নাহমাদুহু অনুছাল্লী আলা রাসুলিহীল কারীম আম্মাবাদঃ
জানা আবশ্যক সাহাবা (রাঃ) গণ সত্যের মাপকাঠি অর্থাৎ সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে প্রভেদ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যন্ত্র বিশেষ যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
১ নং হাদীস : হযরত নবী করীম (সঃ) ফরমান আমার উম্মত তিহাত্তর সম্প্রদায়ে বিভক্ত হইবে তার মধ্যে একটি মিল্লাত বা জমা’আত ব্যতিত আর সকলেই জাহান্নামী হইবে। সাহাবা (রাঃ)গণ নাজাতপ্রাপ্ত দলটির কথা জিজ্ঞাসা করেন। নবী করীম (সঃ) তদুত্তের বললেন, আমি এবং আমার সাহাবা (রাঃ)গণ অর্থাৎ আমি ও আমার সাহাবা (রাঃ) গণের আনুগত্যকারীই একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল হবে।
২ নং হাদীস : আমার সাহাবাগণ তারকাতুল্য। তাদের মধ্যে থেকে তোমরা যারই অনুসরণ করবে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে।
৩ নং হাদীস: হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, কেহ যদি আমার পরে কাউকে অনুসরণ করতে চায় তবে তার জন্য উচিত যে সে যেন মৃতদের বর্ণনাকৃত প্রথাকে চালু করে। কেননা জীবিতগণ ফেৎনা থেকে নিরাপদ নয়, আর তারা (মৃতগণ) হলেন হযরত নবী করীম (সঃ)-এর সান্নিধ্য প্রাপ্ত সাহাবা (রাঃ) আর তারাই হলেন ঐ উম্মতের মধ্যে আনুগত্যের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ উম্মত। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ পাক তাঁর নবীর সাহচার্য্যের জন্য এবং তিনার দ্বীনকে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠার জন্য তাহাদিগকে নির্বাচন করেছেন সুতরাং তাদেরই পদাংককে অনুসরণ কর এবং শক্তি ও সামর্থানুসারে তাদের নৈতিকতা, আচার-আচরণ ও গুণাবলীকে আঁকড়িয়ে ধর; কেননা তারা ছিলেন সম্পূর্ণ হেদায়েত প্রাপ্ত সরলপথের পথিক। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তার অর্থ এই না যে, সমস্ত সাহাবীর (রাঃ) সমস্ত আমলই যে, হক্ক ও শুদ্ধ এবং তার খেলাফই বাতেল। যদি তাই মেনে নেয়া হয় তাহলে সাবাগণের (রাঃ) অনেক আমলই হক ও বাতেল হওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। কেননা অনেক মাসআলার ব্যাপারেই সাহাবা (রাঃ) গণের মধ্যে মতোবিরোধ বিদ্যমান। যেমন- ঈমামের পেছনে কেরাত পড়ার ব্যাপার নিয়ে এবং রফয়ে ইয়াদাইন ইত্যাদি। তাছাড়া কোন কোন সাহাবা (রাঃ) থেকে কোন কোন আমলের মধ্যে ভুল-ত্রুটিমূলক কাজও প্রকাশ হয়েছে। বরং অনুসন্ধান প্রাপ্ত তার প্রমাণসিদ্ধ অর্থ হলো তিনটি।
একটি হলো-আকায়েদ বা বিশ্বাস অর্থাৎ সাহাবাগণের (রাঃ) আকিদা। ইহাই একমাত্র সত্যে শুদ্ধ, তার বিপরীত আকিদা হলো বাতেল আকিদা। সুতরাং প্রত্যেক আকিদা বা বিশ্ব্যাস যা সাহাবা (রাঃ) গণের আকিদার বিপরীত। অবশ্যই বাতেল আকিদা যদিও কোন কোন নছছে দলীল তার বাহ্যিক দৃষ্টিতে উপকারী এবং সহায়তাকারী বলেও মনে হয়। কেননা এ সমস্তগুলো অবশ্যই শুধু বাহ্যিক দৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রসিদ্ধ জটিল ব্যাখ্যার হিসাবে গ্রহণ করা হয় যেমন বাতেলপন্থীদের মধ্য থেকে আহলে হাওয়া অর্থাৎ মনগড়া চলনেওয়ালাদের আকিদা।
দ্বিতীয়ঃ- মাছায়েলে ইজতিহাদিয়া অর্থাৎ সাহাবা (রাঃ) গণের ঐ ইজতিহাদ যা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃতপ্রাপ্ত হয়ে স্থায়ীত্ব লাভ করেছে এবং তা থেকে প্রত্যাবর্তনও করেন নাই। সুতরাং প্রত্যেক ঐ ইজতিহাদ যা সাহাবা (রাঃ) গনের সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃতপ্রাপ্ত ইজতিহাদের সোপানে তা বাতিল হিসাবে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যজ্য। যেমন ইচ্ছাকৃতভাবে (মতরুকতু তাছমিয়া) আল্লাহর নামকে পরিহার করে জবাইকৃত জন্তুর গোস্ত সমূহ সাহাবা (রাঃ) গণের নিকট হারাম। হালাল হওয়ার ব্যপারে কারও মত পাওয়া যায় না। কিন্তু ঈমাম শাফীঈ (রঃ) ইহা হালাল বলে মত প্রকাশ করেন। তার এ মত সাহাবা (রাঃ) গণের মতের বিপরীত বিধায় তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য এবং কোন হাকেম ইহার ব্যাপারে ফয়সালা বা রায় প্রকাশ করলে তাহা গ্রহণযোগ্য হবে না।
তেমনিভাবে তালাকপ্রাপ্তা মেয়ে প্রথম স্বামীর নিকট হালাল হওয়ার জন্য দ্বিতীয় স্বামীর নিকট বিবাহের মাধ্যমে অতী বা স্ত্রী সহবাস হওয়া শর্ত। কিন্তু সাঈদ ইবনে মোছায়্যেব (রাঃ) শুধু বিবাহকেই যথেষ্ট বলে মত পোষণ করেন বিধায় তা সমস্ত সাহাবা (রাঃ) গণের মতের বিপরীত হওয়ার কারণে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য এবং এ ব্যাপারে কারও ফয়সালা বা রায় প্রকাশ করলে তা গ্রহণযোগ্য হইবে না। হেদায়া কিতাবে তেমনিভাবে একই শব্দে তিনতালাক অথবা এক তোহরে (ঋতুর পরে পবিত্র গোসল করন) এক তালাক হওয়ার ব্যাপারে। উক্ত মাসআলায় কতিপয় হাম্বলী পন্থিগণ সমস্ত সাহাবাগণের (রাঃ) মতের বিরোধ হওয়ার কারণে তা অবশ্যই বর্জনীয় এবং ফয়সালা বা রায় গ্রহণযোগ্য হইবে না। (ফতহুল কাদীর)
তৃতীয় ঃতা’আমুল অর্থাৎ সাহাবা (রাঃ) গণের আমল সঠিকভাবে আমল করিতে হইবে। যদিও তাহা কিয়াছ এবং ব্যাপক অর্থে খবরে গাহেদের বিপরীতই হউক না কেন। কেননা খবরে ওয়াহেদকে নির্দিষ্ট করা যায়। যেমন- মুজারেবা অংশীদারির ভিত্তিতে ব্যবসা করা আর মোজারেয়া পরস্পর সহযোগিতার ভিত্তিতে চাষাবাদ করা। কেননা এইগুলো সাহাবা (রাঃ) গণের আমলের উপর নির্ভরশীল এবং কিয়াসের বিপরীত। সুতরাং প্রত্যেক ঐ আমল যাহা সাহাবা (রাঃ) গণের তা’আমুল বা আমলের বিপরীত তা অশুদ্ধ হিসাবে বিবেচিত ও পরিত্যাজ্য হইবে।
লেখক
ইব্রাহীম খাঁন
আজ মুফতী ফয়জুল্লাহ (রঃ)
৭ই মুহাররম ১৩৮৭ হিঃ
Leave a Reply