذي وابن ماجة وقال الترمذى حديث حسن صحيح
অর্থাৎ হুযুর ﷺ ইরশাদ করেন, আমার ও হেদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে থাক এবং দৃঢ়ভাবে তার উপর আমল কর।[মিশকাত]
লক্ষ করুন, হুযুর ﷺ তো আবু বকর, উমর, উসমান, আলী ও হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ খুলাফায়ে রাশিদীনের প্রত্যেকের সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু মওদূদী সাহেব তাঁদের কাউকে মিয়ারে হক বিশ্বাস করেন না। সবাইকে সমালোচনার আওতাধীন মনে করেছেন এবং তাকলীদের অনুপযুক্ত আখ্যা দিয়েছেন। এটা কি উসূলী মতভিন্নতা নয়? এটা কি হাদীসের প্রকাশ্য বিরোধীতা নয়?
عن عبد الله بن عمر وبن العاص تفترق امتى على ثلث وسبعين ملة كلهم في النار الا ملة واحدة قيل من هم يا رسول الله قال ما انا علیہ واصحابی مختصرا عن مشكوة: رواه الترمذي واحمد وأبو داؤد وقال الترمذى حسن غريب
অর্থাৎ হুযুর ﷺ বলেন, আমার উম্মত তিহাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়ে যাবে। তারা সবাই জাহান্নামী- এক জামাআত ব্যতীত। আরয করা হল- ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? ইরশাদ হল- যারা আমার ও আমার সাহাবীগণের মত-পথের অনুসরণ করবে।[মিশকাত]
রাসূলে করীম ﷺ তো সাহাবায়ে কিরামের অনুসরণকে নাজাতের একমাত্র উপায় বলেছেন। পক্ষান্তরে মওদূদী সাহেব তাঁদের কাউকে মিয়ারে হক স্বীকার করেন না। কাউকে সমালোচনার উর্ধ্বে মনে করেন না। কারো অনুসরণকে জরুরি মনে করেন না।
عن ابن مسعود (مختصرا) اولئك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم كانوا افضل هذه الامة وابرها قلوبا واعمقها علما واقلها تكلفا اختارهم الله لصحبة نبيـه و لإقامة دينـه فاعرفوا لهم فضلهم واتبعوهم على اثرهـم وتمسكوا بما استطعتم من اخلاقهم وسيرهـم فانهم كانوا على الهدى المستقيم (رواه رزین)
অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মুহাম্মদ ﷺ এর সাথীগণ এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। সম্পূর্ণ পূত-পবিত্র হৃদয়ের মালিক তাঁরা, সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী, কৃত্রিমতার লেশমাত্রও নেই তাঁদের কথা ও কাজে। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে স্বীয় নবীর সাহচর্য ও দীন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন করেছেন। সুতরাং তোমরা তাঁদের ফযীলত ভালভাবে জেনে নাও। তাঁদের পদাঙ্কানুসরণ কর। যথাসম্ভব তাঁদের আখলাক চরিত্র ও সীরাতকে আঁকড়ে থাক। কারণ তাঁরা ছিল হেদায়েতের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত।[রযীন]
বলুন, মওদূদী সাহেব তাঁদের এ ফযীলতসমূহ স্বীকার করেন কি? গঠনতন্ত্রের উক্ত দফা এবং তাফহীমাতের সে বক্তব্যের দ্বারা কি তিনি তাঁদেরকে জঘন্যভাবে অপদস্থ করেন নি?
عن ابي هريرة رضى الله عنه قال قال النبی صلی اللہ علیہ وسلم لقد كان فيما كان قبلكم من الامم اناس محدثون فان يك في امتى احد فانه عمر- زاد زکريا بن ابی زائدة عن سعد بن ابی سلمۃ عن ابي هريرة قال قال النبی صلی اللہ علیہ وسلم قد كان فيمن قبلكم من بنى اسرائيل رجال يكلمون من غيران يكونوا انبياء فان يك في امتى منهم احد فعمر[صحيح البخارى ص 521 رواه مسلم والترمذى والنـسائ عن عائشة]
অর্থাৎ রাসূলে করীম ﷺ ইরশাদ করেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের মাঝে এমন ব্যক্তি থাকতেন, যাঁদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম আসত। আমার উম্মতের মাঝে কেউ যদি এমন হয়, তবে সে উমর। অন্য সনদে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের পূর্বে বনী ইসরাঈলের মাঝে এমন লোক ছিল, আল্লাহর পক্ষ থেকে যাঁদের সাথে কথা বলা হত (ইলহাম হত)। কিন্তু তাঁরা নবী ছিলেন না। আমার উম্মতের মাঝে কেউ যদি এমন হয়, তবে সে উমর।[বুখারী]
لوكان بعـدى نبي لكان عمر بن الخطاب (رواه الحاكم في المستدرك وقال حديث صحيح الاسناد ولم يخرجاه)
অর্থাৎ হুযুর ﷺ ইরশাদ করেন, আমার পরে কেউ যদি নবী হত, তবে সে হত উমর ইবনুল খাত্তাব।[মুসতাদরাকে হাকিম]
ان الله جعـل الحق على لسان عمر وقلبہ (رواہ احمد والترمذی عن ابن عمر واحمد ابو داود عن ابى ذر وعن ابى هريرة)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা উমরের যবানে ও হৃদয়ে হক সুপ্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন।[তিরমিযী, আহমদ]
দেখুন, এত মহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও মওদূদী সাহেবের নিকট হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু মিয়ারে হক নন, সমালোচনার উর্ধ্বে নন, তাঁর তাকলীদ জায়িয নেই। রাসূল ﷺ তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহামপ্রাপ্ত, হক-হক্কানিয়াতের প্রতীক, নুবুওয়াত লাভের যোগ্য বলে ঘোষণা করছেন। আর মওদূদী সাহেব এসবকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছেন! লক্ষ করুন, ফারাক কতখানি!
حمزۃ عن ابیہ ان رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم قال بينا انا نائم شربت يعنى اللبن حتى انظر الى الرى يجرى في ظفري أو قال في اظفاري ثم ناولت عمر قالوا فما اولت قال العـلم
অর্থাৎ হুযুর ﷺ ইরশাদ করেছেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি এত বেশি দুধপান করেছি যে, আমার নখে তাঁর প্রবাহ ফুটে উঠেছে। অতঃপর আমি তা উমরকে দিয়ে দিলাম। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি এর কি ব্যাখ্যা করেছেন। ইরশাদ হল ইলম।
লক্ষ করুন, হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু কত উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। আর মওদূদী সাহেবের উক্ত দফা এর কত বিরোধী!
عن عبد الله بن مغفل رضى الله عنه قال قال رسول الله صل اللہ علیہ وسلم الله الله في اصحابى لا تتخذوهم غرضا بعدى فمن احبهم فبحبى احبهم ومن ابغضهـم فببغضى ابغضهم ومن اذاهم فقد اذاني ومن اذانی فقد اذى الله ومن اذى الله يوشك ان يأخذه (رواه الترمذي واحمد والبجاري في التاريخ وحل هب عن عبد الله)
অর্থাৎ হযরত ﷺ ইরশাদ করেন, আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর! আল্লাহকে ভয় কর! তাঁদেরকে সমালোচনার লক্ষ্য বানিও না। যে তাঁদেরকে মহব্বত করল, সে আমার মহব্বতের কারণেই তাঁদেরকে মহব্বত করল। যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল, আমার প্রতি বিদ্বেষের কারণেই সে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ রাখল। যে তাঁদেরকে কষ্ট দিল, সে আমাকে কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে বস্তুতঃ আল্লাহকে কষ্ট দিল। যে আল্লাহ তাআলাকে কষ্ট দিল, অতিসত্তর আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।[তিরমিযী]

সাহাবায়ে কিরামের গুণাবলি ও প্রশংসা এবং তাঁদের ন্যায়পরায়ণতা ও ধার্মিকতা সম্পর্কে এমনকি তাঁদের সুযোগ্য উত্তরসুরী তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস রয়েছে। দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় আমরা কেবল উল্লিখিত আয়াত ও হাদীসের উপর ইতি টানছি। এতেই দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে যে, মওদূদী সাহেব ও তার প্রতিষ্ঠিত জামাতে ইসলামী সিরাতে মুসতাকীম থেকে অনেক দূরে সরে পড়েছে। সুতরাং তাদেরকে অনুধাবন করা উচিত এবং নিজেদের আকীদা ও আমলকে সংশোধন করা উচিত। সলফে সালিহীনের পথ থেকে দূরে না থাকা উচিত। গুমরাহীর মধ্যে নিপতিত না হওয়া উচিত। নাজাত কেবল পূর্বসুরী আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অনুসরণ ও অনুকরণের মাঝেই নিহিত।
واللّه يقول الحق وهو يهدى السبيل
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সত্য কথা বলেন এবং তিনিই সরলপথে পরিচালিত করেন।[আহযাব ৪]
উপরোক্ত হাদীসগুলোকে নমুনাস্বরূপ উল্লেখ করে আমি ইতি টানছি। যদি সমগ্র ভান্ডার বা তার বেশিরভাগ অংশই পেশ করা যায়, তাহলে বহুত লম্বা হয়ে যাবে। ন্যায়পরায়ণ এবং সত্যানুরাগীদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
এখানে কেউ কেউ বলেন যে, কেবল ওহীর ধারক ও বাহকগণ মিয়ারে হক হবেন। কারণ তাঁদের উপর ভুল-ত্রুটি থেকে সংরক্ষণকারী খোদায়ী প্রহরা ইসমত থাকার কারণে তাঁরা নিষ্পাপ হয়ে থাকেন। আর যদি সাহিবে ওহী নবী থেকে কোন কারণে কখনো কোন ভুল সংঘটিত হয়ে যায়, তাহলে ওহীর মাধ্যমে তার সংশোধন হয়ে যায়। এ কারণে নিষ্পাপ সত্তা তথা নবীগণই মিয়ারে হক হবেন; অন্য কেউ নয়। (মওদূদী) গঠনতন্ত্রের উপরোক্ত ধারার উদ্দেশ্যও তাই। কিন্তু এ সাফাই স্বয়ং মওদূদীর খেলাফ এবং এমন সাফাই যেটা بما لا يرضى به قائله কায়দা অনুযায়ী মওদূদীর বক্তব্যের মর্মবিকৃতির নামান্তর।
(ক) মওদূদী সাহেবের ব্যবহৃত শব্দগুলোর সরল অর্থ তো ‘হযরত মুহাম্মদ ﷺ ছাড়া বাকি তামাম নবী নিষ্পাপ এবং সাহিবে ওহী হওয়া সত্ত্বেও মিয়ারে হক, সমালোচনার উর্ধ্বে এবং যিহনী গুলামীর উপযুক্ত না হওয়ার ব্যাপারে’ সুস্পষ্ট।

(খ) তাফহীমাত দ্বিতীয় খন্ডের সাতান্ন পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, ‘নিষ্পাপ হওয়াটা আসলে নবীদের জন্মগত অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য নয়’। যখন সব নবী থেকে ইসমত (আল্লাহর হেফাজত) পৃথক হওয়ার সুযোগ থাকবে, তখন ইসমত সার্বক্ষণিক তাঁদের সাথে থাকবে না। এ কারণে কোন নবীই মিয়ারে হক থাকবেন না।
(গ) তাফহীমাত দ্বিতীয় খন্ডের সাতান্ন পৃষ্ঠায় উল্লেখিত ‘আল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রত্যেক নবী থেকেই কোন না কোন সময় নিজের সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে নিয়ে দুটো একটা ভুল-ভ্রান্তি ঘটে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন’ মওদূদী সাহেবের থিওরী অনুযায়ী তো হযরত মুহাম্মদ ﷺ-ও শামিল হয়ে পড়েন, তখন স্বয়ং হুযুর ﷺ সহ কোন নবীই মিয়ারে হক থাকেন না। কারণ এর কি নিশ্চয়তা রয়েছে যে, নবীর কোন কথা সেই সময়ের নয়, যখন ইসমত (আল্লাহর সংরক্ষণ ব্যবস্থা) উঠে গিয়েছিল। মওদূদী সাহেব এটাও বলেন নি যে, সেসব ভুল-ত্রুটি ও গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তা সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। বরং তিনি বলেছেন, এজন্য ইসমত উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ভুল-ভ্রান্তি করানো হয়েছে, ‘যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা মনে করে না বসে এবং তারা যে মানুষ, খোদা নন, সেটা বুঝতে পারে’- যা নবীগণ থেকে সদা-সর্বদাই পদস্খলন সংঘটিত হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।

(ঘ) মিয়ারে হক হওয়ার জন্য মাসূম বা সাহিবে ওহী হতে হবে- এই সীমারেখা সহীহ নয়। কারণ আভিধানিক অর্থে মিয়ার সেই জিনিসকে বলা হয় যদ্বারা কোন বস্তুর পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়; যাকে পরিমাপ যন্ত্রও বলে। অথবা সেই জিনিসকে মিয়ার বলা হয় যদ্বারা ভাল-মন্দ গুণমান নির্ণয় করা হয়; যাকে কষ্টিপাথরও বলে। সুতরাং প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি মিয়ার হবেন যার কথা ও কাজ নবীর কথা ও কাজের মোতাবিক এবং নির্ভরযোগ্য হবে; চাই তিনি মাসূম হোন বা মাহফুজ, তার উপর ওহী অবতীর্ণ হোক বা তিনি ইলহামপ্রাপ্ত হোন। আর প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যার মাঝে পরিপূর্ণ ঈমান, শরীয়তের অনুসরণ এবং দীনের উপর দৃঢ়তা পাওয়া যাবে, তিনিও হকের মিয়ার হতে পারবেন। বিশেষতঃ যাঁদের ব্যাপারে নবী ﷺ-এর সাক্ষ্য রয়েছে, তাঁরা অবশ্যই মিয়ারে হক হবেন। কারণ নবীর প্রত্যেক কথাই ওহী হয়ে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে,
وما ينطق عن الهـوى ان هـو الا وحي يوحى
অর্থাৎ তিনি মনগড়া কথা বলেন না, এটা তো ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।[নাজম ৩-৪]
আর বিশেষ করে সত্যবাদীগণ অবশ্যই মিয়ারে হক হবেন। কারণ তাঁদের ব্যাপারে কুরআনে করীমের আয়াতে এবং হাদীসে নববীতে পুরোপুরিভাবে অনুসরণের (ইত্তেবায়ে মুতলাকের) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন সূরা লুকমানে ইরশাদ হয়েছে,
واتبع سبيـل من اناب الى
অর্থাৎ যে বিশুদ্ধচিত্তে আমার অভিমুখী হয়েছে, তাঁর পথ অবলম্বন কর।[আয়াত ১৫]
উক্ত আয়াতে ইনাবাত ইলাল্লাহকে (এক নিবিষ্টচিত্তে আল্লাহর প্রতি রুজু হওয়া) ইত্তেবায়ে মুতলাকের ভিত্তি ও কারণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূরা তাওবায় ইরশাদ হয়েছে,
يا ايها الذين أمنوا اتقوا الله وكونوا مـع الصادقين
অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সাদিকীনদের সাথে থাক।[আয়াত ১১৯]
উক্ত আয়াতে সাদাকত ও দিয়ানতকে নিঃশর্ত সাহচর্যের কার্যকারণ বলা হয়েছে।
সূরা নিসায় ইরশাদ হয়েছে,
ومن يشاقق الرسول من بعد ما تبين له الهدى ويتبع غير سبيـل المؤمنين نوله ما تولى ونصله جهنم وساءت مصيرا
অর্থাৎ কারো নিকট হক প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে তবে যেদিকে সে ফিরে যায়, সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস![আয়াত ১১৫]
উক্ত আয়াতে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করার উপর এবং মুসলমানদের বড় জামাআতের ইত্তেবা ছেড়ে দেয়ার উপর কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। ফলে উম্মতের ইজমা এবং সিওয়াদে আজমের অনুসরণ করা জরুরি হয়ে গেছে।

সূরা ইউনুসে ইরশাদ হয়েছে,
الا ان اولیاء الله لا خوف عليهم ولا هم يحزنون الذين امنوا وكانوا يتقون لهـم البشري في الحيوة الدنيا وفي الأخرة لا تبديل لكلمات الله ذلك هو الفوز العظيم
অর্থাৎ জেনে রাখ, আল্লাহর ওলীদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান আনে ও তাকওয়া অবলম্বন করে, তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পারলৌকিক জীবনে। আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই। এটাই মহাসাফল্য।[আয়াত ৬২-৬৪]
উক্ত আয়াতে পরিপূর্ণ ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারীদেরকে আল্লাহর ওলী বলা হয়েছে এবং তাঁদেরকে অত্যন্ত প্রশান্তচিত্তের অধিকারী আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সূরা হামীম সিজদায় ইরশাদ হয়েছে,
ان الذين قالوا ربنا الله ثم استقاموا تتنزل عليهم الملائكة الا تخافوا ولا تحزنوا وابشروا بالجنة التي كنتم توعدن نحـن اوليائكم في الحيوة الدنيا وفي الآخرة ولكم فيها ما تشتهـى انفسكم ولكم فيها ما تدعون نزلا من غفور الرحيم
অর্থাৎ যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাঁদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং বলে- তোমরা ভীত হবে না এবং তোমাদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। সেথায় তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেথায় তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা ফরমায়েশ কর। এটা হবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।[আয়াত ৩০-৩২]
উক্ত আয়াতে ঈমান-ইসতেকামতকে নির্ভরযোগ্যতা ও ফিরিশতাদের বন্ধুত্বের কারণ বলা হয়েছে।
মোদ্দা কথা, আয়াত ও হাদীসসমূহে উল্লিখিত ইনাবত, সিদক, মুসলমানদের ইজমার অনুসরণ, বিলায়েত, ঈমান ও ইসতেকামাত ইত্যাদি গুণাবলীকে দীনের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য হওয়ার কারণ বলা হয়েছে; ইসমতের উপর সীমাবদ্ধ করা হয় নি।
এসব আয়াত ও হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, খোদায়ী হেফাযত কেবল নুবুওয়াতের উপর সীমাবদ্ধ নয়। হ্যাঁ, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের হেফাজতকে ইসমত এবং বুযুর্গানে দীনের হেফাজতকে হেফাজত শব্দে ব্যাখ্যা করা হয়। এই ব্যবধান পারিভাষিক, অর্থগত নয়; যদিও উভয়ের ফলাফল ও অপরিহার্যতা পৃথক পৃথক। আল্লাহই ভালো জানেন।
সারকথা, মওদূদী সাহেবের গঠনতন্ত্রের উক্ত দফা এবং তার আকীদা সম্পূর্ণ ভুল, হাদীসের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং সুমহান পূর্বসূরী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী; যার ফলে দীনে ইসলামের চূড়ান্ত ক্ষতি ও চরম লোকসান সাধিত হবে। এ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা জরুরি।
والله يقول الحق وهو يهدي السبيل
اللهم ارنا الحق حقا وارزقنا اتباعه وارنا الباطل باطلا وارزقنا اجتنبه

মাওলানা মুতিউর রহমান খান সাহেব থেকে সংগৃহিত

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরির আরো
© All rights reserved © 2019 www.izharehaq.com
Theme Customized BY Md Maruf Zakir