فَالْيَوْمَ الَّذِينَ آمَنُوا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُونَ عَلَى الْأَرَائِكِ يَنْظُرُونَ هَلْ ثُوبَ الْكُفَّارُ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ –
‘আজ (কিয়ামত দিবসে) মুমিনগণ কাফিরদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে, আরামদায়ক আসনে বসে মুমিনরা কাফেরদের (শাস্তি) প্রত্যক্ষ করবে। সে দিন অবাধ্যদের কৃতকর্ম অনুযায়ী যথাযথই বদলা দেয়া হবে’। (সূরা মুতাফফিফীন)
১৬। ইসলামী শরীয়তের বিধান মতে যে ব্যক্তি ইসলামের প্রতীকসমূহ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে সে যেন কুফুরী করল। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায, রোযা, যিকির ও তেলাওয়াত ইত্যাদি বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে ইসলামী ফতোয়া মতে সে কুফরীতে লিপ্ত হয়ে যায়, এ ধরনের লোকের মজলিসে বসা বা তার আলোচনা শোনা জায়েয নয়।
১৭। মওদুদী সাহেব বলেছেনঃ জিহাদ এবং ইসলামী হুকুমতের জন্য নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি হলো ‘ট্রেনিং কোর্স’ তা সত্যিই এক ধৃষ্ঠ বাচালতা।’ একে মওদুদী সাহেবের অতি উর্বর মস্তিস্কের “উন্মাদ” ঘোষণা বললেও অত্যুক্তি হবে না। মওদুদী সাহেবের মত একজন ধীমান অথচ প্রাইমারী পর্যায়ের দ্বীনী শিক্ষিত ব্যক্তির মুখ থেকে এরূপ নিজস্ব ধর্ম গবেষণা বিষয়ক উক্তি প্রকাশ পাওয়া অভাবনীয় নয়।
নাঃ কুরআন-হাদীসের সাথে উক্ত মন্তব্যের কোন সম্পর্ক নেই। বরং কুরআন হাদীস এর বিপরীত নির্দেশনা প্রদান করেছে। সূরা হজ্জের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেনঃ
الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلوةَ وَأَتُوا الزَّكُوةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
“আমি যখন তাদেরকে (মুমিনদেরকে) পৃথিবীর কোন এলাকার (শাসনক্ষমতা) কর্তৃত্ব প্রদান করি তখন তারা নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তারা সৎকাজের নির্দেশ করে এবং অসৎ ও মন্দ কাজ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে।”
এ আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা নামায, যাকাত ইত্যাদিকে আসল করণীয় বা উদ্দেশ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ মওদুদী সাহেব নামায রোযা, হজ্জ, যাকাত যা উদ্দেশ্য তাকে বানিয়ে ফেলেছেন সহায়ক আর হুকুমত যা সহায়ক (উদ্দেশ্য নয়) তাকে বানিয়ে নিয়েছে উদ্দেশ্য। একদিকে আল্লাহ তা’য়ালা আর অপরদিকে মওদুদী সাহেব। আমরা কার কথা মানবো?
একথা এবং এ দাবী বাস্তব যে, কুরআন ও সুন্নাহপন্থী আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত অকুণ্ঠচিত্তে নিঃশর্তভাবে আল্লাহর কথায় বিশ্বাসী এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী। আর জামায়াত শিবির সম্প্রদায় মওদুদী সাহেবের কথায় বিশ্বাসী। তারা মওদুদীর ব্যাখ্যার প্রতি নিবিষ্টচিত্তে ঈমান এনেছেন। সুতরাং এ দুইয়ের ব্যবধান স্পষ্ট এবং অবধারিত।
কোন মুসলমানই আল্লাহকে বাদ দিয়ে রাসূল (সা.) কে বাদ দিয়ে এক ভ্রান্ত ব্যক্তির কথায় অন্ধ বিশ্বাসী হতে পারেনা।
১৮। মূলতঃই নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি (ইবাদত) যা ইসলামের মূল স্তম্ভ যার প্রতি আদেশ করে শত শত আয়াত নাযিল করেছেন আল্লাহ তা’য়ালা, সেসব বিকল্পহীন অপরিহার্য বিষয়গুলোকে মওদুদী সাহেব কি করে হুকুমতের (শাসন ক্ষমতার) জন্য পূর্ব উপাদান (ট্রেনিং কোর্স) মনে করলেন? অথচ হুকুমত বা শাসন ক্ষমতা মূল দ্বীন নয় বরং তা হলো দ্বীনের প্রশাসনিক অংশ এবং মূল দ্বীনের সহায়ক শক্তি।
১৯। মূলতঃ মওদুদী সাহেব রাষ্ট্র সরকার প্রতিষ্ঠাকে মূল দ্বীন এবং মূল দ্বীনকে ট্রেনিং কোর্স আখ্যা দিয়ে যে নির্বোধের কর্মটি করেছেন তাহলো তিনি মানুষের শরীরের পরিহিত পোষাককে মূল মানুষ আর মূল মানুষকে পোষাক বলে পরিচিত করেছেন। হ্যাঁ এভাবেই যা যা নয় তাকে তা বলে চালিয়ে দিতে চেয়ে তিনি সরল মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় মেতেছেন।
২০। যদি মূলতঃই নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত হুকুমত কায়েম করার জন্য ট্রেনিং কোর্স হয়, তাহলে তো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়ে যাওয়ার পর আসল দ্বীন (রাষ্ট্র পরিচালনার) কাজেই সর্বদা ব্যস্ত থাকা অপরিহার্য হয়ে যাবে তাইনা? যদি তা-ই হয়, তাহলে তখন তো আর নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির এর প্রয়োজন মোটেও থাকবে না। কেননা ট্রেনিং কোর্স ততক্ষণই দরকার পড়ে যতক্ষণ ট্রেনিং এর উদ্দেশ্য সাধন না হয়। হ্যাঁ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির, তিলাওয়াত বর্জিত এমন প্লাষ্টিক দ্বীন, এমন প্রগতিশীল খাহেশাত মার্কা হুকুমত কায়েম করা কেবল জামায়াতীদের মুখ্য উদ্দেশ্য হতে পারে, আর কারো নয়।
২১। কোন মুজাহিদ রণাঙ্গনে গিয়ে শত্রুর মুকাবেলায় জিহাদ ছেড়ে দিয়ে যদি ট্রেনিংএ ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে তাকে পাগল মনে করা হবে অথবা শত্রুর সাথে তার আতাত থাকার ধারণা করা হবে। এখন যদি নামায, রোযা, যিকির ও তেলাওয়াত ইত্যাদি ইসলামী হুকুমতের জন্যে ট্রেনিং হয়, তাহলে হুকুমত কায়েম হওয়ার পর হুকুমতের কর্মে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকা জরুরী। কোন ব্যক্তি যদি হুকুমত কায়েম হওয়ার পরও ট্রেনিং পর্যায়ের কাজে (নামায, রোযা ইত্যাদিতে) ব্যস্ত থাকে মওদুদী ধর্ম মতে তার শাস্তি কি হবে?
২২। মওদুদী সাহেবের অভিমত যদি বাস্তবসম্মত ধরে নেয়া যায়, তাহলে এমনটি হওয়া উচিত যে, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি ট্রেনিং কোর্সে যে যত বেশী পারদর্শী হবে (যেমন, বেশী নামাযী, অধিক রোযাদার, বেশী যিকিরকারী আউলিয়ায়ে কেরাম, অধিক কুরআন তেলাওয়াতকারী হাফেজ সাহেবগণ, তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিক পারদর্শী হবেন। কেনানা ট্রেনিং কোর্স যত পূর্ণাঙ্গতার সাথে আদায় করা হয়, তার পরিণতি তত সমৃদ্ধশালী হয়। কিন্তু না, এক্ষেত্রে বাস্তবতা এর উল্টোটাই বেশী চোখে পড়ে।
মূলতঃ নামাজ, রোযা, যিকির, তেলাওয়াত ইত্যাদিই মূল ইবাদত। এই ইবাদত জিহাদ বা রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনের ট্রেনিং কোর্স নয়। তাইতো সব নবী-রাসূলগণই নামাযী ছিলেন, সব ওলী আল্লাহগণই ইবাদত গোজার ছিলেন কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনকারী ছিলেন না।
২৩। মওদুদী সাহেবের কথা অনুযায়ী নামায, রোযা ও অন্যান্য ইবাদত যদি হুকুমত (রাষ্ট্র) পরিচালনার পূর্ব প্রস্তুতি হয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে মহিলা এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপর নামায, রোযা ফরজ থাকে কেন? কেননা নারী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তো রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনার উপযোগী নন!
বাহুল্য, যদি কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, যিকির, তিলাওয়াত, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আদায় করার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত না করে বরং এ সব কে হুকুমত অর্জনের কিংবা জিহাদের ট্রেনিং কোর্স মনে করে (যেমন জামায়াত শিবিরের সদস্যগণ) তবে কুরআন-হাদীসের মতে ঐ ব্যক্তির কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তার নামায নষ্ট ‘হয়ে যাবে, এরূপ নামাযকে নামাযীর মুখে নিক্ষেপ করে দেয়া হবে। হ্যাঁ এভাবেই মওদুদী দর্শন আমাদেরকে আমাদের ইবাদত ধ্বংস করার অসৎ পরামর্শ দেয়। আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে অভিশাপের পথে ধাবিত হতে।
২৫। মওদুদী দর্শন মোতাবেক যদি কেউ ইসলামী হুকুমতের ট্রেনিং কোর্সে উন্নতি সাধন করার জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের সাথে এক হাজার রাকাত নফল নামাযও পড়ে অথবা ট্রেনিং কোর্স মনে করে এক মাস রোযার সাথে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস রোযা রাখে তবে এই সব ট্রেনিং কোর্স দ্বারা তার কপালে জুটবে মহান রাব্বুল আলামীনের অসন্তুষ্টি ও আযাব তথা জাহান্নাম। সুতরাং সাধু সাবধান! দেখে নেও ফরম পূর্ণ ও পার্টির ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া বা ট্রেনিং এর নিয়্যতে নামায আদায় করেছো, না আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে?
২৬। মওদুদী সাহেব তার রচিত খুতবাত নামক বইতে লিখেছেনঃ
“বস্তুতঃ ইসলাম নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতসমূহ সেই উদ্দেশ্যের (রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার) প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট করেছে। দুনিয়ার সকল রাষ্ট্র শক্তির নিজ নিজ সেনাবাহিনী পুলিশ ও সিভিল সার্ভিসের কর্মচারীদের সর্বপ্রথম এক বিশেষ ধরনের ট্রেনিং দিয়ে থাকে। ঐ ট্রেনিংয়ে উপযুক্ত প্রমাণিত হলে তাকে নির্দিষ্ট কাজে নিযুক্ত করা হয়। ইসলামও তার কর্মচারীদের সর্বপ্রথম এক বিশেষ ধরনের ট্রেনিং দিতে চায়। এরপরই তাদের জিহাদ ও ইসলাম কায়েম করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়”। (খুতবাত পৃঃ ৩১৫. ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা পৃঃ ২৫৪)
মওদুদী সাহেবের এ থিউরীতে বিশ্বাসী জামায়াত ও শিবিরের ভাইদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনাদের এইসব কল্পিত ধর্মীয় আকীদা সত্য হওয়ার কোন উদাহরণ কি দেখাতে পারবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে যোগ্য রাষ্ট্র পরিচালক তো পৃথিবীতে আর কেউ ছিল
না, সেই মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তো নামাযের প্রতি পূর্ণ যত্নবান ছিলেন। এমনকি যখন দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারতেন না তখন বসে বসেও নামায পড়তেন। তাহলে তখনও কি তার রাষ্ট্র পরিচালনা করার যোগ্যতা অর্জন করা বাকী ছিল?
২৭। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায ও রোযা ছাড়াই নবুওয়াত্ লাভ করলেন এবং রিসালাতের দায়িত্ব ও আদায় করতে পারলেন অথচ রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা ছিল না বিধায় তাকে নামায, রোযা ট্রেনিং কোর্স হিসেবে আদায় করতে হয়েছে? নবুওয়াত, রিসালাত এত সস্থা যে কোন ট্রেনিং ছাড়া পাওয়া যায় আর রাষ্ট্র নায়ক হওয়া এত কঠিন ও মূল্যবান যে তার জন্য ১৩-১৪ বৎসর নবী (সাঃ)-কে ট্রেনিং নিতে হলো-তাই কি?
২৮। হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক। দীর্ঘ তের বছর মক্কা শরীফে নবুওয়াতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পর পরবর্তী দশ বছর মদীনায় বিচক্ষণতার সাথে রাষ্ট পরিচালনা করেছেন। নামায যদি মুখ্য ইবাদত না হত, তাহলে তিনি বলিষ্ঠ এবং আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক হওয়া সত্ত্বেও সারা রাত জেগে কেন নামায পড়তেন? কেন কুরআন তিলাওয়াত করতেন? এরপরও আমাদের বলতে হবে নামায আসল ইবাদত নয় বরং রাষ্ট্র পরিচালনার পূর্ব প্রস্তুতি বা ট্রেনিং। তা কি দ্বীন বিষয়ক ব্যাখ্যা হবে? নাকি হবে মাতাল উম্মাদের আবোল-তাবোল প্রলাপ?
২৯। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি যদি মুখ্য ইবাদত না হত, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে খিলাফতে রাশেদার স্বর্ণ যুগে এইসব ইবাদত কেন গুরুত্বহীন হয়ে যায়নি? কেন ঐসব সফল রাষ্ট্রনায়ক খুলাফায়ে রাশেদীন এবং সে যুগের শ্রেষ্ঠ মুমিনগণ গুরুত্বের সাথে ঐসব ইবাদত আদায় করতেন? এমনকি আমরা তো দেখতে পাই আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পরও তারা ঈদ, জুমুআ এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইমামতির দায়িত্ব পালনে রত থেকেছেন মূল ইবাদত পালনার্থেই কেবল। রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনের উদ্দেশ্য তো তাদের অনেক আগেই হাসিল হয়ে গিয়েছিল। মওদুদী সাহেবের এই উদ্ভট মন্তব্যের বাস্তবতা ভিত্তিক সামান্য কোন যুক্তিও কি আছে? যুক্তিহীন, দলীলহীন বাস্তবতা বর্জিত এসব বস্তাপচা প্রলাপ; তারপরও কি আঁকড়ে ধরে থাকবেন জামায়াত শিবিরের সচেতন ভায়েরা?
৩০। মওদুদী সাহেবের কথা মতো নবী-রাসূলগণের এ পৃথিবীতে আগমনের মূল উদ্দেশ্য যদি রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জন হতো, তাহলে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) নিজে এবং তাঁর সন্তানদের নামায কায়েমকারী হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন না বরং রাষ্ট্র নায়ক হওয়ার জন্যই দোয়া করতেন।
৩১। যদি কেউ বলে যে, অনেক নবীর নবুওয়াত ট্রেনিং কোর্সেই শেষ হয়ে গেছে, তিনি মূল দ্বীন যা নবুওয়াতের আসল উদ্দেশ্য তা করতে পারেননি, (যেমন মওদুদী বলেছেন) তাহলে তার ঈমান থাকবে কি?
৩২। বলা বাহুল্য নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি মূল ইবাদতকে ট্রেনিং কোর্স বলে মওদুদী সাহেব যে ফতওয়া দিয়েছেন, তাকে যদি ইসলামের ব্যাখ্যা বা ফতওয়া বলে ধরা হয়, তাহলেই উপরে উল্লেখিত পর্যালোচনা বা বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে। আর যদি মওদুদীর উপরোক্ত মন্তব্যকে মওদুদী ধর্মের ফতওয়া বা মওদুদী ধর্মমত হিসেবে প্রচার করা হয়, তাহলে আমাদের আপত্তির পদ্ধতি হবে ভিন্ন।
সুধী পাঠক/পাঠিকা! আপনারা নিশ্চয়ই ইসলাম অনুসরণ করতে চান মওদুদী ধর্মমত নয়! তাই নয় কি?
৩৩। বলাবাহুল্য মওদুদী সাহেবের এই মন্তব্য যে, “দুনিয়ার কাজ-কর্ম পরিত্যাগ করে মসজিদের এক কোনায় বসে যাওয়া এবং আল্লাহ আল্লাহ যিকির করা ইবাদত নয়” এটা মওদুদী সাহেবের মনগড়া ধৃষ্ঠতা তথা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধমূলক মন্তব্য। কেননা, ইবাদত অর্থই তো হলো নিজেকে হেয় ও অবনমিত করে আল্লাহর দরবারে পেশ করা এবং তাঁর সর্বোচ্চ বড়ত্ব প্রকাশ করা, নীরবে নিভৃতে মসজিদের কোনায় আল্লাহ আল্লাহ যিকিরের মাধ্যমে তা-ই করা হয়। সত্যিই মওদুদী সাহেবের কৃত এমন
মনগড়া জঘন্য মন্তব্য আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কেউ কখনও মেনে নেয়নি। বরং একথাই যুগে যুগে পরীক্ষিত সত্য হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছে যে, যারা আল্লাহর স্মরণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পেরেছেন, আল্লাহ প্রেমে যারা নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন তারাই হয়েছেন মহা সৌভাগ্যবান। যেমন-হযরত ওয়েস জ্বরনী, মালেক ইবনে দীনার, ফুযায়ল ইবনে ইয়ায, ইবরাহীম ইবনে আদহাম, যুননুন মিসরী, বিশরে হাফী, শিবলী, শামছে তাবরেযী, জালালুদ্দীন রুমী, কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী, ফরিদুদ্দীন শাকারগঞ্জ, নিযামুদ্দীন আউলিয়া, আলাউদ্দিন ছাবির কালুয়ারী (রহ.) প্রমুখ আউলিয়ায়ে কেরাম।
এ ধরনের লক্ষাধিক আউলিয়ায়ে কেরাম দুনিয়ার সম্পূর্ণ সম্পর্ক ছেড়ে দিয়ে নামায, রোযা, যিকির-আযকারে উন্নতি অর্জন করেই ইবাদতের পরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে ধন্য হয়েছেন।
এ কাফেলায় মুহাদ্দিসীনের মধ্যে রয়েছেন ইমাম যুহরী, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, আবু হাতীম, আবু যুর’আ, ইবনে আবী হাতীম, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ্ প্রমূখ মুহাদ্দিসীনে কেরাম, যাদের দুনিয়ার সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না। তারা গোটা জীবন হাদীসের খেদমতে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও মওদুদী সাহেবের ফতওয়া মতে এসব মহামনীষীদের জীবন নাকি ইবাদতবিহীন বেকার কেটেছে। কারণ তাঁরা দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখেননি।
৩৪। মওদুদী সাহেব বলেছেনঃ “জিহাদের বাসনা না হলে ইবাদত একেবারেই অর্থহীন।’ চমৎকার অভিনব মন্তব্য বটে। সেই সাথে আকর্ষণীয়ও বটে। অবশ্য এইসব চমৎকারিত্ব, অভিনবত্ব এবং আকর্ষণ-কৃতিত্ব সবকিছুই মওদুদী সাহেবের নিজ ঘরের তৈরী। কেননা কুরআন-হাদীসের কোথাও ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য ‘জিহাদ’কে শর্ত হিসাবে আরোপ করা হয়নি। জিহাদের বাসনা আছে তো ইবাদত অর্থময়, জিহাদ নেই তো ইবাদত প্রাণহীন, একথার কোন প্রমাণ কুরআন-হাদীসে মওদুদীবাদীগণ দেখাতে পারবেন না। কোন নকী-রাসূল অথবা সাহাবা,’
তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী, মুহাদ্দিস, মুফাসসির এমনকি কোন মুজাহিদ-সিপাহসালারও ইশারা-ইঙ্গিতেও এর কোন স্বাক্ষর রাখেননি যে, জিহাদ থাকলেই ইবাদত ইবাদতের মত হয় আর জিহাদ না থাকলে ইবাদত নিছক রুসুম রেওয়াজের মত কিছু একটা হয়ে যায়।
না: বীর সাহসী ‘আল্লাহর তলোয়ারঃ উপাধী প্রাপ্ত সিপাহসালার খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং পরবর্তী অকুতোভয় ইসলামের জানবাজ মুজাহিদ মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং তারিক ইবনে যিয়াদ বিজয়ী হয়ে জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে এসে অথবা আগে-পরে কখনও এই অনুভূতি প্রকাশ করেননি যে জিহাদ না থাকলে ইবাদতের প্রাণ থাকে না। শুধু কি তাই। আমরা তো দেখি কুরআনে কারীমে যুদ্ধ চলাকালেও সৈনিকদের জামায়াতে। নামায পড়ার আদেশ ও নিয়ম বাতলানো হয়েছে। (সূরা নিসা দ্রষ্টব্য)
তবে হ্যাঁ, মওদুদী ধর্মমতে জামায়াত বিরোধীদের রগকাটা ও হত্যাকরার সন্ত্রাস নামী জেহাদ না থাকলে তাদের নিজস্ব ইবাদত প্রাণহীন, অর্থহীন হতে পারে বটে!
আমার মনে হয় মওদুদীর ঐ জিহাদী জযবা থেকে এখনকার মওদুদীপন্থীরা ক্রমশঃ পিছে সরে যাচ্ছেন। কেননা এতদিনে দুইটি মন্ত্রিত্ব লাভ করার পর আগের মত সেই জিহাদী শ্লোগান “জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাচতে চাই’ এখন আর তাদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে না। এরই নাম কি জিহাদ? এ-ই কি ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত? সচেতন পাঠক/পাঠিকা। আপনারাই বলুন।