1. info@izharehaq.com : MZakir :
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
গোয়েবলসীয় নীতি : হিটলারের ঐ মুখপাত্রও ”জামাত-শিবিরের মিথ্যাচারের কাছে হার মানায়”: পর্ব ১ ইক্বামাতে দ্বীনের তাৎপর্য এবং বাতিলপন্থীদের বিকৃত ব্যাখ্যা সাহাবাগণ রাঃ সত্যের মাপকাঠি এবং তাদের ইজমা সর্বসিদ্ধান্ত মতে শরীয়তের দলীল সাহাবা রাঃ গণ সত্যের মাপকাঠি খোলাফায়ে রাশেদীনগণের সোনালী আদর্শ সর্বসম্মতিক্রমে শরিয়তের দলীল শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: “তাঁরাই সত্যের মাপকাঠি” শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: সাহাবায়ে কেরাম “সত্যের মাপকাঠি: মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৬ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৫ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৪ জামায়াতে ইসলামী’র গোমরাহী বিষয়ক “শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: ৩য় পর্ব আবুল আ’লা মওদূদী মরহুম যেভাবে হাদীস অস্বিকারকারীদের কাতারে নাম লেখালেন! মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-৩ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-২ মিয়ারে হক: সত্যের মাপকাঠি: কুরআন-হাদীস এবং মওদূদী সাহিত্যের আলোকে: পর্ব-১ জামায়াতে ইসলামী’র গোমরাহী বিষয়ক “শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য: ২য় পর্ব মিথ্যাচারের উপর দাঁড়িয়ে আছে কারা? কওমী শিক্ষাব্যবস্থা না জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস? কুরআন ও হাদীসের আলোকে সাহাবায়ে কিরামের পরিচিতি ও মর্যাদা জামায়াতে ইসলামী’র গোমরাহী বিষয়ক “শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী”র ঐতিহাসিক ও তাত্বিক বক্তব্য মওদূদী সাহেব ও জামায়াতে ইসলামীর সাথে আলেম সমাজের বিরোধিতার প্রকৃত কারণ:

কুরআন-হাদীসের বিশ্বস্ত মাধ্যম সাহাবায়ে কিরামের উপর থেকে ভক্তি নির্ভরতা বিলুপ্তির ভয়ানক ষড়যন্ত্র।

নাম:
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ২৮০ বার পড়া হয়েছে
কুরআন-হাদীসের বিশ্বস্ত মাধ্যম সাহাবায়ে কিরামের উপর থেকে ভক্তি নির্ভরতা বিলুপ্তির ভয়ানক ষড়যন্ত্র
হযরাতে সাহাবায়ে কিরাম এবং পূর্বসূরী উলামায়ে কিরামের প্রতি প্রোপাগাণ্ডা ও অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি অনির্ভরতার পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রকৃত দীনের বিপরীত সন্দেহ সৃষ্টির জন্য ব্রেন ওয়াশ করার ক্ষেত্রে মওদূদী সাহেব যে কূটকৌশল আঞ্জাম দিয়েছেন তার থেকে কখনো চোখ বুঝে থাকা যায় না। মওদূদী সাহেবের রচনাবলীর মধ্য থেকে “তাজদীদ ওয়া ইয়াহইয়ায়ে দীন” “তাফহীমাত” “তানকীহাত” খেলাফত ওয়া মুলকিয়্যাত ইত্যাদি গ্রন্থগুলো উক্ত বিষয়ের চাক্ষুষ প্রমাণ বহন করে। উক্ত গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন স্থান থেকে নির্বাচন করে পাঠকদের সুবিধার্থে এ জাতীয় কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে।
* ঐ সকল বিষয় যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম) ও হাদীসের উপর থেকে বিশ্বাস বিলুপ্ত করে দেয়।
(১) ইসমাতে আম্বিয়া (নবীগণ নিষ্পাপ হওয়া) আবশ্যকীয় বিষয় নয়, বরং তার চেয়ে ও একটি কঠিন সুক্ষ্ম বিষয় এই যে, আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রত্যেক নবী থেকে কোন কোন সময় নিজের হিফাজত উঠিয়ে দিয়ে দু একটি ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। (সূত্র ঃ তাফহীমাত- ২য় খণ্ড, ৫৭ পৃঃ আকাবিরে উম্মত (৫৭)
(২) মানুষের নফসের মধ্যে এমন কঠিন শক্তি রয়েছে, যা অধিকাংশ সময় তার বিবেক-বিবেচনার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং অনেক সময় তার বুঝ জ্ঞান ও সত্বা তাকে ভুল পথে পরিচালিত করে একটু সামনে গিয়ে বলেন- এতো আছেই, অনেক সময় নবীদেরকে পর্যন্ত এই অনিষ্টকারী নফসের রাহাজানীর (আক্রমণের) শিকার হতে হয়েছে।
(সূত্রঃ তাফহীমাত-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৭৪, ইদারা দারুল ইসলাম)
(৩) হাদীস হল এমন বিষয় যা কিছু সংখ্যক মানুষ থেকে কিছু সংখ্যক মানুষের নিকট পৌঁছেছে। যার দ্বারা বেশীর চেয়ে বেশী যদি কোন জিনিস অর্জন হয় তাহলে তা হচ্ছে এর দ্বারা শুধু একটি বিশুদ্ধ ধারণা অর্জন হতে পারে। অকাট্য বিশ্বাস হাদীস দ্বারা অর্জন হয় না। (সূত্রঃ তরজমানুল কুরআন- ২৬ খণ্ড, সংখ্যা-৩ পৃষ্ঠা ২৬৭
আকাবিরে উম্মত-৭৯)
(৪) আপনাদের (হক পন্থীদের) নিকট প্রত্যেক ঐ বর্ণনাকে রাসূলের হাদীস মানা জরুরী যা মুহাদ্দিসীনে কিরাম সনদ-সূত্রের ভিত্তিতে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু আমাদের (মওদূদী পন্থীদের) নিকট এটাকে হাদীস মানা জরুরী নয় । (সূত্রঃ রসায়েল ওয়া মাসায়েল-খন্ড ১ পৃষ্ঠা- ২৯০, তরজুমানুল কুরআন খণ্ড ১৪, সংখ্যা-২ পৃষ্ঠা-১১১, আকাবিরে উম্মত-৭৭)
(৫) দীনের বুঝ যা আমাদের অর্থাৎ শুধু আল্লামা মওদূদীর অর্জন হয়েছে, তার প্রতি ও গুরুত্বারোপ করা উচিত —— এ ছাড়াও দীনের বুঝের অনেক দিক রয়েছে। (যা শুধু মওদূদী সাহেবের বুঝার মধ্যেই গোপন রয়েছে) যে গুলোর প্রতি লক্ষ্য করা ব্যতীত আমরা কোন হাদীসকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম)-এর প্রতি সম্পর্কযুক্ত করে দেয়াকে সঠিক মনে করি না। (সূত্রঃ রসায়েল ওয়া মাসায়েল খণ্ড-
১, পৃষ্ঠা-২৯০, আকাবিরে উম্মত-৭৭)
এ জাতীয় বহু বর্ণনা আল্লামা মওদূদীর লিখনীতে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং মওদূদী সাহেব নিজের এ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির অধীনে স্বীয় দূর্লভ, অলীক গবেষণায় নিম্নে বর্ণিত জঘন্যতম দুঃসাহসিকতাপূর্ণ কটূক্তিও করেছেন ।
(ক) আরে! হাদীস বর্ণনার মূলনীতি রেখে দিন। বর্তমান সভ্যতার যুগে আদি যুগের এ সকল আবোল-তাবোল প্রলাপ কে শুনে?
(সূত্রঃ তরজমানুল কুরআন খণ্ড-১৪, পৃষ্ঠা-১১১)
(খ) যতটুকু পর্যন্ত সনদের সম্পর্ক রয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশ বর্ণনার সনদই শক্তিশালী এবং বর্ণনার ভিত্তিতে তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা যায় না। কিন্তু হাদীসের বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে আকল- বিবেকের (আল্লামা মওদূদীর) বিপরীত। যা দেখে বিবেক চিৎকার করে বলছে, একথা নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম) এভাবে কক্ষনো বলেননি। (সূত্র ঃ তরজমানুল কুরআন পৃষ্ঠা-২৪, খণ্ড-৬১, জামায়াতে ইসলামী কা-শীষ মহল-৬৯)
(গ) হাদীসের কিতাবসমূহে কিয়ামতের আলামত সংক্রান্ত যে সকল বর্ণনার উল্লেখ রয়েছে, তার সম্পর্কে আমি হ্যাঁ অথবা না, কোন কিছুই বলব না। যদি ঐ গুলো বিশুদ্ধ হয় এবং বাস্তবেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম) এ সংবাদ দিয়ে থাকেন যে, ইমাম মাহদীর আগমনের সময় আসমান থেকে আওয়াজ আসবে
واطيعوا
هذا خليفة الله المهدى فاستمعوا له
অর্থাৎ তিনি আল্লাহর খলীফা ইমাম মাহদী সুতরাং তোমরা তার কথা শ্রবণ কর ও তাকে অনুসরণ কর। তা হলে নিশ্চিত আমার ঐ ধারণা ভুল যা আমি তাজদীদ ওয়া এহইয়ায়ে দীনের মধ্যে প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমার এটা বিশ্বাস হয় না যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম) এমন কথা কখনো বলেছেন। (সূত্রঃ রসায়েল ওয়া মাসায়েল ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৩, জামায়াতে ইসলামী কা-শীষ মহল-৬৫)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! একটু ইনসাফের দৃষ্টিতে লক্ষ্য করুন যে, এই হাদীসে মাহদীর মধ্যে ইমাম মাহদীর হাতে মুসলমানদের বাইআত গ্রহণ করার সময় আকাশ থেকে অদৃশ্য আওয়াজ শুনা যাওয়ার ব্যাপারটি এমন বিবেক-বুদ্ধি, যুক্তির বিপরীত হয়ে গেল যা মানার মধ্যে আল্লামা মওদূদীর সন্দেহ হয়ে গেল? বাহ্যিকভাবে তাতে জ্ঞান যুক্তি বিরোধী হওয়ার কোন দিকই নেই। হ্যাঁ, এ বর্ণনার মধ্যে যে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে তা শুধু এই যে, আল্লামা মওদূদী ১৯৪১ খৃষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে যখন নিজ বাড়ী দারুল ইসলামে পূর্বযুগের নেককার বান্দাদের থেকে বাইয়াত করেছিলেন ঐ সময় এই অদৃশ্য আওয়াজ কেউ শুনেনি। এখন আল্লামা মওদূদী এমন কোন সাধারণ ব্যক্তি তো নয় যে, ঐ অদৃশ্য শব্দ না আসার কারণে নিজের মর্তবা ও অস্তিত্বহীনতার উপর প্রমাণ পেশ করবেন। এজন্য মওদূদী সাহেবের নিকট সহজ পথ এটাই ছিল যে, তিনি এই কারণে স্বয়ং হাদীসকেই অস্বীকার করে বসবেন।
(খ) ঐ সকল নির্বাচিত অংশ যার ভিত্তিতে সাহাবায়ে কিরাম ও মুহাদ্দেসীনে কিরামের উপর থেকে ভক্তি ও বিশ্বাস বিলুপ্ত হয়ে যায়
(১) অনেক সময় সাহাবায়ে কিরামের উপরও মানবিক দূর্বলতা প্রবল হয়ে যেত, যার ফলে তারা একে অন্যকে আঘাত (গালমন্দ) করত।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন হযরত আবু হুরাইরা মিথ্যাবাদী। হযরত আয়েশা (রাঃ) এক স্থানে হযরত আনাস (রাঃ) ও হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) সম্পর্কে বলেছেন “তাঁরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম) এর হাদীস সম্পর্কে কি জানেন? তাঁরা তো ঐ যুগে বাচ্চা ছিলেন। হযরত আলী (রাযিঃ) এক স্থানে হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন। হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হযরত মাসউদ ইবনে আউস আনসারী (রাঃ)-এর প্রতি মিথ্যার অপবাদ লাগিয়েছিলেন। অথচ তিনি বদরী সাহাবী ছিলেন। (সূত্রঃ তাফহীমাত খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩২০/৩২১)
উল্লেখিত মন্তব্যসমূহে আল্লামা মওদূদীর মুজতাহিদ হওয়ার দাবী বুঝা যায় ।
মওদূদী সাহেব আদীব-সাহিত্যিক, বলিষ্ঠ লিখক বলে অনেক সুনাম-সুখ্যাতি রয়েছে। কিন্তু তার হাদীসের এ শব্দ বুঝার ক্ষেত্রে দারুণ আশ্চর্য হতে হয় যে, আরবীতে ব্যবহৃত শব্দ pils (কাজেব )
كذب (কিজব) এর অনুবাদ ও উপস্থাপন কেমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি দিয়ে মুর্খের মত বর্ণনা করেছেন। এবং গলত গুয়ী (মিথ্যা বলা) ও গলত বয়ানী (মিথ্যা বর্ণনা করা) এ উভয়ের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা স্পষ্টভাবে দৃষ্টির আড়াল করে দিয়েছেন । অথচ প্রকৃত পক্ষে —ils এবং
is শব্দ দুটি আরবী ভাষায় দুই অর্থে ব্যবহৃত হয় । (১) জেনে বুঝে মিথ্যা বলা ও স্বাভাবিক মিথ্যার অর্থে ব্যবহৃত হয়। (২) কোন ভুল ধারণার ভিত্তিতে অসত্য বর্ণনা করার জন্যও এ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন উর্দূতে এরূপ স্থানে গলত কাহনা (ভুল বলা) ব্যবহৃত হয়। সাহাবায়ে কিরাম একে অন্যের ব্যাপারে এই (ভুল বলা) এর কথাই উল্লেখ করেছেন। একথা তাঁদের কল্পনাতেও কোনদিন আসেনি যে, একজন বদরী সাহাবী জেনে বুঝে মিথ্যা বলতে পারেন। কিন্তু আল্লামা মওদূদী অত্যন্ত সাধু সুলভ ভঙ্গিতে পরিষ্কারভাবে তাঁদের জন্য উক্ত বচন ভঙ্গিই পছন্দ করে নিয়েছেন। (যেমন সে মিথ্যাবাদী। তিনি মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন, তিনি মিথ্যার অভিযোগ তুলেছেন ইত্যাদি।)
আল্লামা মওদূদীর বাগ্মিতা ও ক্ষুরধার লিখনীর ভিত্তিতে আমরা এ ধারণা করতে পারি না যে, তিনি সভ্য অনুবাদ জানেন না। কিন্তু আমাদের এ ধারণাতো অবশ্যই আছে যে, মওদূদী সাহেব অভিসম্পাতের স্বাদ অর্জন করার জন্যই এ সকল বচনভঙ্গি গ্রহণ করেছেন এবং গলত কাহনে (ভুল বলার) এর স্থানে ঝুট (মিথ্যা) এর শব্দ প্রয়োগ করাই তার দৃষ্টিতে সভ্যতা মনে হয়েছে।
(২) মুহাদ্দেসীনে কিরামের উপর থেকে ভক্তি-বিশ্বস্ততা নষ্ট করতে এ সকল মন্তব্য করেছেন ।
মুহাদ্দেসীনে কিরাম তাঁদের ব্যাপারে অন্য কোন দিক দিয়ে কোন কথা বা মন্তব্য নেই, কিন্তু শুধু একটি বিষয়ে মন্তব্য রয়েছে তাহল যে, তাঁদের উপর আমাদের পরিপূর্ণ নির্ভর করাটা কি পরিমাণ সঠিক? তাঁরা তো সর্বশেষ মানুষই ছিলেন। মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধিতার যে পরিমাণ সীমারেখা আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিগতভাবে নির্ধারণ করে রেখেছেন তার থেকে তো তারা বেরিয়ে যেতে পারেন না। মানুষের কার্যাবলীতে সৃষ্টিগতভাবে যে দূর্বলতা রয়েছে, তা থেকেতো তাঁদের কাজ সুরক্ষিত ছিল না। —— (কয়েক লাইন পর বলেন) তার মধ্য থেকে কোন কোন জিনিস এমন আছে যার মধ্যে ভুলের সম্ভাবনা নেই। যেমন প্রথমতঃ বর্ণনাকারীদের জীবন-চরিত, মেধাশক্তি এবং তাদের অন্যান্য আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যাবলীর ব্যাপারে একেবারেই বিশুদ্ধতা অর্জন হওয়া কঠিন, দ্বিতীয়তঃ স্বয়ং ঐ সকল মনিষী যারা ঐ বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা ও মানবীয় দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। নফস (প্রবৃত্তি) প্রত্যেকের সাথে সর্বদা ছিল। (সূত্রঃ তাফহীমাত খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩১৮/৩১৯)।
এই বাস্তবতা ভুলার নয়
প্রিয় পাঠক! এ স্থানে আল্লামা মওদূদীর এ সকল অভিযোগ, মন্তব্যও প্রশ্নের প্রতি গভীর লক্ষ্য করে এ বাস্তবতা কখনো ভুলে যাবেন না যে,. আল্লামা মওদূদী আম্বিয়ায়ে কিরাম, সাহাবায়ে কিরাম, আইম্মায়ে মুহাদ্দিসীনদের প্রতি একচেটিয়া মানবীয় দুর্বলতার যে অস্তিত্ব প্রমাণ করে বার বার তাঁদেরকে ঘায়েল করতে চাচ্ছেন, তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল এ সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অবিশ্বস্ত, আস্থাহীন প্রমাণিত করে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করা। কিন্তু এ প্রশ্ন প্রকটভাবে থেকেই যায় যে, আল্লামা মওদূদী শেষ পর্যন্ত নিজে-নিজেকে কিভাবে এ সকল মানবীয় দূর্বলতা থেকে পবিত্র মনে করলেন? যার বাকপটুতার দৃষ্টান্ত একটু পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মওদূদী সাহেব আরবীর একটি সাধারণ শব্দ كذب
(মিথ্যা) এবং its (মিথ্যাবাদী) শব্দের একটি শালীন অনুবাদের উপর সক্ষম নন। তারপর আবার মানবীয় দূবলতা থেকে ঊর্ধ্বে? শুধু তাই নয়, মওদূদী সাহেব সাহাবায়ে কিরামের আখলাক এবং কার্যাবলীর ছবি আঁকার জন্য কি ধরনের বিভ্রান্তিকর বীভৎস বান ভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। তা লক্ষ্য করুন-
* হযরাত সাহাবায়ে কিরামের আমলকে ত্রুটিযুক্ত করতে মওদূদী সাহেবের আন্তরিকতা
হযরত ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাঃ) একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। যার দোষ সম্ভবত এটাই ছিল যে, তিনি হযরত উসমান গণী (রাযিঃ) এর মা সম্পর্কীয় ভাই ছিলেন। এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) এর হাতে প্রতিপালিত হয়েছেন। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক (রাযিঃ) এর খেলাফত আমলে সাধারণ গভর্নর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। হযরত উসমান গণী (রাযিঃ) স্বীয় খিলাফতকালে তাঁকে প্রমোশন দিয়ে কৃষ্ণা নগরীর গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। হযরত ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাযিঃ) এর এই উন্নতি ও সফলতা দেখে আল্লামা মওদূদীর মারাত্মক গাত্রোদাহ হল। তিনি স্বীয় গ্রন্থ খিলাফত ওয়া মুলুকিয়্যাতে-ইস্তি’আব,.  নামক গ্রন্থ থেকে এ দূর্বল রেওয়ায়েত বর্ণনা করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম)-এর একজন বিখ্যাত সাহাবীর আমলকে ত্রুটিযুক্ত করার মত দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে বেশ সওয়াব অর্জন করেছেন?
প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন, তিনি কিভাবে বর্ণনা করেছেন-
পঁচিশ হিজরী সনে এই নগন্যকে (আরব দীপের গভর্নরের) পদ থেকে উন্নীত করে হযরত উসমান গনী (রাযিঃ) তাঁকে (হযরত ওয়ালীদ বিন উকবা রাযিঃ) হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাযি) এর স্থানে কৃষ্ণার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীর গভর্নর বানিয়ে দিলেন। সেখানে এ গোপন কথা ফাঁস হয়ে গেল যে, তিনি (ওয়ালীদ বিন উকবা) মদ্য পানে অভ্যস্থ, এমনকি একদিন তিনি ভুলে ফযরের নামাজ চার রাকাত পড়িয়ে দিলেন। এবং পিছনের দিকে ঘুরে জিজ্ঞাসা করলেন আরো নামায পড়াব? সুতরাং নামায বাকি আছে কি? পরবর্তীতে হযর সাহাবায়ে কিরামের সাধারণ মজলিস থেকে হযরত ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাঃ) এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হল। (সাক্ষী- প্রমাণ গ্রহণের পর) তখন হযরত উসমান গণী (রাঃ) হযরত আলী (রাযিঃ)কে নির্দেশ দিলেন হযরত ওয়ালীদের উপর দণ্ড প্রয়োগ করতে। (সূত্রঃ খিলাফত ও মুলুকিয়্যাত-১১৩)
* উক্ত রেওয়ায়েতের বিশ্লেষণ এবং তার মানগত অবস্থান
হযরত ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাযিঃ) এর বিরুদ্ধে মদ পান করার মামলা দায়ের করা এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের পর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা। যা এই রেওয়ায়েতের শেষাংশে রয়েছে। এই কথাগুলো তো তার নিজস্ব স্থানে পরিপূর্ণ সঠিক। এজন্য তা অস্বীকারের কোন উপায় নেই। কিন্তু  এ রেওয়ায়েতের প্রথমাংশ যাতে আল্লামা মওদূদী হযরত ওয়ালীদ (রাযিঃ)কে মদপানে অভ্যস্থ হওয়ার অপরাধী প্রমাণ করতে চেয়েছেন এবং নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ফযরের নামাজ চার রাকাআত পড়ানোর ঘটনা বর্ণনা করেছেন । তা রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে অত্যন্ত দূর্বল এবং বর্ণনার অযোগ্য। মানগত অবস্থান ও যুক্তির নিরীখে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক- হাস্যকর ব্যাপার। কারণ প্রখ্যাত ঐতিহাসিক তাবারী যিনি মওদূদী সাহেবের অত্যন্ত প্রিয় গ্রহণযোগ্য ঐতিহাসিক। তিনি শীআ হওয়া সত্ত্বেও এ বর্ণনাকে নিজ কিতাবে স্থান দেন নাই ।
কিন্তু মওদূদী সাহেব অভিশপ্ত মানসিকতার প্রশান্তির জন্য “ইস্তি’আব” নামক গ্রন্থ থেকে এ রেওয়ায়েত খুঁজে বের করেছেন। অথচ তিনি একবার সামান্যতমও প্রয়োজনবোধ করেননি যে, এ বর্ণনার মানগত অবস্থাটি কি তা একটু যাচাই করে নেই। এ রেওয়ায়েতটি কি কোনভাবে সঠিক ও সম্ভব হতে পারে? না কি অবান্তর। অলীক, জাল হাদীস? এই রেওয়ায়েতকে যদি মেনেও নেয়া হয়, তারপর ও লক্ষ্য করুন।
এই রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রেক্ষাপট কেমন ছিল তা একটু দেখে নেয়া প্রয়োজন। যখন এ অবস্থা সামনে আসল যে, কুফার জামে মসজিদে ফযরের সময় কুফার গভর্ণর হযরত ওয়ালীদ (মওদূদীর ভাষ্যমতে) নেশা অবস্থায় ইমামতীর জন্য আগমন করলেন। (আর ইহা স্পষ্ট যে, ৩০ হিজরীতে কুফার জামে মসজিদে নামাযীদের সংখ্যা আজকালের চেয়ে মোটেও কম ছিল না) কিন্তু কোন নামাযী-মুসল্লীরই নামাযের পূর্বে অনুভব হল না যে, ইমাম সাহেব নেশা অবস্থায় রয়েছেন। আর সে অবস্থায় জামাআতে দাড়িয়ে যাচ্ছে। নামায শুরু হয়ে গেল, দুই রাকাআত সম্পূর্ণ হয়ে গেল, কিন্তু ইমাম সাহেব দুরাকাআতের স্থানে চার  রাকাআত সম্পূর্ণ করে দিলেন। কেউ কোন লোকমাও দিল না, ইমাম সাহেবের ভুলও ধরল না। সকল মুসল্লী সম্পূর্ণ নীরবতার সাথে দু রাকাআতের স্থানে চার রাকআত পড়ে নিল । এতদসত্ত্বেও নামাযের পর ইমাম সাহেবের মুখ থেকে এ প্রশ্নও সকলে শুনে নিল যে, আরো নামায পড়াব? আর এই ইমাম সাহেবও কে ছিলেন? সাধারণ কোন ব্যক্তি? তাঁর পরিচিতি সংক্ষিপ্তভাবে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি হযরত উসমান (রাযিঃ) এর মা সম্পর্কীয় ভাই। মক্কা বিজয়ের বৎসর মুসলমান হয়েছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম) থেকে দু’আ নিয়েছেন । হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হয়েছেন। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর শাসনামলেই সরকারী পদে দায়িত্বশীল ছিলেন। হযরত উমর ফারুক (রাযিঃ)-এর শাসনামলে উন্নতি পেয়ে আরবের গভর্নর হয়েছিলেন। এমনকি হযরত উসমান (রাযিঃ) এর খেলাফতকালে কুফা নগরীর গভর্নর নিযুক্ত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি গভর্নরের প্রাথমিক কয়েক বৎসর অত্যন্ত প্রিয়, শ্রদ্ধাভাজন, প্রশংসনীয় গভর্নর হিসেবে ছিলেন। যার প্রমাণ ঐতিহাসিক তাবারীর সাক্ষ্য। যা মওদূদী সাহেবের জন্যও যথেষ্ট হওয়া উচিত। তারীখে তাবারীর মধ্যে রয়েছে তিনি (ওয়ালীদ) যখন কুফায় আগমণ করেছেন তখন তিনি সেখানের সবচেয়ে প্রিয় এবং অন্তরঙ্গ ব্যক্তি ছিলেন। (যার প্রমাণ এই যে) তিনি সেখানে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত এ অবস্থায় ছিলেন যে, তার ঘরের কোন দরজাও ছিল না। (তিনি তার হেফাজতের বিষয়টি সামান্যও প্রয়োজনবোধ করতেন না) কিন্তু পরবর্তীতে যখন হযরত ওয়ালীদ কুফার তিন ফিত্না সৃষ্টিকারী যুবককে তাদের প্রমাণিত শরয়ী অপরাধের শাস্তি দিলেন। তখন তাদের নেতৃস্থানীয় লোকেরা (যাদের নাম এই, আবু যয়নব ইজদী, আৰু মুওয়াররা, এবং জুনদুব)। তার বিরুদ্ধে অপবাদ রটানোর দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করল। অবশেষে তারা তার উপর গোপনভাবে মদপান করার অপবাদ আরোপ করল। আর অবাস্তব সাক্ষী ও পেশ করে দিল। হযরত উসমান গণী (রাযিঃ) দেখলেন মদপানের অপরাধ শরীআতের মাপকাঠিতে তার উপর প্রমাণিত হয়ে গেছে। তাই তিনি হযরত ওয়ালীদ (রাঃ) এর প্রতি নিজের ভাই হওয়া সত্ত্বেও সামান্য ভ্রুক্ষেপ করেন নাই। শরী’আতের নির্ধারিত দণ্ডবিধি প্রয়োগ করতে নির্দেশ জারী করে দিলেন। যার বিস্তারিত বর্ণনা হাদীসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ বুখারী, মুসলিম প্রভৃতিতে রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে এ পর্যালোচনা সম্পূর্ণই অপ্রাসংগিক যে, হযরত ওয়ালীদ (রাঃ) বাস্তবেই মদপানের অপরাধী ছিলেন কি না? প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা তাবারী নিজে শীআ হওয়া স্বত্ত্বেও শাস্তি জারী করার সময় হযরত উসমান (রাঃ) এর মুখের এতটুকু কথাও বর্ণনা করেছেন যে, উসমান (রাঃ) বলেছেন আমি শরীআতের দণ্ডবিধি তোমার উপর তো প্রয়োগ করছি শরীয়ত সম্মত প্রমাণের কারণে। কিন্তু এতে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীরা নিজ ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নিচ্ছে।
হে আমার প্রিয় ভাই। তুমি বর্তমান অবস্থার উপর একটু ধৈর্য্য ধারণ কর। (তারীখে তাবারী, খণ্ড-৫, পৃৎ-৬২)
এই ঘটনার পূর্ণ বাস্তবতা বুঝার জন্য নিম্নের কিতাবগুলো পাঠ করা অতি জরুরী। বিস্তারিত পাঠে আগ্রহী ব্যক্তিগণ উক্ত কিতাবগুলো দেখে নিতে পারেন। (১) শাওয়াহেদে তাকাদ্দুস (২) ইজহারে হাকীকত বা জাওয়াবে খিলাফত ওয়া মুলকিয়্যাত (৩) মাওলানা মওদূদী আওর হযরত উসমান গণী (রাযি)। লিখকঃ শ্রদ্ধেয় পিতা (লেখকের) জনাব হযরত মাওঃ সিরাজুল হক সাহেব (রহঃ)। (৪) হযরত উসমান গনীকে সরকারী খুতুত ইত্যাদি।
হযরত উসমান গণী (রাঃ) হযরত ওয়ালীদ (রাঃ) এর প্রতি ধৈর্য্যের উপদেশ করার দ্বারা হযরত ওয়ালীদের বিরুদ্ধে মদপানের অপবাদের বাস্তবতা অত্যন্ত সহজভাবেই অনুধাবন করা যায়। কিন্তু যদি মওদূদী সাহেবের সাহাবায়ে কিরামের পবিত্র জীবন ত্রুটিমুক্ত দেখতে সহ্য না হয় তাহলে তার জন্য অবশ্যই তারীখে তাবারীর উক্ত রেওয়ায়েত এর দৃষ্টিতে এ ঘটনার বাস্তবতা যাচাই করে নেওয়া জরুরী ছিল। কিন্তু তা করবেন কেন? এ সকল ক্ষেত্রে তার মুখ্য উদ্দেশ্যই হল, প্রকৃত দীন ইসলাম যা উত্তরাধিকারীর ভিত্তিতে আমাদের নিকট পৌঁছেছে, তার মাধ্যম ও মধ্যস্থতাকারীদেরকে কোনভাবে আক্রান্ত ও ত্রুটিযুক্ত করে দেওয়া। অতঃপর দীনের বুঝ ও দীন প্রসারের সম্পূর্ণ অধিকার এবং দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়ার অপচেষ্টা করা। এই বিপদজনক মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার ফসল স্বরূপ তিনি এ জাতীয় কথাবার্তা লিপিবদ্ধ করে জন সম্মুখে পেশ করে যাচ্ছেন।
সুতরাং মওদূদী সাহেব নিজের এই হীন উদ্দেশ্যকেই চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন শিরোনামে বিভিন্ন কথা প্রকাশ করে থাকেন। কখনো রেওয়ায়েতের উপর আপত্তি তুলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর কখনো রেওয়ায়েতের বর্ণনাকারীদের উপর অভিযোগ তুলে দুর্বল করে দিয়েছেন। আবার কখনও নিজের দাবীর ক্ষেত্রে দুর্বল থেকে দুর্বলতম রেওয়ায়েত বর্ণনা করে নিজস্ব জ্ঞান-বুদ্ধিকে অকেজো করে রেখেছেন। কখনো তিনি নিজস্ব যুক্তি-বুদ্ধিকে সম্বল করে বুখারী শরীফের মত বিশুদ্ধতম সহীহ হাদীসকে প্রলাপ বলে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যানের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছেন । হে আল্লাহ! এমন ইলম থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা হয় অপকারী।
শত্রুর বেশে বন্ধু সাঁজা
আল্লামা মওদূদীর বাস্তবতা অন্বেষণের দৃষ্টি খুবই প্রখর। তিনি হযরত উসমান গণী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে অপরাধী দল প্রস্তুত করার জন্য একথা বাস্তবতা বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তার দৃষ্টিতে আসল যে, হযরত উসমান গণী (রাঃ) শুধু স্বজন প্রীতির কারণেই হযরত ওয়ালীদকে একটি নগন্য পদ থেকে উন্নতি দিয়ে কুফার মত গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীর গভর্নর বানিয়ে দিলেন। কিন্তু মওদূদী সাহেবের দৃষ্টি সেই উসমান (রাঃ) এর ইনসাফ প্রীতি ও আল্লাহর দণ্ড প্রয়োগে নিজ স্বার্থ বিলীনের প্রতি একটুও পড়ল না যে, হযরত উসমান গণী (রাঃ) নিজের সত্তাগত অনুভুতি ও ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত শুধু আল্লাহ তা’আলার দণ্ডবিধি কায়েমের খাতিরে নিজের মা সম্পর্কীয় ভাইয়ের উপরও দত্ত জারী করতে কুণ্ঠা বোধ করলেন না যে ভাইকে তিনি (মওদূদীর ভাষ্যমতে) শুধু স্বজনপ্রীতির জয়বায় কুফার গভর্নর বানিয়েছিলেন। উক্ত ঘটনায় এ ধরনের বৈপরিত্য পূর্ণ বক্তব্যের নিরীখে মওদূদী সাহেবের শী’আ মতাবলম্বী হওয়াকে কিভাবে পর্দার আড়াল করা যায়?
যদি কোন সাধারণ বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি এ বিষয়ে সামান্য একটু চিন্তা করেন তাহলে পরিষ্কার তিনি একথা বুঝে ফেলবেন যে, হযরত উসমান গণী (রাযিঃ) এবং হযরত ওয়ালীদ (রাঃ) এর কার্যক্রম তো কখনোই ত্রুটি যুক্ত বা আক্রান্ত হতে পারে না। তবে বাস্তবতা হল এই যে, মওদূদী সাহেব সাহাবায়ে কিরামকে ত্রুটিযুক্ত করে নিশ্চিতভাবে শী’আ প্রমাণিত হয়েছেন যা অনস্বীকার্য।উক্ত আলোচনার শুরুতে আমরা শীআদের চারটি মৌলিক আকীদা ও দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করেছি। যার মধ্যে দুটি আকীদার আলোচনা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরাতে সাহাবায়ে কিরামের উপর থেকে বিশ্বস্ততা ও ভক্তি শ্রদ্ধা ধ্বংস করার অনেক দৃষ্টান্ত মওদূদী সাহেবের লেটারেচারের মধ্যে রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে তার চেয়ে অধিক বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই। তবে কিছু কিছু দৃষ্টান্ত এ অধম (লেখক) নিজের অন্য কিতাব “এক্সরে রিপোর্টেও উল্লেখ করেছে।
শী’আ সম্প্রদায়ের একটি প্রশিদ্ধ আকীদা হল, মুত’আ জায়েয। এর বিস্তারিত আলোচনাও এক্সরে রিপোর্ট নামক গ্রন্থে করা হয়েছে। যার ফলে মওদূদীবাদের আয়নায় শী’আদের মুত’আ জায়েযের ছবিও স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
শী’আদের আরো একটি মৌলিক আকীদা হল তাকিয়্যা। (সত্য গোপন করে মিথ্যা প্রকাশ করা)। এ তাকিয়্যা নামক কুফরী ছবিটিও মওদূদীবাদের আয়নায় ফুটে উঠে। কেননা মওদূদী সাহেব হুরমতের প্রকারভেদে আবাদী ও গাইরে আবাদীর শিরোনামে এবং দাওয়াতে দীন ও ইকামতে দীনের আন্দোলনের মধ্যখানে আমলের নতুন কৌশলের রূপরেখা জন্ম দিয়েছেন। অতঃপর তিনি একেবারেই মডার্ন আঙ্গিকে শী’আদের তাকিয়্যাকে একটি দার্শনিক তুলিতে উপস্থাপন করে একটি মৃত বিষয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে দিয়েছেন। এমতবস্থায় মওদুদীবাদের আয়নায় শী আবাদের চারটি মৌলিক বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি পূর্ণভাবেই প্রকাশ পেয়ে গেল। যা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় মওদূদী সাহেব শীআদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

শী’আদের পক্ষ থেকে মওদূদীবাদের সমর্থন

শী’আদের মাসিক মুখপত্র “পায়ামে আ’মল” ১৯৬৩ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে লাহোর থেকে প্রকাশিত সংখ্যায় কিয়া-সাহবাহ মিয়ারে হক হ্যায়? শিরোনামের অধীনে জামাআতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র-৬ নং ধারা উল্লেখ করতে যেয়ে লিখেন-
(ক) সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মাপকাঠি নয়, একথা তো জামাআতের মত আমরাও বলি। এবং ইহাই আমাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ। (সুত্রঃ পায়ামে আমল-১১)
(খ) সাহাবায়ে কিরাম আদর্শ মডেল নয়। এ শিরোনামের অধীনে সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে মওদূদী সাহেবের একটি ইবারত তরজমানুল কুরআান (১৯৬৩ খৃষ্টাব্দে নভেম্বর সংখ্যা) থেকে নকল করে বলেন- তাহলে শুধু শী’ মাদেরকে কেন হত্যার উপযোগী মনে করা হয়? এক্ষেত্রে তো জামাআতে ইসলামীরা ও হত্যার উপযোগী।
(গ) যদি এ ধরনের অভিযোগ (যা খিলাফত ওয়া মুলুকিয়্যাত প্রভৃতি গ্রন্থে করা হয়েছে।) কোন শী’আ মতাবলম্বীর পক্ষ থেকে কলমের মাধ্যমে প্রচারিত হতো তাহলে নিশ্চিতভাবে এগুলোকে সাহাবায়ে কিরামের প্রতি গালি-গালাজ সাব্যস্থ করা হত। (সূত্রঃ আখবারে রিজাকার ১৬ জুলাই ১৯৬৫ ইং, মওদূদী সাহেব আকাবিরে উম্মতের দৃষ্টিতে পৃষ্ঠা-১১২)
উপরোল্লেখিত নির্বাচিত অংশসমূহের আলোকে মওদূদীবাদের আয়নায় শীআবাদের প্রতিচ্ছবিকে যেই আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া প্রকৃত বাস্তবতা থেকেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার নামান্তর। তাই একথা অবশ্যই বলা চলে যে, মওদূদী মতবাদে শীআবাদেরও আকীদা-বিশ্বাস রয়েছে। যার ফলে মওদূদীবাদ আর শীআবাদ একই শুধু নাম ভিন্ন।

শেয়ার করুন

15 thoughts on "কুরআন-হাদীসের বিশ্বস্ত মাধ্যম সাহাবায়ে কিরামের উপর থেকে ভক্তি নির্ভরতা বিলুপ্তির ভয়ানক ষড়যন্ত্র।"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরির আরো
© All rights reserved © 2019 www.izharehaq.com
Theme Customized BY Md Maruf Zakir